হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য: অসম কংগ্রেসের মহিলা শাখার তীব্র প্রতিবাদ

🎧 Listen in Audio
0:00

অসম পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একথা বলেছিলেন যে, অসমে কংগ্রেসের শাসনকালে মহিলারা সরকারি চাকরি পেতে অনৈতিক পথ অবলম্বন করেছিল। এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে অসম কংগ্রেসের মহিলা শাখা।

নয়াদিল্লি: অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি একটি বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে শিরোনামে উঠে এসেছেন। অসম পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তিনি মহিলাদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা রাজ্যের মহিলা কংগ্রেসে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন যে, কংগ্রেসের শাসনামলে মহিলারা সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য অনৈতিক উপায় অবলম্বন করেছিল। তার এই বক্তব্যের পর অসম কংগ্রেসের মহিলা শাখা প্রতিবাদ শুরু করে এবং শর্মা থেকে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানায়।

মহিলাদের সম্মানে আঘাত: প্রতিবাদ বেড়েছে

অসম প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মীরা বোরঠাকুর গোস্বামী বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য মহিলাদের সম্মানে আঘাত করেছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, শর্মা আঙ্গনওয়াড়ি, আশা কর্মী থেকে শুরু করে উচ্চ সরকারি পদে কাজ করা সকল মহিলার অপমান করেছেন। গোস্বামী বলেন, আমরা এই অপমানজনক বক্তব্য সহ্য করব না এবং মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।

গোস্বামী এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW)-কে চিঠি লিখে শর্মার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও, তিনি বলেছেন যে, সকল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মহিলা কমিশনের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হবে এবং এই ঘটনার সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানানো হবে।

বিজেপি নেতাদের পুতুল দাহের হুঁশিয়ারি

মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী এও ঘোষণা করেছেন যে, প্রতিবাদ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে করা হবে। তিনি বলেছেন যে, বিজেপি নেতাদের পুতুল দাহ করা হবে এবং মহিলারা দলীয় সীমার উপরে উঠে ঐক্যবদ্ধ হবে। গোস্বামী আরও বলেন, আমরা সকল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের কংগ্রেসের মহিলা শাখাকে একটি যৌথ মঞ্চে নিয়ে আসার জন্য কাজ করব, যাতে আমরা মহিলাদের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলি কার্যকরভাবে তুলে ধরতে পারি।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তার মন্তব্যে একজন সাক্ষীর বক্তব্যের উল্লেখ করেছিলেন, যা তাঁর মতে মহিলাদের সরকারি চাকরি পাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। তবে, গোস্বামী এই সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতার উপর প্রশ্ন তুলে বলেছেন যে, এই বক্তব্য কেবলমাত্র সাধারণ উপায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে এর অন্তর্নিহিত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, শর্মা চয়নাত্মকভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করছেন এবং তিনি সেইসব প্রতিবেদনের উল্লেখ করেননি যেখানে আরও কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মহিলা নেতাদের সমর্থন

অসমের মহিলা কংগ্রেস ছাড়াও, অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মহিলা কংগ্রেস নেতারাও শর্মার বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন এবং তার ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়েছেন। ত্রিপুরা মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সরবানী চক্রবর্তী বলেছেন যে, শর্মা ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাদের প্রতিবাদ চলবে। তিনি সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, এই ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত।

মিজোরাম মহিলা কংগ্রেসের প্রধান গোগবিনলিয়ানি দিয়ানীও শর্মার বক্তব্যকে ভুল বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে, তিনি সেই কংগ্রেস সরকারের অংশ ছিলেন যেখানে অভিযোগ অনুযায়ী অনিয়ম হয়েছিল, তাই তাঁর তদন্ত থেকে বাঁচার কোনও অধিকার নেই।

নাগাল্যান্ড মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী অকুমলা পোগেমও শর্মার উপর তীব্র আক্রমণ চালিয়ে বলেছেন, মহিলাদের সম্পর্কে এই ধরণের চিন্তাভাবনা রাখা ব্যক্তিকে মুখ্যমন্ত্রী পদের মতো উচ্চ পদে বসার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। মেঘালয় এবং মণিপুরের মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রীরাও এই বিষয়ে তাদের অবস্থান জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।

ঘটনা আরও গভীরে যাবে?

মহিলা কংগ্রেসের প্রতিবাদ অসমে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধে একটি বড় মোর্চা তৈরি করেছে। এই ঘটনা কেবল রাজনৈতিক নয়, মহিলা অধিকারের সাথে জড়িত, যা এখন জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা না চান, তাহলে এই ঘটনা আরও গভীরে যেতে পারে এবং দেশজুড়ে মহিলাদের বিরুদ্ধে বক্তব্যের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক আন্দোলনও সৃষ্টি হতে পারে।

মহিলা কংগ্রেসের এই লড়াই কেবল অসমে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের মহিলা শাখাকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করা হবে। এই ঘটনায় এখন দেখার বিষয় হল, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কখন এবং কীভাবে এই বিতর্কের সমাধান করবেন।

Leave a comment