বিহারে রাজনৈতিক পোস্টার যুদ্ধ: তেজস্বী-লালুকে লক্ষ্য করে বিজেপির ব্যঙ্গাত্মক প্রচার

🎧 Listen in Audio
0:00

গত শুক্রবার বিহার সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যকে বহু উন্নয়ন প্রকল্পের উপহার দিয়েছেন। এই প্রকল্পগুলির উদ্বোধনের পাশাপাশি তিনি তার বক্তব্যে তেজস্বী যাদব ও লালু প্রসাদ যাদব পরিবারের উপর তীব্র আক্রমণ করেছেন।

বিহার রাজনীতি: বিহারের রাজনীতি আবারও তার তীব্র ও ব্যঙ্গাত্মক রূপে রাস্তায় নেমে এসেছে। পাটনার দেওয়ালে লাগানো একটি বিতর্কিত পোস্টার সমগ্র রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত করে তুলেছে। এইবার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সমর্থকদের লাগানো এই পোস্টারে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) সুপ্রিমো লালু প্রসाद যাদব এবং তার পুত্র, বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

পোস্টারে কী আছে?

পাটনার প্রধান চৌমাঠা এবং রাস্তায় লাগানো এই পোস্টারে একটি মহিষের উপর চড়ে তেজস্বী যাদবকে কার্টুনের রূপে দেখানো হয়েছে, যিনি হাতে আরজেডির প্রতীক লালটেন ধরে আছেন। তার পিছনে বসে লালু যাদব ‘ভিক্টরি সাইন’ দেখাচ্ছেন। কিন্তু সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হল পোস্টারে লেখা স্লোগান – ‘মেরা বাপ চারা চোর হে, মুঝে ভোট দো’। এই ব্যঙ্গাত্মক পোস্টারের মাধ্যমে বিজেপি সরাসরি লালু যাদবের চারা কেলেঙ্কারীর অতীতকে নির্বাচনী বিষয় হিসেবে তুলে ধরে তেজস্বীকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করেছে।

বিজেপির লক্ষ্য, আরজেডির পাল্টা আক্রমণ

এই পোস্টারটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে যখন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সীওয়ানের একটি জনসভায় তেজস্বী যাদব এবং সমগ্র লালু পরিবারের উপর তীব্র আক্রমণ করেছেন। জবাবে তেজস্বী প্রধানমন্ত্রীকে ‘পকেটমার’ পর্যন্ত বলেছেন, যার ফলে বিহারের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আরজেডি মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারী এই পোস্টারের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন: এনডিএ ইতিমধ্যেই তাদের পরাজয় স্বীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী সীওয়ানের জনসভায় প্রকৃত ইস্যু থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। বিহার কী পেয়েছে, তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। তিনি এও অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি শুধুমাত্র গালিগালাজ এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের রাজনীতি করছে। তিওয়ারী বলেছেন যে আরজেডির নেতারা সর্বদা সংযত ভাষা ব্যবহার করেন, অন্যদিকে এনডিএ নেতাদের বক্তব্য অপমানজনক এবং অনৈতিক হয়ে উঠছে।

নির্বাচনী ময়দানে চারা কেলেঙ্কারীর দাবা

বিজেপি যেভাবে চারা কেলেঙ্কারীকে আবার নির্বাচনী কেন্দ্রবিন্দু করার চেষ্টা করেছে তা দেখায় যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দুর্নীতি আবার একটি প্রধান বিষয় হবে। যদিও লালু যাদবকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং তিনি জেলের শাস্তিও ভোগ করেছেন, তবে বিজেপি বারবার তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যুবকদের আরজেডি থেকে দূরে সরানোর কৌশলে কাজ করছে।

তেজস্বী যাদব নিজেকে যুব নেতা এবং উন্নয়নশীল ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। তার জোর রয়েছে কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলিতে। তিনি ক্রমাগত দাবি করছেন যে এনডিএ সরকার বিহারকে প্রতারিত করেছে এবং কেন্দ্রের পরিকল্পনা মাঠে নামেনি। তার মতে, বিজেপি এবং জেডিইউ শুধুমাত্র প্রতিবাদী রাজনীতি করছে এবং জনস্বার্থের বিষয়গুলি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিহার বিধানসভা নির্বাচন যত কাছে আসবে, এই ধরনের পোস্টার যুদ্ধ, বক্তব্য এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ আরও তীব্র হবে। এটা স্পষ্ট যে বিজেপি তেজস্বীকে লালু যাদবের ‘উত্তরাধিকার’ বোঝা বহনকারী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়, অন্যদিকে তেজস্বী নিজেকে নতুন যুগের প্রতিনিধি বলে দাবি করে এ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন।

Leave a comment