অধ্যাপক আলী খানকে সুপ্রিম কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মিলেছে, কিন্তু তদন্ত চালু থাকবে। আদালত অভিব্যক্তির স্বাধীনতার কথা স্বীকার করেও মন্তব্যের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
অধ্যাপক আলী খান: অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী খান মহম্মদাবাদকে সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি আদালত এই মামলার তদন্তে কোনো বাধা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। আদালত আরও বলেছে যে, মামলার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করা হবে।
যদিও জামিনের সাথে সাথে আদালত কিছু তীব্র প্রশ্নও তুলেছে এবং এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, "অভিব্যক্তির স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু প্রতিটি কথা বলার একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে।"
সম্পূর্ণ ঘটনা কী?
অধ্যাপক আলী খানের উপর সম্প্রতি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি দেশের বর্তমান সংবেদনশীল পরিস্থিতির মধ্যে একটি টুইট করেছেন, যা "দেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে" বলে মনে করা হচ্ছে। এই টুইটকেই ভিত্তি করে তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয় এবং গ্রেফতার করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টে কপিল সিব্বল অধ্যাপকের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন
অধ্যাপকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিব্বল যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি আদালতকে বলেন যে, যে পোস্ট নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত একটি চিন্তা এবং তাতে কোন ধরণের অপরাধমূলক উদ্দেশ্য নেই।
সিব্বল বলেন, এই মন্তব্য ছিল যারা অযথা যুদ্ধের কথা বলছিল তাদের জন্য, রাষ্ট্র বা সরকারের বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য ছিল না।
আদালতের তীব্র মনোভাব
শুনানির সময় বিচারপতি সূর্যকান্ত কঠোর স্বরে জিজ্ঞাসা করেন যে, এই সময় এ ধরণের মন্তব্য কেন করা হলো? তার বক্তব্য ছিল, দেশ এখন একটি গুরুতর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নাগরিকদের উপর আক্রমণ হয়েছে। এই সময় যদি কেউ সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য সামাজিক বা রাজনৈতিক মন্তব্য করে, তাহলে এটি প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।
‘ডগ-হুইসলিং’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে
সুপ্রিম কোর্ট অধ্যাপকের ভাষা ও শব্দ নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, "মায়া ও ইঙ্গিত" এই ধরণের শব্দ ব্যবহার ইচ্ছাকৃতভাবে সাংকেতিক বার্তা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে, যাকে আজকের ভাষায় "ডগ-হুইসলিং" বলা হয়। এর অর্থ হল - এমন শব্দ ব্যবহার যা বাইরে থেকে সাধারণ দেখায় কিন্তু কোন নির্দিষ্ট গ্রুপের জন্য গোপন বা উসকানিমূলক বার্তা লুকিয়ে থাকে।
কপিল সিব্বলের যুক্তি: কোন অপরাধমূলক উদ্দেশ্য নেই
সিব্বল আরও বলেন, যদি বক্তব্য ১০ তারিখের পরও দেওয়া হত, তবুও তার তাৎপর্য একই থাকত। তিনি বলেন, এতে কোন অপরাধমূলক ইচ্ছা নেই। এটি মাত্র একটি চিন্তা, যা একজন দায়িত্বশীল নাগরিক প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও জানান যে, অধ্যাপক মহম্মদাবাদ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষিত এবং তার মন্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল সমাজকে একত্রিত করা, বিভক্ত করা নয়।
সুপ্রিম কোর্ট- অধিকারের কথা হয়, কর্তব্য কোথায়?
শেষ পর্যন্ত আদালত আরও বলেছে যে, আজকাল সবাই "অভিব্যক্তির স্বাধীনতা"র কথা বলে, কিন্তু কেউ "কর্তব্য"র কথা বলে না। ন্যায়ালয়ের মতে, প্রতিটি অধিকারের সাথে একটি দায়িত্বও জড়িত থাকে, এবং আজকের সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে সেই দায়িত্বকে উপেক্ষা করা যাবে না।
তদন্ত চালু থাকবে, SIT পর্যবেক্ষণ করবে
সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দিয়েছে যে, তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোন বাধা দেওয়া হবে না। পাশাপাশি SIT (বিশেষ তদন্ত দল) কে মামলার গভীর তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল নিশ্চিত করা যে, কোন নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তি না পায়, এবং যদি কেউ দোষী হয় তাহলে তাকে আইনের আওতায় যথাযথ শাস্তি দেওয়া হবে।