জম্মুতে নতুন রেলওয়ে বিভাগের উদ্বোধন: জম্মু-কাশ্মীরের জন্য নতুন যুগের সূচনা

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতের রেলওয়ের ইতিহাসে একটি বৃহৎ ও ঐতিহাসিক পরিবর্তন আসছে। আজ, ১ জুন ২০২৫ থেকে জম্মুতে নতুন একটি রেলওয়ে বিভাগ চালু হতে চলেছে, যা জম্মু-কাশ্মীরের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। রেল মন্ত্রণালয় ২৯ মে এই নতুন ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছে।

কাশ্মীর ভান্দে ভারত এক্সপ্রেস: আজ, ১ জুন জম্মুর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন হতে চলেছে কারণ এই দিনেই জম্মু নতুন রেলওয়ে মণ্ডল (Jammu New Railway Division) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা রেল মন্ত্রণালয় ২৯ মে রাজপত্র অধিসূচনার মাধ্যমে করেছে। বর্তমানে জম্মু ফিরোজপুর মণ্ডলের অধীনে রয়েছে, কিন্তু এখন প্রথম জুন থেকে জম্মু নিজস্ব স্বাধীন রেলওয়ে মণ্ডল হবে, যার সদর দপ্তর জম্মু তাবি রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থিত হবে।

এই পদক্ষেপ জম্মু অঞ্চলের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের উন্নত ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের দিকে একটি বড় উন্নতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই নতুন মণ্ডলের প্রতিষ্ঠার ফলে কেবলমাত্র অঞ্চলের যাত্রীরা উন্নত সেবা পাবে না, বরং রেলওয়ের প্রশাসনিক কাজেও আরও সুবিধা হবে।

জম্মু রেলওয়ে বিভাগ: একটি পরিচয়

এই নতুন রেলওয়ে বিভাগ প্রায় ৭৪২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হবে, जिसमें পাঠানকোট-জম্মু-শ্রীনগর-বারামুলা প্রধান বিভাগ অন্তর্ভুক্ত। তদুপরি ভোগপুর-সিরওয়াল-পাঠানকোট, বাটাল্লা-পাঠানকোট এবং পাঠানকোট-যোগিন্দরনগর (হিমাচল প্রদেশ) বিভাগগুলিও এর অন্তর্গত করা হয়েছে। জম্মু তাবি স্টেশনে এর সদর দপ্তর থাকবে, যা রেল পরিচালনা ও প্রশাসনের কেন্দ্র হবে।

এটি উত্তর রেলওয়ের ষষ্ঠ বিভাগ হবে, এবং এর নির্মাণে প্রায় ১৯৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এটি জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলে রেল সুবিধার সম্প্রসারণ ও উন্নত ব্যবস্থাপনাকে আরও উৎসাহিত করবে।

পুল ও সুড়ঙ্গের প্রযুক্তিগত অসাধারণ কীর্তি

জম্মু বিভাগের রেল নেটওয়ার্কের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এখানকার পুল ও সুড়ঙ্গের বিশাল ও জটিল নেটওয়ার্ক। মোট মিলিয়ে এই বিভাগে ৩১১৪ টি পুল ও ৫৮ টি সুড়ঙ্গ রয়েছে। এর মধ্যে অনেক পুল ও সুড়ঙ্গই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অসাধারণ কীর্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে, বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল পুল 'দরিয়া চিনাব পুল' এই বিভাগের অংশ, যা পাহাড়ি অঞ্চলে একটি প্রযুক্তিগত অসাধারণ সাফল্য।

এছাড়াও দেশের প্রথম কেবল ব্রিজ 'অঞ্জি খড়্ড ব্রিজ'ও এই বিভাগে রয়েছে। সুড়ঙ্গগুলির মধ্যে টি-৪৯ এবং টি-৮০ যেমন দেশের কিছু সবচেয়ে দীর্ঘ রেল সুড়ঙ্গ রয়েছে, যা এই অঞ্চলের ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে কানেক্টিভিটি বাড়াচ্ছে।

