ভারত ও কানাডার সম্পর্কের উন্নতিতে আশার আলো দেখা দিয়েছে। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর ও কানাডার বিদেশমন্ত্রী অ্যানিটা আনন্দ-এর মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এফটিএ-তে আবার আলোচনা শুরু হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
India-Canada Relation: গত কয়েক বছর ধরে ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি লক্ষ্য করা গেছে। দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনার প্রধান কারণ হলো খালিস্তান সমর্থকদের প্রতি কানাডার মনোভাব এবং ভারতের বিরুদ্ধে করা বক্তব্য। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলাতে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং কানাডার নতুন বিদেশমন্ত্রী অ্যানিটা আনন্দ-এর মধ্যে হওয়া আলোচনা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
জয়শঙ্কর ও অ্যানিটা আনন্দ-এর মধ্যে আলোচনা
রবিবার রাতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং কানাডার নতুন বিদেশমন্ত্রী অ্যানিটা আনন্দ-এর মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, আলোচনাটি অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির পর এটাই প্রথমবার যখন ভারত ও কানাডার বিদেশমন্ত্রীদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হলো। এই আলোচনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক পরিবেশ দেখা গেছে।
আলোচনার পর জয়শঙ্কর সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন যে, কানাডার বিদেশমন্ত্রীর সাথে আলোচনা প্রশংসনীয় ছিল। আমরা ভারত-কানাডা সম্পর্কের ভবিষ্যত সম্ভাবনার উপর আলোচনা করেছি। আমি তাঁর সফল কর্মকালের জন্য শুভেচ্ছা জানাই। অন্যদিকে, অ্যানিটা আনন্দও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত-কানাডা সম্পর্ককে শক্তিশালী করার এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর উপর বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে আলোচনা অত্যন্ত ভালো হয়েছে। আমি ভবিষ্যতেও তাঁর সাথে কাজ করার জন্য উৎসুক।
ভারত-কানাডার সম্পর্কে কেন ফাটল ধরেছিল?
ভারত ও কানাডার সম্পর্কে মনোমালিন্যের সবচেয়ে বড় কারণ হলো কানাডায় বর্ধমান খালিস্তানী কর্মকাণ্ড। पूर्व প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো-এর कार्यकालে কানাডায় খালিস্তান সমর্থক সংগঠনগুলিকে মুক্তাঙ্গন দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে খালিস্তানী সন্ত্রাসী হরদীপ সিং নিজ্জর-এর হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ট্রুডো সরকার এই হত্যাকাণ্ডে ভারতকে জড়িত থাকার অভিযোগ আনে, কিন্তু কখনোই কোনো নিশ্চিত প্রমাণ দিতে পারেনি। এর পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এতটাই বেড়ে যায় যে, পরস্পরের হাই কমিশনারদের ফিরিয়ে নিতে হয় এবং কূটনৈতিক সম্পর্কেও কমিয়ে দেওয়া হয়।
কানাডায় নতুন সরকার গঠনের পর পরিবর্তিত পরিবেশ
কানাডায় সম্প্রতি হওয়া নির্বাচনের পর মার্ক ওয়েইনের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। এই নতুন সরকারের আগমনের পর থেকে ভারতবিরোধী বক্তব্য কমেছে। মনে করা হচ্ছে, নতুন সরকার ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার পক্ষে। নতুন বিদেশমন্ত্রী অ্যানিটা আনন্দ-এর মনোভাবও বেশ ইতিবাচক দেখা গেছে। তিনি ভারতের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলেছেন, যার ফলে আশা করা হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (Free Trade Agreement - FTA) আবার শুরু হতে পারে।
ভারত ও কানাডার মধ্যে এফটিএ-র গুরুত্ব
ভারত ও কানাডার মধ্যে এফটিএ-এর আলোচনা ২০২৩ সালে সম্পর্কের অবনতির সাথে সাথে থেমে গিয়েছিল। এফটিএ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উন্নত করবে। কানাডার জন্য ভারত একটি বৃহৎ বাজার, অন্যদিকে ভারতের জন্যও কানাডার সাথে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কানাডার নতুন বিদেশমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এফটিএ-তে আবার আলোচনা শুরু করার ইঙ্গিত পাওয়া একটি ইতিবাচক উদ্যোগ।
ট্রুডো-এর নীতির ফলে ভারত-কানাডা সম্পর্কে ক্ষতি
पूर्व প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো-এর कार्यकालে ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য এবং খালিস্তান সমর্থকদের প্রতি প্রদত্ত ছাড় সম্পর্ককে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। কানাডায় খালিস্তানী সন্ত্রাসীদেরকে মুক্তাঙ্গন দেওয়ায় ভারত বারবার আপত্তি জানিয়েছে, কিন্তু ট্রুডো সরকার তা উপেক্ষা করেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ভারতীয় কূটনীতিকদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ট্রুডো-এর রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে ভারত-কানাডা সম্পর্ক অত্যন্ত নিম্নস্তরে নেমে এসেছিল।
এখন আশার আলো
এখন যখন কানাডায় নতুন সরকার গঠিত হয়েছে এবং বিদেশমন্ত্রী অ্যানিটা আনন্দ ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার দিকে প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছেন, তখন আশা করা হচ্ছে আগামী দিনগুলিতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও উন্নত হবে। এফটিএ-তে আবার আলোচনা শুরু হতে পারে। এছাড়াও, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন পথ উন্মোচিত হতে পারে।