ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সরনা ধর্ম কোডের বহু বছরের দাবী আবারও জোরালো হয়ে উঠেছে। শুক্রবার ধনবাদ জেলায় শত শত আদিবাসী পুরুষ ও মহিলা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সড়কে নেমে রণধীর বর্মা চক্কে শান্তিপূর্ণ ধর্ণা দেন। "সরনা কোড নয়, তাহলে জনগণনা নয়" এই স্লোগান তুলে প্রতিবাদকারীরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আবেদন জানান।
ঐতিহ্যবাহী পোশাক, তীর-ধনুক ও ঢোল-নগাড়ার সাথে বেরিয়ে পড়া মিছিল
প্রতিবাদকারীরা শহরে একতা মিছিল বের করেন, যাতে যুবক, বৃদ্ধ ও মহিলারা ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পাগড়ি, ফুলের মালা ও সরনা পতাকা নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। হাতে তীর-ধনুক ও কাঁধে ঢোল-নগাড়া নিয়ে তারা সরনা ধর্মের স্বীকৃতির জন্য তাদের ঐক্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রদর্শন করেন। মিছিল ধনবাদ স্টেশন থেকে শুরু হয়ে রণধীর বর্মা চক্কে গিয়ে শেষ হয়, যেখানে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় অনেক সরনা ধর্মগুরু, সমাজকর্মী ও যুব নেতা তাদের বক্তব্য রাখেন।
প্রধান দাবী: জনগণনায় পৃথক "সরনা ধর্ম" কলামের স্বীকৃতি
প্রতিবাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জনগণনার ধর্ম কলামে 'সরনা' কে একটি স্বাধীন ধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা। সরনা ধর্মাবলম্বীদের দাবি, তারা না হিন্দু, না মুসলিম, না খ্রিস্টান— তাদের ধর্ম হল প্রকৃতি, যার সংবিধানগত স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। কার্যক্রমে উপস্থিত আদিবাসী যুব নেতা বির্সা সোরেন বলেন: আমরা জঙ্গল, পাহাড় ও প্রকৃতির পূজা করি। আমাদেরকে 'অন্যান্য' শ্রেণীভুক্ত করা আমাদের পরিচয় মুছে ফেলার মতো।
আইনগত ও সংবিধানগত লড়াইয়েরও ঘোষণা
বক্তারা বলেন, যদি কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৬ সালের জনগণনার আগে সরনা কোড অনুমোদন না করে, তাহলে সমগ্র ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ছত্তিশগড়ে জন আন্দোলন শুরু হবে। ধনবাদ সরনা সমিতির সভাপতি বুধরাম টুডু বলেন, সরনা ধর্ম কোড কেবল একটি রাজনৈতিক দাবী নয়, এটি আমাদের আত্মার সাথে জড়িত অস্তিত্বের প্রশ্ন। তিনি ২০২০ সালে ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় গৃহীত প্রস্তাবের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন, যা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার উপর কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রতিবাদ চলাকালীন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সিটি এসপি, ডিএসপি ও ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে মোতায়েন ছিল। তবে প্রতিবাদ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিল। প্রশাসন প্রতিবাদকারীদের দাবীর স্মারকলিপি গ্রহণ করে রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছানোর আশ্বাস দেয়।
কী সরনা ধর্ম?
সরনা ধর্ম আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী ধর্ম, যেখানে প্রকৃতি, জল, জঙ্গল ও জমি পূজা করা হয়। এতে জনসাধারণের পূজা, সাদামাটা জীবন ও সমষ্টিগত জীবনধারাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সরনা ধর্মাবলম্বী অধিকাংশ মানুষ ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে বাস করেন। জনগণনায় তাদের প্রায়শই "অন্যান্য" শ্রেণীতে রাখা হয়, ফলে তাদের সংখ্যা ও সামাজিক পরিচয় সঠিকভাবে রেকর্ড করা যায় না।
