বিখ্যাত ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ এবং ‘টাইগার ম্যান’ বল্মীকি থাপার ৭৩ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। চার দশক ধরে তিনি বাঘ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কাজ করেছেন এবং রণথম্ভৌর ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
Valmik Thapar: ভারতের অন্যতম বিখ্যাত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মী বল্মীকি থাপার শনিবার প্রয়াত হয়েছেন। ৭৩ বছর বয়সে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। কিছুদিন ধরে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। শনিবার বিকেল ৩:৩০ টায় লোদি ইলেকট্রিক শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। বল্মীকি থাপার প্রয়াণ ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি অপূরণীয় ক্ষতি।
চার দশকের নিষ্ঠা: বাঘ সংরক্ষণে অসাধারণ অবদান
ভারতে বাঘ সংরক্ষণের জন্য বল্মীকি থাপার কাজ অসাধারণ। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি টাইগার কনজারভেশনের জন্য কাজ করেছেন এবং এই দিকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৮৮ সালে তিনি রণথম্ভৌর ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠা করেন। এই ফাউন্ডেশন সম্প্রদায়ভিত্তিক সংরক্ষণ কাজের জন্য পরিচিত এবং রণথম্ভৌর টাইগার রিজার্ভে বাঘের সুরক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করেছে।
বাঘ সংরক্ষণের জন্য সবসময় কণ্ঠ উঠিয়েছেন
বল্মীকি থাপার সবসময় বিশ্বাস করতেন যে বাঘ শুধুমাত্র একটি প্রজাতি নয়, বরং ভারতের বন এবং পরিবেশতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি সবসময় শক্তিশালী অ্যান্টি-পোচিং (শিকারবিরোধী) আইনের পক্ষে ছিলেন এবং চাইতেন দেশজুড়ে এমন টাইগার রিজার্ভ তৈরি হোক যেখানে বাঘ কোনও মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই বাস করতে পারবে। তিনি বাঘের প্রাকৃতিক বাসস্থান রক্ষার জন্য বারবার সরকারের কাছে আবেদন করেছেন এবং তার বই, ডকুমেন্টারি এবং বক্তৃতা মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করেছেন।
বল্মীকি থাপার পারিবারিক পটভূমি এবং ব্যক্তিগত জীবন
বল্মীকি থাপার জন্ম একটি সম্মানিত পরিবারে। তার পিতা রোমেশ থাপার বিখ্যাত সাংবাদিক ছিলেন, আর তাঁর খালা রোমিলা থাপার একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ। তাঁর কাজিন করণ থাপার দেশের অন্যতম আলোচিত সাংবাদিক। বল্মীকি থাপার থিয়েটার শিল্পী সঞ্জনা কাপুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি বিখ্যাত অভিনেতা শশী কাপুরের কন্যা। তাঁর একজন ছেলেও আছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ শোক প্রকাশ করেছেন
বল্মীকি থাপার মৃত্যুতে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, "বল্মীকি থাপার বিগত চার দশক ধরে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বাঘ সংরক্ষণে, একজন মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার প্রয়াণ একটি বড় ক্ষতি। আজকের রণথম্ভৌর তার নিষ্ঠা এবং অক্লান্ত প্রচেষ্টার জীবন্ত প্রমাণ।"
সরকারি কমিটি এবং টাস্ক ফোর্সেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন
বল্মীকি থাপার তার কর্মজীবনে ১৫০ টিরও বেশি সরকারি কমিটি এবং টাস্ক ফোর্সে সেবা দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ (National Board for Wildlife)ও অন্তর্ভুক্ত। ২০০৫ সালে, যখন সারিস্কা টাইগার রিজার্ভ থেকে বাঘের রহস্যময়ভাবে অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল, তখন ইউপিএ সরকার টাইগার টাস্ক ফোর্স গঠন করেছিল। এই দলে বল্মীকি থাপার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বল্মীকি থাপার উত্তরাধিকার
বল্মীকি থাপার তার জীবনে অনেক বই লিখেছেন, যেগুলিতে ভারতীয় বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে বাঘের অবস্থা এবং সংরক্ষণের পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে। তার বই এবং ডকুমেন্টারি আজও বন্যপ্রাণী প্রেমী এবং গবেষকদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ।
তাঁর বিশ্বাস ছিল যে বাঘ সংরক্ষণ শুধুমাত্র একটি প্রজাতি রক্ষা করা নয়, বরং পুরো বন এবং সেখানে বাস করা সকল প্রজাতির রক্ষা করা। তিনি তার পুরো জীবন বাঘ সংরক্ষণ এবং তাদের অধিকারের জন্য উৎসর্গ করেছেন।