এম. জে. আকবরের আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে পুনরায় অংশগ্রহণ

🎧 Listen in Audio
0:00

এম. জে. আকবরের কেন্দ্র সরকারের কর্মকাণ্ডে আবারও সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন একটি দলের অংশ হিসেবে ভারতের আন্তর্জাতিক স্বার্থ রক্ষা এবং জঙ্গিবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানকে উন্মোচিত করার জন্য একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নয়াদিল্লি: দীর্ঘদিন জনসাধারণের জীবন থেকে দূরে থাকার পরে, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম. জে. আকবর আবারও জাতীয় মঞ্চে ফিরে এসেছেন। ২০০৮ সালে ‘মিটু’ বিতর্কের জেরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগকারী আকবর এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নতুন কৌশলগত দলের অংশ। তাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে মতামত রাখার জন্য গঠিত বিশেষ আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং ডেনমার্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশ ভ্রমণ করবে। এর উদ্দেশ্য হল বিশ্ব সমাজের কাছে ভারতের জঙ্গিবাদ বিরোধী নীতি স্পষ্ট করা এবং পাকিস্তান কর্তৃক জঙ্গিবাদকে সমর্থন করার সত্য উন্মোচন করা।

ভারতের ‘ডিপ্লোমেটিক স্ট্রাইক’-এ এম. জে. আকবরের প্রত্যাবর্তন

কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধির কৌশল অবলম্বন করে কেন্দ্র সরকার ৭ জন সাংসদের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল গঠন করেছে, যাতে এম. জে. আকবরের নিয়োগ একটি বিশেষ ইঙ্গিত বহন করে। রবিশঙ্কর প্রসাদ নেতৃত্বাধীন এই প্রতিনিধি দলে কংগ্রেসের শশী থারুর, জেডিইউ-এর সঞ্জয় কুমার ঝা, ডিএমকে-এর কনিমোঝি, এনসিপি-এসপির সুপ্রিয়া সুলে, শিবসেনার শ্রীকান্ত শিন্ডে এবং বিজেপির বৈজয়ন্ত পাণ্ডাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এম. জে. আকবরের গভীর আন্তর্জাতিক বোধ, সাংবাদিকতায় তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রাক্তন কর্মজীবন এই অভিযানে শক্তি যোগ করতে পারে।

‘মিটু’র পর প্রত্যাবর্তন: ভাবমূর্তির লড়াই এবং আইনের লড়াই

২০১৮ সালে #MeToo আন্দোলনের সময় অনেক মহিলা সাংবাদিক এম. জে. আকবরের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। এর ফলে তাকে বিদেশ রাজ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়। সাংবাদিক প্রিয়া রমণীর বিরুদ্ধে তিনি মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন, যাতে ২০২১ সালে দিল্লির একটি আদালত রমণীকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করে।

যদিও আকবর এই রায়কে দিল্লি হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এই বিতর্ক তাঁর জনসাধারণের ভাবমূর্তিকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করেছিল, যার পরে তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিলেন।

‘অপারেশন সিন্দুর’র পর ভারতের কূটনৈতিক পাল্টা আঘাত

২২শে এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে জঙ্গি হামলায় সেনাদের শাহাদতের পর ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর আওতায় পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে। এর পর ভারত বিশ্বব্যাপী পাকিস্তানের কারসাজি উন্মোচন এবং নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য এই বহুদলীয় প্রতিনিধি দল প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়।

এই অভিযানে এম. জে. আকবরের মতো অভিজ্ঞ ব্যক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ তিনি সবসময় পাকিস্তানের জঙ্গিবাদী নীতি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কথা বলেছেন। তাঁর পুরানো এক বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, “ভারতকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার মতামত কেবল সীমান্তে নয়, প্রতিটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

সাংবাদিকতা থেকে রাজনীতি পর্যন্ত যাত্রা

এম. জে. আকবর ১৯৭০-এর দশকে ‘সানডে’ এবং ‘এশিয়া’র মতো পত্রিকায় সাংবাদিকতার দুর্দান্ত সূচনা করেছিলেন। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এবং ‘এশিয়ান এজ’ এর মতো সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে তিনি তার আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন। ‘নেহেরু: দ্য মেকিং অফ ইন্ডিয়া’, ‘কাশ্মীর: বিহাইন্ড দ্য ভেল’ এবং ‘দ্য সিজ উইদিন’ এর মতো তাঁর বইগুলি তাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এবং ঐতিহাসিক বিচারের ধনী লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

রাজনৈতিক জীবনে ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসের হয়ে কিশানগঞ্জ (বিহার) থেকে জয়ী হয়ে তিনি সংসদে প্রবেশ করেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি আবার সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। ২০০৪ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি আবার রাজনীতিতে নতুন করে শুরু করেন। এরপর তাকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয় এবং ২০১৬ সালে বিদেশ রাজ্যমন্ত্রী করা হয়।

প্রত্যাবর্তনের অর্থ

এম. জে. আকবরের এই প্রত্যাবর্তন কেবল একজন ব্যক্তির নয়, বরং সেই রাজনৈতিক চিন্তাধারার যার মধ্যে অভিজ্ঞতা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যদিও তাঁর অতীত নিয়ে বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি, তবে সরকার জানিয়েছে যে বর্তমান অভিযানের প্রয়োজনীয়তার জন্য তাঁর অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করা যাবে না।

এখন দেখার বিষয় হল এম. জে. আকবর এই নতুন ভূমিকায় নিজেকে কেমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তিনি আবার কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা নাকি এই ভূমিকা কেবল একটি সীমিত অভিযান পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে।

Leave a comment