টাপসী পান্না কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মিশা আগরওয়ালের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ার বর্ধমান চাপ এবং এর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বলিউড অভিনেত্রী টাপসী পান্না কেবল তাঁর চলচ্চিত্রগুলির জন্যই পরিচিত নন, তিনি সমাজে ঘটে যাওয়া সংবেদনশীল ঘটনাগুলি সম্পর্কেও খোলামেলাভাবে মতামত প্রকাশ করেন। সম্প্রতি তিনি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার মিশা আগরওয়ালের আত্মহত্যার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মিশা ২৫ বছর বয়সে জীবন থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং তাঁর পরিবারের দাবি, ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার্স কমে যাওয়ার ভয়ে তিনি এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
টাপসী পান্নার আবেগঘন প্রতিক্রিয়া
টাপসী পান্না ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে একটি আবেগঘন পোস্ট শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি এবং এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে তাঁর সবসময়ই এই আশঙ্কা ছিল যে সোশ্যাল মিডিয়ার এই কৃত্রিম জগৎ মানুষকে বাস্তব জীবন এবং সম্পর্ক থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে।
অভিনেত্রীর মতে, মানুষ এখন লাইক, ফলোয়ার্স এবং প্রশংসার পিছনে এতটাই পাগল হয়ে উঠেছে যে তারা আসল ভালোবাসা এবং সম্পর্কগুলি ভুলে যাচ্ছে। টাপসী আশঙ্কা করছেন যে কোনওদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া ভার্চুয়াল ভালোবাসাই মানুষের জীবনের কারণ হয়ে উঠবে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে পাওয়া ফলোয়ার্সের সংখ্যা এবং প্রশংসার আগ্রহ এতটাই বেড়ে গেছে যে মানুষ এখন তাদের আসল আনন্দগুলি চিনতেই ভুলে গেছে। এই ভেবে তাঁর ভয় লাগে যে একদিন মানুষ ভার্চুয়াল ভালোবাসার পিছনে এতটাই হারিয়ে যাবে যে বাস্তব জীবনের গুরুত্বই শেষ হয়ে যাবে।
মিশা আগরওয়াল—ফলোয়ার্স কমে গেলে, জীবন শেষ মনে করেছিলেন
মিশা আগরওয়াল একজন উদীয়মান কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ছিলেন, যিনি ইনস্টাগ্রামে বেশ সক্রিয় ছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল এক মিলিয়ন ফলোয়ার্স। তাঁর পরিবার জানিয়েছে যে মিশার ফোনের লক স্ক্রিনেও এই লক্ষ্য লেখা ছিল—"১ মিলিয়ন ফলোয়ার্স"।
পরিবারের মতে, যখন তাঁর ফলোয়ার্স কমতে শুরু করে, মিশা ডিপ্রেশনে চলে যান। সে অনেক চিন্তিত থাকত। প্রায়শই তাঁর জেঠামাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করত এবং বলত—"আমার ফলোয়ার্স কমে গেলে আমি কি করবো? আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।"
পরিবার বারবার তাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিল যে ইনস্টাগ্রাম শুধুমাত্র জীবনের একটি অংশ, পুরো জীবন নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সে এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পায়নি এবং ২৬ এপ্রিল আত্মহত্যা করে। তার ২৫তম জন্মদিন মাত্র দুদিন পরে ছিল।
সোশ্যাল মিডিয়ার অন্ধ দৌড়—এক নতুন উদ্বেগ
মিশার মৃত্যু আবারও সোশ্যাল মিডিয়ার অন্ধ দৌড় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব উন্মোচন করেছে। এক সময় মানুষ তাদের ক্যারিয়ারের জন্য পরিশ্রম করত, পরিবার এবং সমাজে পরিচিতি তৈরি করতে চাইত। কিন্তু আজকের দিনে অনেক তরুণের জন্য ইনস্টাগ্রামের ফলোয়ার্সের সংখ্যাই পরিচয় হয়ে উঠেছে।
তাৎক্ষণিক প্রশংসা, লাইক, শেয়ার এবং মন্তব্য অনেকের মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করছে। যখন এই জিনিসগুলি কমে যায়, অনেকে নিজেদেরকে ব্যর্থ মনে করতে শুরু করে, যেমনটা মিশার ক্ষেত্রে ঘটেছে।
টাপসী পান্না: ইনস্টাগ্রাম লাইক নয়, আসল সম্পর্ক থেকে জীবন তৈরি হয়
অভিনেত্রী টাপসী পান্না সম্প্রতি একটি আবেগঘন পোস্টের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ার জগতের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে আজকাল অনেকে ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার্স এবং লাইককেই সবকিছু মনে করেন। বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায় এই আभासी জগতে এতটাই হারিয়ে গেছে যে আসল সম্পর্ক এবং জীবনের গুরুত্ব ভুলে যেতে শুরু করেছে।
টাপসী স্পষ্ট করে বলেছেন যে ভার্চুয়াল ভালোবাসা এবং প্রশংসার ক্ষুধা মানুষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তুলছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া ভালোবাসা আসল নয়, এবং এটি আপনাকে আপনার চারপাশে থাকা আসল ভালোবাসা, সম্পর্ক এবং আত্মবিশ্বাস থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে।
তাঁর মতে, জীবনের আসল মূল্য ইনস্টাগ্রামের সংখ্যায় নয়, বরং আপনার অভিজ্ঞতা, সম্পর্ক এবং নিজের সাথে জড়িত আনন্দে। টাপসীর এই কথা আজকের সময়ের প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীকে ভাবতে বাধ্য করে।