আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: মানবীয় ত্রুটি ও আবহাওয়া ছিল প্রধান কারণ

🎧 Listen in Audio
0:00

শ্বেত আবহাওয়া, অত্যধিক ওজন এবং ভুল টেকঅফ সেটিংস—যেমন ফ্ল্যাপস, থ্রাস্ট এবং ল্যান্ডিং গিয়ার—এর কারণে আহমেদাবাদ AI‑171 বোয়িং 787‑8 টেকঅফে ব্যর্থ হয়। ৮২৫ ফুট উচ্চতায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মানবীয় কনফিগারেশন ত্রুটিকে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: ২০১৫ সালের ১২ই জুন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন যাওয়ার পথে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171 (বোয়িং 787-8 ড্রিমলাইনার, রেজিস্ট্রেশন VT-ANB) টেকঅফের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনাটি ঘটে মেহানি নগরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, যেখানে ৩০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। এটি ভারতের বিমান চলাচল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

কী কনফিগারেশন ত্রুটি?

যখন একটি বিমান রানওয়ে থেকে উড়াল দেয়, তখন তাকে বেশ কয়েকটি সেটিংসের প্রয়োজন হয়—যেমন ফ্ল্যাপস, থ্রাস্ট, রোটেশন স্পিড এবং গিয়ার সেটিংস। এই সেটিংসগুলির যেকোনো একটিতে ত্রুটি হলে তাকে 'কনফিগারেশন ত্রুটি' বলা হয়।

উদাহরণস্বরূপ:

  • ফ্ল্যাপস সঠিক কোণে না থাকা
  • থ্রাস্ট (ইঞ্জিনের শক্তি) কম থাকা
  • সময়ের আগে বা পরে রোটেশন
  • টেকঅফের পর ল্যান্ডিং গিয়ার না তোলা

এই সব ছোটোখাটো ভুলগুলি টেকঅফকে ব্যর্থ করতে পারে, বিশেষ করে গরম আবহাওয়া এবং অত্যধিক ওজনের মতো পরিস্থিতিতে।

আহমেদাবাদের গরম এবং পরিস্থিতি দুর্ঘটনাকে আরও গুরুতর করে তুলেছে

দুর্ঘটনার সময় আহমেদাবাদের তাপমাত্রা ছিল ৪৩°C। এই তাপমাত্রায় বাতাস হালকা হয়, যার ফলে বিমানটি যথেষ্ট লিফট পায় না। এই ধরণের আবহাওয়ায় টেকঅফের জন্য ফ্ল্যাপস এবং থ্রাস্টের সেটিংস অত্যন্ত নিখুঁত হতে হবে। বিমানটি পুরোপুরি জ্বালানী নিয়ে ভর্তি ছিল কারণ এটি লন্ডন পর্যন্ত উড়ান ভরার কথা ছিল। এই কারণে এর ওজন প্রায় ২২৭ টন ছিল—যা বোয়িং 787-এর সক্ষমতার কাছাকাছি ছিল।

কী টেকঅফে গোলমাল হয়েছিল?

তদন্তে দেখা গেছে যে বিমানটি মাত্র ৮২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছিল এবং এর গতি ছিল ১৭৪ নট (প্রায় ৩২০ কিমি/ঘন্টা)। যদিও এই ওজনের জন্য 787 কে কমপক্ষে ২০০-২৫০ নট গতির প্রয়োজন। দুর্ঘটনার ঠিক আগের ভিডিওটি দেখায় যে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার নিচে ছিল। এর থেকে স্পষ্ট যে টেকঅফের পর প্রয়োজনীয় ক্লাইম্ব শুরু হয়নি।

ফ্ল্যাপস এবং থ্রাস্টে ত্রুটির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি

যদি ফ্ল্যাপস কম ব্যবহার করা হয় (যেমন Flaps 0), তাহলে লিফট তৈরি হয় না। এবং যদি অতিরিক্ত ফ্ল্যাপস (যেমন Flaps 20) ব্যবহার করা হয়, তাহলে ড্র্যাগ বৃদ্ধি পায় এবং গতি তৈরি হয় না। আহমেদাবাদ এর মতো গরম স্থানে ফ্ল্যাপসের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

থ্রাস্টেও ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্ভবত পাইলটরা ভুলক্রমে Derated Thrust নির্বাচন করেছিলেন অথবা ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (FMS)-এ ভুল তথ্য প্রবেশ করেছিল। এমনটি হলে ইঞ্জিন পুরো শক্তি দেয় না এবং বিমানটি বাতাসে উঠার আগেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

রোটেশন সময়ের আগে হয়েছিল?

রোটেশন হল সেই প্রক্রিয়া যেখানে বিমানের নাক উপরে তোলা হয় যাতে এটি বাতাসে উঠতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি নির্দিষ্ট গতিতে (Vr) হয়। যদি পাইলটরা এটি তাড়াতাড়ি করে থাকে, তাহলে বিমানটি যথেষ্ট গতি ধরতে পারেনি এবং বাতাসে স্থির থাকতে পারেনি। এটাই হতে পারে বিমানটি দ্রুত স্টল হয়ে যাওয়ার কারণ।

ল্যান্ডিং গিয়ার কেন তোলা হয়নি?

তদন্তে দেখা গেছে যে দুর্ঘটনার সময় ল্যান্ডিং গিয়ার নিচেই ছিল। এটি হয় ভুলক্রমে হয়েছে অথবা কোনো জরুরী অবস্থার কারণে পাইলটরা ইচ্ছাকৃতভাবে গিয়ার তুলেনি। এর ফলে বিমানের উপর ড্র্যাগ বেড়ে গেছে এবং এটি উচ্চতা নিতে পারেনি।

কী CRM (Crew Resource Management)-এ ত্রুটি হয়েছিল?

CRM অর্থ দুই পাইলটের মধ্যে সমন্বয়, যোগাযোগ এবং ক্রসচেকের প্রক্রিয়া। যদি ক্যাপ্টেন কোনো ভুল করে এবং কো-পাইলট তাকে থামায়নি, তাহলে এটিকে বড় ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কখনও কখনও অভিজ্ঞতাহীন বা জুনিয়র পাইলট সিনিয়রকে কিছু বলতে দ্বিধা করে, যা বিপজ্জনক হতে পারে।

কী অটোমেশনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ছিল?

বোয়িং 787-এর মতো আধুনিক বিমানে বেশিরভাগ কাজ অটোমেটেড সিস্টেম যেমন FMS করে। কিন্তু যদি এতে ভুল ইনপুট (যেমন ওজন বা তাপমাত্রা) প্রবেশ করা হয়, তাহলে পুরো আউটপুট ভুল হয়ে যায়। অনেক সময় তাড়াহুড়োয় পাইলটরা এই ডেটার পুনঃপরীক্ষা করে না, যার ফলে গুরুতর ত্রুটি হতে পারে।

৪৩°C তাপমাত্রায় পাইলটদের শারীরিক এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। দীর্ঘ সময়ের ডিউটি, ডিহাইড্রেশন এবং সময়ের চাপ সিদ্ধান্তের গুণমানের উপর প্রভাব ফেলে। যদিও পাইলটরা অভিজ্ঞ ছিলেন, কিন্তু কখনও কখনও ছোট ভুলও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।

Leave a comment