ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে, বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর কঠোর বার্তা দিয়ে বলেছেন যে, প্রতিবেশী দেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা ভারতের সাথে কী ধরনের সম্পর্ক রাখতে চায়। তার এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে ভারতকেই উপদেশ দিয়েছে।
নয়াদিল্লি: বাংলাদেশে মোহাম্মদ ইউনুসের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বাংলাদেশকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেছেন যে, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ভারতের সাথে কী ধরনের সম্পর্ক রাখতে চায়। জবাবে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেছেন যে, ভারতকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা বাংলাদেশের সাথে কী ধরনের সম্পর্ক চায়।
হিন্দুদের ইস্যুতে বাংলাদেশের অসন্তোষ
জয়শঙ্কর বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হামলার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, যা ঢাকা সম্পূর্ণরূপে নাকচ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেছেন যে, ভারতকে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। তিনি বলেছেন, "বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ইস্যু আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, ঠিক যেমন ভারতের সংখ্যালঘুরা ভারতের বিষয়।"
ঢাকার এই প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট যে, মোহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের কঠোর অবস্থানে অস্বস্তিতে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রতি ভারত বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এটিকে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে দূরত্ব বৃদ্ধি
ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক সম্প্রতি শীতল হয়েছে। জয়শঙ্কর এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন যে, বাংলাদেশকে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা ভারতের সাথে কী ধরনের সম্পর্ক রাখতে চায়। এর জবাবে তৌহিদ হোসেন পাল্টা বলেছেন, "যদি ভারত মনে করে আমাদের সাথে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে তাদেরও তাদের অবস্থান নিয়ে ভাবতে হবে।"
তিনি আরও বলেছেন যে, বাংলাদেশ সর্বদা সম্মান ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে সম্পর্ক চায়, কিন্তু এটি দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া হতে হবে। এই বক্তব্য ভারতের প্রতি বাংলাদেশের পরিবর্তিত অবস্থানকে প্রতিফলিত করে, যা সম্প্রতি অনেক নীতিগত বিষয়ে ভারত থেকে আলাদা অবস্থান গ্রহণ করছে।
শেখ হাসিনার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের বাইরে এবং ভারতের আতিথেয়তা উপভোগ করছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করে বলেছেন যে, তাঁর বক্তব্য সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তিনি বলেছেন, "আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যে, আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করতে পারে।"
কি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যাবে?
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারত বারবার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহায়তা দিয়েছে, কিন্তু নতুন সরকারের ঝোঁক ভারত থেকে সরে অন্যান্য শক্তির দিকে।