ISRO ২০২৭ সালে উৎক্ষেপণ করবে প্রথম মানব মহাকাশযান

🎧 Listen in Audio
0:00

ISRO ২০২৭ সালে তাদের প্রথম মানব মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করবে। এর আগে ২০২৫ সালে ব্যোমমিত্র রোবটের সাথে মানবহীন মিশন এবং স্পেডেক্স ডকিং মিশনও হবে। গগনযান মিশন ভারতের এক বিরাট সাফল্য হবে।

মানব মহাকাশযান ২০২৭: ভারত মহাকাশ বিজ্ঞানে ইতিহাস রচনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) ঘোষণা করেছে যে ২০২৭ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের মধ্যে তারা তাদের প্রথম মানব মহাকাশযান (Human Spaceflight) উৎক্ষেপণ করবে। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী মিশনের অধীনে ভারতীয় মহাকাশচারীরা পৃথিবীর কক্ষপথে যাবেন এবং এই সাফল্য ভারতকে বিশ্বের কিছু নির্বাচিত দেশের সারিতে দাঁড় করিয়ে দেবে। আসুন জেনে নেই ISRO-এর সম্পূর্ণ পরিকল্পনা, গগনযান মিশন এবং ভবিষ্যতের বড় মহাকাশ পরিকল্পনা সম্পর্কে।

গগনযান বর্ষ: ২০২৫ হবে ভারতের জন্য ঐতিহাসিক

ISRO-এর চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন যে ২০২৫ সালকে 'গগনযান বর্ষ' ঘোষণা করা হয়েছে। ISRO-এর পরিকল্পনা হল এই বছর তিনটি মানবহীন (Unmanned) মিশন উৎক্ষেপণ করা, যাতে ২০২৭ সালের মানব মহাকাশযান উৎক্ষেপণের আগে সকল প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এবং প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা যায়।

এদের মধ্যে প্রথম মানবহীন মিশন ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে উৎক্ষেপণ করা হবে। এই মিশনে 'ব্যোমমিত্র' নামক একটি হিউম্যানয়েড রোবটকে মহাকাশে পাঠানো হবে।

মানব মহাকাশযান মিশন কি?

মানব মহাকাশযান (Human Spaceflight) অর্থাৎ গগনযান মিশনের উদ্দেশ্য হল ভারতের মহাকাশচারীদের পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (Low Earth Orbit) পাঠানো এবং তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা। এই মিশনের অধীনে তিনজন ভারতীয় মহাকাশচারী ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় যাবেন এবং মহাকাশে ৫ থেকে ৭ দিন থাকবেন। ISRO এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় স্বদেশী প্রযুক্তির ব্যবহার করছে।

আদিত্য L1: সূর্যের দিকে ভারতের প্রথম যাত্রা

ISRO ৬ জানুয়ারী আদিত্য L1 মিশন দ্বারা সংগ্রহ করা বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রকাশ করেছে। এই মিশন সূর্যের অধ্যয়নের জন্য ভারতের প্রথম সৌর পর্যবেক্ষণাগার মিশন এবং এটি ISRO-এর প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ভারত সেই চারটি দেশের মধ্যে অন্যতম যাদের কাছে সূর্যের অধ্যয়নের জন্য নিবেদিত উপগ্রহ রয়েছে।

স্পেডেক্স মিশন: ডকিং প্রযুক্তিতে ভারতের বড় পদক্ষেপ

ISRO-এর 'স্পেডেক্স মিশন' (SPADEX)ও সম্প্রতি শিরোনাম দখল করেছে। এই মিশনের অধীনে দুটি ছোট মহাকাশযান PSLV (Polar Satellite Launch Vehicle)-এর মাধ্যমে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল মহাকাশে ডকিং (Space Docking) প্রক্রিয়া পরীক্ষা করা। এই মিশনে মাত্র ১০ কিলোগ্রাম জ্বালানির ব্যবহার করা হয়েছে, যা ISRO-এর দক্ষতা এবং পরিকল্পনার ক্ষমতা প্রকাশ করে। ডকিং প্রযুক্তি মানব মহাকাশ মিশনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ মহাকাশচারীদের অন্য কোনও মডিউলের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়।

প্রতি মাসে হবে এক উৎক্ষেপণ

ভি. নারায়ণন জানিয়েছেন যে ISRO এই বছর প্রায় প্রতি মাসে এক উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছে। এতে বৈজ্ঞানিক, বাণিজ্যিক এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত অনেক উপগ্রহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশেষ ব্যাপার হল ISRO এবং NASA-এর যৌথ মিশন NISAR (NASA-ISRO Synthetic Aperture Radar)ও এই বছর উৎক্ষেপণ করা হবে। এই উপগ্রহটি পৃথিবীর পৃষ্ঠের পর্যবেক্ষণ করবে এবং পরিবেশগত পরিবর্তনগুলি ট্র্যাক করতে সাহায্য করবে। এটি ভারতে তৈরি প্রক্ষেপণ যান দিয়ে উৎক্ষেপণ করা হবে।

কেন গগনযান মিশন প্রয়োজন?

ভারতের জন্য গগনযান মিশন কেবল প্রযুক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি আত্মনির্ভর ভারত (Aatmanirbhar Bharat) অভিযানের দিকেও একটি বড় ধাপ। এর মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করবে যে সে নিজের দমে মানুষকে মহাকাশে পাঠাতে এবং নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পারে। এই মিশন দেশের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে মহাকাশ পর্যটন এবং মহাকাশ ভিত্তিক প্রযুক্তির জন্য পথ প্রশস্ত করবে।

কি 'ব্যোমমিত্র'?

'ব্যোমমিত্র' একটি হিউম্যানয়েড রোবট, যা ISRO বিশেষ করে মহাকাশ মিশনের জন্য ডিজাইন করেছে। এই রোবট মানবহীন গগনযান মিশনে পাঠানো হবে যাতে মহাকাশের পরিবেশ, মাধ্যাকর্ষণ এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত পরিস্থিতির তথ্য পাওয়া যায়। ISRO-এর লক্ষ্য হল এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মানব মিশনের নিরাপত্তা এবং সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহার করা।

ভারতের মহাকাশ যাত্রার দিক

ISRO আর কেবল উৎক্ষেপণ সংস্থা নয়, বরং এটি এমন একটি সংস্থা হয়ে উঠেছে যা বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করছে। আগামী বছরগুলিতে চন্দ্রযান-৪, শুক্রযান এবং নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন जैसी পরিকল্পনাও পাইপলাইনে রয়েছে। ভারত এখন কেবলমাত্র মহাকাশে উপস্থিতি দেখাচ্ছে না, বরং সেখানে নেতৃত্বের ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

Leave a comment