জম্মু-কাশ্মীরে রেলওয়ের অগ্রগতি

  • ১৯৭২ সালে জম্মুতে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
  • ২০০৫ সালে উধমপুর পর্যন্ত রেল সেবার সম্প্রসারণ ঘটে।
  • ২০০৯ সালে কাশ্মীর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
  • ২০১৩ সালে বনিহাল-বারামুলায় প্রথম ট্রেন চলে।
  • ২০১৪ সালে কাটড়া পর্যন্ত সরাসরি রেল সেবা চালু হয়।
  • ২০২৪ সালে বনিহাল-বারামুলায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
  • ২০২৫ সালে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে (কাশ্মীর ভান্দে ভারত এক্সপ্রেস)

এভাবে গঠিত হবে নতুন জম্মু রেল বিভাগ

  • পাঠানকোট-জম্মু-উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল সেকশন ৪২৩ কিলোমিটার হবে।
  • ভোগপুর-সিরওয়াল-পাঠানকোট ৮৭.২১ রানিং কিলোমিটার হবে।
  • বাটাল্লা-পাঠানকোট ৬৮.১৭ রানিং কিলোমিটার হবে।
  • পাঠানকোট-যোগিন্দরনগর ন্যারো গেজ পাহাড়ি সেকশন ১৭২.৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে।

জম্মু রেলওয়ে বিভাগের গুরুত্ব

জম্মু রেলওয়ে বিভাগ গঠনের ফলে জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলে শুধুমাত্র যাতায়াতের সুযোগ উন্নত হবে না, বরং পর্যটন, সামাজিক সুবিধা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। কাশ্মীরের মতো দুর্গম ও পর্বতময় অঞ্চলে রেলওয়ের শক্তিশালীকরণ দৈনন্দিন জীবনে উন্নতি সাধন করবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করবে। রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণে স্থানীয় শিল্প ও ব্যবসায় শক্তিশালী হবে। এর সাথে সাথে নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও উন্নতি হবে কারণ রেলওয়ের উন্নত ব্যবস্থাপনার ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধার দিকে নজর দেওয়া হবে।

প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক প্রভাব

নতুন বিভাগ গঠনের পর প্রায় ৫৩৮ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইনে ট্রেন চলাচল করবে। জম্মু মণ্ডলের অধীনে প্রায় ৫৫ টি ট্রেন চলাচল করবে, যার মধ্যে ভান্দে ভারত, শতাব্দী ও এক্সপ্রেস ট্রেনের বিশেষ স্থান থাকবে। এটি কেবলমাত্র যাত্রীদের দ্রুত, সুবিধাজনক ও নিরাপদ সেবা প্রদান করবে না, বরং মালবাহী ট্রেন চলাচলেও বৃদ্ধি ঘটাবে, যা অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।

রেলওয়ে ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য মৌলিক অবকাঠামোর জন্য ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে, যার ফলে অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং স্থানীয় অবকাঠামোর যথাযথ উন্নয়ন হবে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

জম্মু রেলওয়ে বিভাগের গঠন কাশ্মীরকে দেশের প্রধান রেল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। আগামী বছরগুলিতে এই বিভাগ নতুন ট্রেন পরিচালনা, উন্নত রেল সুবিধা এবং উন্নত যাত্রী অভিজ্ঞতার জন্য কাজ করবে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত চলাচলকারী ভান্দে ভারত এক্সপ্রেস এই বিভাগের মাধ্যমে দ্রুত গতিতে এবং নিরাপদ যাত্রার মাধ্যম হবে। রেল নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণে শুধুমাত্র যাত্রীদের সুবিধা হবে না, বরং অঞ্চলে স্থায়িত্ব, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের নতুন পথ উন্মোচিত হবে।

Leave a comment