চীনের সাথে সীমান্ত বিবাদ চলার মধ্যেই ভারত প্রথমবারের মতো ১০টি আফ্রিকান দেশের সাথে ‘এইমে’ নামক একটি বৃহৎ নৌবাহিনী অনুশীলন করবে। এই অনুশীলন আফ্রিকা মহাদেশে ভারতের সামরিক উপস্থিতি শক্তিশালী করার একটি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ।
নয়াদিল্লি: হিন্দ মহাসাগরে নিজের শক্তিশালী অবস্থান স্থাপন এবং আফ্রিকান দেশগুলির সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারত প্রথমবারের মতো ১০টি আফ্রিকান দেশের সাথে ‘এইমে’ (AFINDEX Maritime Engagement - AIME) নামক একটি বিশেষ নৌবাহিনী অনুশীলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই অভূতপূর্ব অনুশীলনের উদ্দেশ্য হলো সমুদ্রের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং বিশ্বব্যাপী কৌশলগত সমীকরণে ভারতের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করা।
ভারতের নতুন সমুদ্র কৌশল
এই ঐতিহাসিক অনুশীলনটি ১৩ থেকে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে তানজানিয়ার দার-এস-সালামে অনুষ্ঠিত হবে। এতে ভারতের সাথে তানজানিয়া, কোমোরোস, জিবুতি, ইরিত্রিয়া, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মরিশাস, মোজাম্বিক, সেইশেলস এবং দক্ষিণ আফ্রিকা অংশগ্রহণ করবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এই অনুশীলনের উদ্বোধন করবেন। ভারতীয় নৌবাহিনীর উপ-প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল তারুণ সোবতি জানিয়েছেন যে, গত কয়েক বছরে ভারত ‘সাগর’ (SAGAR - Security and Growth for All in the Region) দর্শনের আওতায় হিন্দ মহাসাগর অঞ্চলে (IOR) সমুদ্র নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই দিকে এইমে এবং আসন্ন ‘হিন্দ মহাসাগর জাহাজ (IOS) সাগর’ এর মতো উদ্যোগ ভারতকে এই অঞ্চলে ‘প্রথম প্রতিক্রিয়া প্রদানকারী’ এবং ‘বিশ্বস্ত নিরাপত্তা অংশীদার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
চীনকে লাগবে ধাক্কা
ভারতের এই পদক্ষেপ চীনের বর্ধিত সমুদ্র উপস্থিতি এবং আফ্রিকান দেশগুলিতে তার বর্ধিত প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীন আফ্রিকান উপকূলে তার নৌ ঘাঁটি স্থাপন করেছে এবং সোমালিয়ার সমুদ্রপাইরাট এবং হুতি বিদ্রোহীদের কর্মকাণ্ডের উপর কঠোর নজর রাখে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের এই কৌশলগত পদক্ষেপ চীনের জন্য একটি কঠোর বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত এপ্রিলে ‘আইওএস সাগর’ উদ্যোগও শুরু করবে, যার অধীনে ভারতীয় নাবিক এবং নয়টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৪৪ জন কর্মীর যৌথ দল আইএনএস সুনয়নায় নিযুক্ত থাকবে। ৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত এই দল দক্ষিণ-পশ্চিম হিন্দ মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্র তত্ত্বাবধান এবং নিরাপত্তা অভিযানে অংশগ্রহণ করবে।
ভারতের বর্ধিত সমুদ্র শক্তি
যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলিতে সোমালিয়ার সমুদ্রপাইরাট এবং হুতি বিদ্রোহীদের কর্মকাণ্ড কমেছে, তবে ভারতীয় নৌবাহিনী আদেন উপসাগরে স্থায়ীভাবে একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে রেখেছে। প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজও পাঠানো হবে। ভারতের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র আফ্রিকান দেশগুলির সাথে তার প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে শক্তিশালী করবে না, বরং চীনকেও এই ইঙ্গিত দেবে যে হিন্দ মহাসাগরে ভারতের অবস্থানকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।