ভারতে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য SEZ নিয়মে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারত সরকার সেমিকন্ডাক্টর এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) -এর নিয়মে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এখন কোম্পানিগুলো ছোট জমিতেও কারখানা স্থাপন করতে পারবে, যা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অভিযানকে আরও শক্তিশালী করবে।

মেড ইন ইন্ডিয়া: ভারত সরকার দেশে সেমিকন্ডাক্টর এবং ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনকে শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ)-এর নিয়মে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এই নতুন নিয়মগুলি বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তৈরি করা কোম্পানিগুলির জন্য তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে ছোট জমিতেও কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে। এই উদ্যোগ ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অভিযানকে ব্যাপক সমর্থন দেবে এবং ভারত ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশ্বমানচিত্রে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করবে।

SEZ নিয়মে পরিবর্তন: জমির প্রয়োজনীয়তায় ব্যাপক হ্রাস

পূর্বে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলির জন্য কমপক্ষে ৫০ হেক্টর জমির প্রয়োজন ছিল। এই সীমা অনেক নবীন কোম্পানির জন্য বেশ বড় বোঝা ছিল, বিশেষ করে সেই স্টার্টআপ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলির জন্য যারা বড় জমির ব্যবস্থা করতে পারত না। এখন সরকার এই বাধা দূর করে নিয়মে সংশোধন করেছে, যার ফলে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য ন্যূনতম জমির প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে ১০ হেক্টরে নামিয়ে আনা হয়েছে।

শুধুমাত্র সেমিকন্ডাক্টর নয়, বহু-উৎপাদন SEZ-এর জন্যও ন্যূনতম জমির চাহিদা ২০ হেক্টর থেকে কমিয়ে ৪ হেক্টরে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই পদক্ষেপ দেশের বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রযোজ্য হবে, যার মধ্যে রয়েছে গোয়া, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা, মেঘালয়, সিকিম, লাদাখ, পুডুচেরি, আন্দামান-নিকোবর, লক্ষদ্বীপ, দমন-দিউ এবং দাদরা-নগর হাভেলি।

এই পরিবর্তনের ফলে ছোট জমিতেও সেমিকন্ডাক্টর কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে, যা বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলির জন্য এই পরিবর্তন অত্যন্ত উপকারী হবে, কারণ তাদের আর বড় জমির চিন্তা করতে হবে না।

ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির উৎপাদনে ছাড় এবং সুবিধা

সরকার কেবলমাত্র জমির সীমা কমিয়েছে তাই নয়, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির উৎপাদন সংক্রান্ত নিয়মাবলীও সহজ করেছে। স্মার্ট ওয়াচ, ইয়ারবডস, ডিসপ্লে মডিউল, ব্যাটারি, ক্যামেরা মডিউল, প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড (PCB), মোবাইল এবং আইটি হার্ডওয়্যার ইত্যাদি ছোট অংশগুলিকে এখন ইলেকট্রনিক উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

এই পদক্ষেপের ফলে এইসব পণ্যের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি এবং লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ হবে, যার ফলে উৎপাদনের গতি বাড়বে এবং খরচ কমবে। এর ফলে ভারতে এই উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশী আমদানির উপর নির্ভরতা কমবে।

মাল স্টোরেজ এবং বিক্রয়ের নতুন ছাড়

কোম্পানিগুলিকে এখন মাল স্টোরেজ এবং বিক্রয়ের জন্যও অধিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের উৎপাদন উপকরণ ভারতেই স্টোর করতে পারে এবং হয় সরাসরি রপ্তানি করতে পারে অথবা কর প্রদান করে দেশীয় বাজারে বিক্রিও করতে পারে। এই সুবিধার ফলে সাপ্লাই চেইনের শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসা করার প্রক্রিয়া সহজ হবে।

সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ভারতের ভবিষ্যৎ

শিল্প বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ভারতের সেমিকন্ডাক্টর বাজার বর্তমানে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলারের, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের উপরে পৌঁছাতে পারে। এই বৃদ্ধি স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রিক যানবাহন, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি এবং প্রতিরক্ষা যন্ত্রপাতির ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সম্পর্কিত। বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইনের অনিশ্চয়তা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে, ভারতে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকে উৎসাহিত করা জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরতার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

মেক ইন ইন্ডিয়াকে নতুন উড্ডয়ন

কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হবে। এটি কেবলমাত্র বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে তাই নয়, দেশীয় কোম্পানিগুলিকেও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ দেবে। ছোট জমিতে কারখানা স্থাপনের অনুমতির ফলে রাজ্যগুলিতে শিল্প উন্নয়ন হবে এবং গ্রামীণ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি, দেশে প্রযুক্তিগত দক্ষতার উন্নয়নও হবে, যা ভবিষ্যতে আরও বেশি উদ্ভাবন এবং উৎপাদন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করবে।

Leave a comment