ভারত-আমেরিকা কৃষি বাণিজ্য: কৃষকদের স্বার্থে সতর্কতা অবলম্বন

🎧 Listen in Audio
0:00

আমেরিকার কাছে ভারতের প্রধান কৃষি রপ্তানি পণ্য যেমন চিংড়ি, বাসমতি চাল, মশলা, প্রক্রিয়াজাত শস্য এবং অন্যান্য মূল্যবর্ধিত পণ্যগুলির প্রতি আগ্রহ রয়েছে।

নয়াদিল্লি: ভারত ও আমেরিকার মধ্যে চলমান কৃষি বাণিজ্য আলোচনায় কৃষকদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান স্পষ্ট করে বলেছেন, এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিতে কোনও সিদ্ধান্তই অন্ধভাবে নেওয়া হবে না, বরং সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতির গভীর মূল্যায়নের পরেই চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। এদিকে, আমেরিকা ভারতের কৃষি বাজারে আরও ভালো অ্যাক্সেস চায়, অন্যদিকে ভারত তার কৃষকদের স্বার্থ ও দেশীয় উৎপাদকদের সুরক্ষার প্রতি সম্পূর্ণ সতর্ক।

বাণিজ্য আলোচনায় কৃষকদের সুরক্ষা প্রাথমিক

আমেরিকার সাথে চলমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনায় ভারতের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য শুধু বাণিজ্য চুক্তি করা নয়, বরং আমাদের কৃষকদের সুরক্ষা করাও। আমরা কোনও ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেব না। প্রতিটি দিক বিবেচনা করেই আমরা এগিয়ে যাব।

চৌহান বলেছেন যে ভারত আমেরিকার সাথে কৃষি বাণিজ্যের সম্ভাবনার উপর আলোচনা করছে, কিন্তু কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা ছাড়া এই আলোচনা সম্পূর্ণ হবে না। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের বিস্তৃত দিকগুলি বিবেচনা করেই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ভারত-আমেরিকা কৃষি বাণিজ্য: বর্তমান অবস্থা

নীতি আয়োগের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের মতে, ২০২৪ সালে শেষ হওয়া তিন বছরের সময়কালে ভারত আমেরিকাকে প্রায় ৫.৭৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কৃষি পণ্য রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে, আমেরিকা থেকে ভারতে কৃষি ও সম্পর্কিত পণ্য আমদানি হয়েছে প্রায় ২.২২ বিলিয়ন ডলারের। ভারতের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে চিংড়ি, বাসমতি চাল, মশলা, প্রক্রিয়াজাত শস্য এবং অন্যান্য মূল্যবর্ধিত পণ্য।

অন্যদিকে, আমেরিকা ভারতে ভুট্টা, সয়াবিন এবং পশু খাদ্যের মতো কৃষি পণ্য রপ্তানি করতে চায়। কিন্তু আমেরিকাকে ভারতীয় বাজারে প্রবেশের জন্য উচ্চ শুল্ক (গড়ে ৩৯-৫০ শতাংশ) -এর সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যা চুক্তির প্রধান বাধা হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

উচ্চ শুল্ক ও বাজার অ্যাক্সেস নিয়ে বিবাদ

আমেরিকার দাবি, ভারতীয় কৃষি পণ্যের উপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক কমানো উচিত যাতে তাদের পণ্য ভারতের বাজারে আরও ভালো অ্যাক্সেস পায়। ভারতে কৃষি ও দুগ্ধ খাত খুলে দেওয়া নিয়ে ব্যাপক সতর্কতা রয়েছে কারণ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় কৃষকদের বিশ্ববাজারের দামের অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা জরুরি। কৃষিমন্ত্রী চৌহান জোর দিয়ে বলেছেন যে ভারত কোনও বাণিজ্য চুক্তিতে কৃষকদের স্বার্থের সাথে আপোষ করবে না।

তিনি বলেছেন, আমরা বাণিজ্যের সম্পূর্ণ চিত্র দেখি, শুধু এক একটি পণ্যের প্রেক্ষাপটে নয়। আমাদের প্রাথমিকতা হবে যাতে আমাদের কৃষকদের কোনও ক্ষতি না হয়।

চুক্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্তের আশা, কিন্তু সতর্কতা প্রয়োজন

ভারত ও আমেরিকার আলোচকরা এই দ্বিপাক্ষিক কৃষি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের খসড়া ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করছেন। এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে কৃষি বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের জন্য এই চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক লাভ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি দেশের কৃষিখাতের আত্মনির্ভরশীলতা এবং গ্রামীণ অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কৃষকদের উদ্বেগ ও সরকারের ভূমিকা

গ্রামীণ এলাকায় ভারতীয় কৃষি উৎপাদকদের নিয়ে ব্যাপক সংবেদনশীলতা রয়েছে। বাজার উন্মুক্ত হলে যদি দেশীয় উৎপাদকদের ক্ষতি হয়, তাহলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মানের উপর। তাই সরকার কৃষকদের স্বার্থ মাথায় রেখে বাণিজ্য আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেছেন, আমরা জানি কৃষকদের উদ্বেগ কী, এবং আমরা তাদের কথা সম্পূর্ণ সম্মান করি। কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে এই চুক্তি সম্ভব হবে না।

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে কৃষি বাণিজ্য নিয়ে এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনা দুই দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে শুধু রপ্তানিই বাড়বে না, বরং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও কৃষি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

Leave a comment