হিমন্ত বিশ্ব শর্মা: পাকিস্তানের ব্রহ্মপুত্র নদী দাবিকে অসম মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র নিন্দা

🎧 Listen in Audio
0:00

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি পাকিস্তানের এক বিতর্কিত দাবিকে তীব্র ভাষায় নাকচ করে দিয়েছেন। পাকিস্তান দাবি করেছিল যে, ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদীর জল সম্পূর্ণরূপে চীনের উপর নির্ভরশীল।

গুয়াহাটি: পহেলগাম আক্রমণের পর ভারতের সিন্ধু নদীর জল বন্ধ করার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান কঠোর অবস্থান নিয়ে হুমকি দিয়েছিল যে চীনও ব্রহ্মপুত্র নদীর জল বন্ধ করে দিতে পারে, যার ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে জলের তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে। এই বক্তব্যের জবাবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পাকিস্তানকে কড়া জবাব দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে পাকিস্তানের এই দাবিকে নাকচ করে বলেছেন যে ভারত চীন থেকে আসা ব্রহ্মপুত্র নদীর জলের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল নয়।

পাকিস্তানের দাবি এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রীর জবাব

ভারতের সিন্ধু নদীর জল বন্ধ করার পর পাকিস্তান ব্রহ্মপুত্র নদী নিয়েও চীনকে নিয়ে হুমকি দিয়েছিল। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, ভারত ব্রহ্মপুত্র নদীর জলের জন্য সম্পূর্ণরূপে চীনের উপর নির্ভরশীল, তাই যদি চীন জল বন্ধ করে দেয়, তাহলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে খরা দেখা দিতে পারে। পাকিস্তানের এই দাবিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্পূর্ণরূপে নাকচ করে দিয়েছেন।

তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, ব্রহ্মপুত্র নদীর জলের মাত্র ৩০-৩৫ শতাংশ চীন থেকে আসে, বাকি ৬৫-৭০ শতাংশ জল ভারতের অভ্যন্তরে প্রবাহিত নদী এবং আঞ্চলিক বৃষ্টিপাত থেকে আসে। এই তথ্য তিনি তথ্য-উপাত্ত দিয়েও উপস্থাপন করেছেন যাতে কোনো সন্দেহ না থাকে।

ব্রহ্মপুত্রের জলপ্রবাহ ভারতে কেন বৃদ্ধি পায়?

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন যে, ব্রহ্মপুত্র নদীর জলপ্রবাহ ভারতে বৃদ্ধি পায় কারণ ভারতের অনেক রাজ্য যেমন অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, অসম এবং নাগাল্যান্ডে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়াও, ব্রহ্মপুত্র নদীতে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবাহিত অনেক উপনদী যেমন সুবনসিরি, লোহিত, কামেং, মানস, ধনসিরি, জিয়া ভারালী, কোপিলি, দিগারু এবং কুলসি মিলিত হয়, যার ফলে নদীর জলস্তর এবং প্রবাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যখন ব্রহ্মপুত্র নদী চীন থেকে ভারতে প্রবেশ করে তখন তার জলপ্রবাহ প্রায় ২০০০ থেকে ৩০০০ ঘনমিটার প্রতি সেকেন্ড হয়। কিন্তু মৌসুমি বৃষ্টির সময় অসমের সমভূমিতে এই প্রবাহ বেড়ে ১৫০০০ থেকে ২০০০০ ঘনমিটার প্রতি সেকেন্ডে পৌঁছে যায়।” এই তথ্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, ভারতের অভ্যন্তরে জলের বেশিরভাগ অংশ বৃষ্টিপাত এবং উপনদী থেকে আসে এবং চীনের অবদানের তুলনায় এটি প্রায় সাতগুণ বেশি।

পাকিস্তানের কৌশল এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পাকিস্তানের এই কৌশলকে রাজনৈতিক বক্তব্য বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে, ভারতের সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করার পর পাকিস্তানে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং তারা এ ধরণের দাবি করে ভারতকে অস্থির করার চেষ্টা করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, পাকিস্তানের মিথ্যা দাবীর কোনো ভিত্তি নেই এবং বাস্তবতা হলো ব্রহ্মপুত্র নদীর জলপ্রবাহ ভারতের অভ্যন্তরে প্রধানত ভারতীয় অঞ্চল থেকে আসে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তান বারবার জল সংকট নিয়ে গুজব ছড়ায়, কিন্তু আসলে ব্রহ্মপুত্র নদীর জল ভারতের অনেক রাজ্যের অভ্যন্তরে তৈরি হয় এবং বৃদ্ধি পায়, তাই চীন যদি জল বন্ধ করে দেয় তবুও ভারতের এই নদীর জলের উপর কোনো গুরুতর সংকট হবে না।

ব্রহ্মপুত্র নদীর ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য

ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎপত্তিস্থল তিব্বতের চাংতাং পর্বতশ্রেণীতে, যেখানে একে ইয়াংৎসে নদীর একটি উপনদীও বলা হয়। এই নদী চীনের তিব্বতীয় অঞ্চল হয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করে। সেখান থেকে এটি অসমের সমভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং অবশেষে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়। চীনের তিব্বতীয় অঞ্চলে এই নদীর জলপ্রবাহ সীমিত থাকে কারণ সেখানে বৃষ্টিপাত কম হয়, কিন্তু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে প্রচুর মৌসুমি বৃষ্টিপাত এবং অনেক উপনদী এই নদীকে বিশাল জলাধারে পরিণত করে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতের এই অঞ্চল দেশের জন্য জল নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এটাও জানিয়েছেন যে, এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক জলসম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে, যা কেবলমাত্র কৃষিকাজ নয়, পুরো অঞ্চলের পরিবেশগত ব্যবস্থার জন্যও অত্যাবশ্যক। তাই পাকিস্তান বা চীনের জল বন্ধ করার হুমকির ভারতের উপর কোনো বাস্তব প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

Leave a comment