অভিনেত্রী দিব্যাঙ্কা ত্রিপাঠী টেলিভিশনের জনপ্রিয় তারকা, যিনি ‘বনূঁ ম্যাঁ তেরি দুলহান’ এবং ‘য়ে হ্যায় মোহাব্বতেন’ এর মতো সুপারহিট ধারাবাহিকের মাধ্যমে দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছেন। তার অভিনয় দর্শকদের দ্বারা ব্যাপক প্রশংসিত।
বিনোদন: টেলিভিশন জগতের খ্যাতনামা অভিনেত্রী দিব্যাঙ্কা ত্রিপাঠী তার পেশাদার জীবনে অনেক সুপারহিট ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন, কিন্তু সম্প্রতি তিনি এমন একটি তথ্য প্রকাশ করেছেন যা তার ভক্তদের জন্য চমকপ্রদ হতে পারে। একসময় দিব্যাঙ্কা জনপ্রিয় ‘ক্রাইম পেট্রোল’ ধারাবাহিকটি উপস্থাপনা করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি নিজেই এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং বলেছেন কিভাবে এই ধারাবাহিকটি তার মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছিল।
‘ক্রাইম পেট্রোল’ উপস্থাপনার মানসিক প্রভাব
দিব্যাঙ্কা ত্রিপাঠী সম্প্রতি কমেডিয়ান ভারতী সিং এবং তার স্বামী হর্ষ লিম্বাচিয়ার পডকাস্টে তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলেছেন। দিব্যাঙ্কা জানিয়েছেন, যখন তিনি ‘ক্রাইম পেট্রোল’ উপস্থাপনা করছিলেন, তখন তার জীবন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল। ধারাবাহিকটিতে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ (Women Against Crime) ভিত্তিক একটি অংশ ছিল, যেখানে তিনি প্রতিটি অপরাধের ঘটনা পড়ে উপস্থাপনা করতেন। প্রতিটি ঘটনার সাথে নতুন ঘটনা, নতুন বিপর্যয় যুক্ত ছিল, যার ফলে রাতে তাকে খারাপ স্বপ্ন দেখতে হতো।
দিব্যাঙ্কা বলেছেন, “যখন আমি ‘ক্রাইম পেট্রোল’ উপস্থাপনা করছিলাম, তখন যে ঘটনাগুলি আমাকে বলা হতো, সেগুলি এতটা ভয়ঙ্কর ছিল যে আমি সেই ঘটনাগুলিকে আমার কল্পনায় ধারণ করে ফেলতাম। একজন নারী বাড়ি থেকে বের হয় এবং তারপর এমন কিছু ঘটে যা কেবলমাত্র হৃদয়বিদারক নয়, বরং তা জানার পর আমার মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল।”
রাতে যখন আমি স্ক্রিপ্ট পড়তাম, তখন আমার খারাপ স্বপ্ন আসত এবং পরের দিন মাথায় তীব্র ব্যথা নিয়ে শুটিংএ যেতাম। এটি ৩-৪ মাস ধরে চলে এবং এই সময় আমি বেশ মানসিক চাপ অনুভব করেছি।
বিবেক দাহিয়ার সহায়তা
দিব্যাঙ্কা আরও জানিয়েছেন যে তার স্বামী বিবেক দাহিয়া এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে তাকে অনেক সাহায্য করেছেন। বিবেক তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে উপস্থাপনার সময় একজন ব্যক্তিকে ‘সুইচ অন’ এবং ‘সুইচ অফ’ করতে হবে। অর্থাৎ, যখন তিনি শোতে কাজ করছিলেন, তখন সেই ঘটনাগুলিতে সম্পূর্ণরূপে নিমগ্ন হয়ে পড়তেন, কিন্তু শুটিং শেষ হওয়ার পর তার মানসিক অবস্থাকে স্বাভাবিক করার জন্য তাকে খুবই প্রয়োজন ছিল।
দিব্যাঙ্কা এও বলেছেন যে বিবেকের সহায়তা এবং সঠিক নির্দেশনার পর তিনি এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন এবং এখন তিনি তার কর্মজীবনে এই অভিজ্ঞতাকে একটি শিক্ষা হিসাবে দেখেন।
দিব্যাঙ্কা ত্রিপাঠীর কর্মজীবন
দিব্যাঙ্কা ত্রিপাঠীর কর্মজীবনের সূচনা ‘ইন্ডিয়াজ বেস্ট সিনেস্টার কি খোজ’ দিয়ে হয়েছিল, কিন্তু ‘বনূঁ ম্যাঁ তেরি দুলহান’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে তিনি স্বীকৃতি পান। এর পর ‘য়ে হ্যায় মোহাব্বতেন’ এর মতো সুপারহিট ধারাবাহিকেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যাতে তার অভিনয় সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও দিব্যাঙ্কা ‘খানা খাজানা’, ‘নচলে বে উইথ সরোজ খান’, ‘জলওয়া’, ‘কোন হ্যায়’, ‘মিঃ অ্যান্ড মিসেস শর্মা ইলাহাবাদওয়ালে’, ‘জোর কা ঝটকা: টোটাল ওয়াইপআউট’, ‘চিন্টু চিনকি ওর এক বড়ি সী লাভ স্টোরি’, ‘আদালত’, ‘তেরি মেরি লাভ স্টোরি’, ‘রামায়ণ’, ‘কমেডি সার্কাস’, ‘নচ বলিয়ে ৮’, ‘দ্য ভয়েস ৩’, ‘খতরোঁ কে খিলাড়ি ১১’ এবং ‘ক্রাইম পেট্রোল’ এর মতো আরও অনেক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন।
দিব্যাঙ্কার জন্য এই সব অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু ‘ক্রাইম পেট্রোল’-এর সময় তার মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত হয়েছিল, যা দেখায় যে কোনও অপরাধভিত্তিক ধারাবাহিক উপস্থাপনা করার সময় কেবলমাত্র গল্পের উপরই নয়, বরং সেই ধারাবাহিকের মানসিক ও মানসিক প্রভাবও বুঝতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিংয়ের প্রভাব
এছাড়াও, দিব্যাঙ্কা ট্রোলিং সম্পর্কেও কথা বলেছেন। ‘ক্রাইম পেট্রোল’ উপস্থাপনা করার সময় তাকে ব্যাপকভাবে ট্রোল করা হয়েছিল, কারণ লোকেরা তার উপস্থাপনার স্টাইল এবং তার উপস্থাপিত গল্প নিয়ে সমালোচনা করেছিল। কিন্তু দিব্যাঙ্কা এই ট্রোলিংকে হালকাভাবে নিয়েছিলেন এবং তার আত্মবিশ্বাস বজায় রেখেছিলেন।
আজ দিব্যাঙ্কা তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলে, যার ফলে এই বার্তা যায় যে মানসিক স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। তিনি একটি উদাহরণ উপস্থাপন করেন যে কিভাবে কোনও পেশাদার চাপ এবং ট্রোলিং সত্ত্বেও, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং সমর্থনের মাধ্যমে মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।