মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধ্বংস হলো ৪.২৮ কোটি টাকার ভারতীয় আম

🎧 Listen in Audio
0:00

নয়া দিল্লি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারত থেকে পাঠানো আমের ১৫টি চালান নথিপত্রে ত্রুটির কারণে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই আমের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪.২৮ কোটি টাকা (৫০০,০০০ ডলার)। এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে ফল রপ্তানি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সতর্কতার গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে।

সম্পূর্ণ ঘটনা কী?

ভারত থেকে বিমানপথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো আমের এই চালান ৮ ও ৯ মে নবী মুম্বাইয়ের একটি বিকিরণ (irradiation) কেন্দ্রে কীটনাশক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। বিকিরণ প্রক্রিয়া একটি বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি, যেখানে ফলগুলিকে সীমিত পরিমাণে বিকিরণে রেখে তাতে থাকা কীটপতঙ্গ ধ্বংস করা হয়, যার ফলে তাদের সংরক্ষণকাল বাড়ে।

তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো ও অ্যাটলান্টা বিমানবন্দরে মার্কিন কর্মকর্তারা এই আমের চালানগুলিকে আটকে দেয়। কারণ ছিল – বিকিরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কিত নথিপত্রে, বিশেষ করে PPQ203 ফরমে, অনিয়ম।

নথিপত্রে কী ত্রুটি পাওয়া গেছে?

মার্কিন কৃষি বিভাগ (USDA) অনুযায়ী, এই চালানগুলিতে ব্যবহৃত PPQ203 ফরম ভুলভাবে জারি করা হয়েছিল। এই ফরম কেবলমাত্র USDA কর্মকর্তার উপস্থিতি ও পর্যবেক্ষণের পরেই প্রমাণিত করা যায়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বিকিরণ প্রক্রিয়া মান অনুযায়ী সম্পূর্ণ হয়নি।

তবে, ভারতীয় রপ্তানিকারকরা এই দাবি অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, যদি প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পূর্ণ না হতো, তাহলে এই ফরম জারি হতো না এবং চালান বিমানবন্দরে তোলার অনুমতিও দেওয়া হতো না। তারা দাবি করেছে, ত্রুটি বিকিরণ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে হয়েছে, কিন্তু ক্ষতি তাদেরকেই বহন করতে হচ্ছে।

আম ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হয়েছে?

যেহেতু আম দ্রুত নষ্ট হওয়া ফল এবং তা ভারতে ফিরিয়ে পাঠানোর খরচ অনেক বেশি, তাই রপ্তানিকারকরা আমের চালানগুলিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে তাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। USDA কর্তৃক জারি করা নোটিশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে চালানগুলিকে ফিরিয়ে পাঠাতে হবে অথবা ধ্বংস করতে হবে। মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।

এই ঘটনা থেকে কী শিক্ষা পাওয়া যায়?

এই ঘটনা দেখায় যে উচ্চমানের পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কেবলমাত্র গুণগত মান নয়, সঠিক ও নির্ভুল নথিপত্রও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরণের ঘটনায় ভারতকে কেবলমাত্র রপ্তানি প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করে তুলতে হবে, নয়, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র ও কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে।

ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। কিন্তু এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে কৃষি পণ্য বাণিজ্যের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরেছে। যদি সময় থাকতে সংস্কার না করা হয়, তাহলে এটি ভবিষ্যতে ভারতের ফল রপ্তানির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a comment