ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশের প্রভাব এখন বিনোদন জগতেও স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীরের পাহলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত সরকার কঠোর অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানী শিল্পী ও তাদের কন্টেন্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
পাকিস্তানী অভিনেত্রী হানিয়া আমির: জম্মু-কাশ্মীরের পাহলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তান সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও শো-গুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পাকিস্তানী তারকাদের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এখন ভারতে পাকিস্তানী শো-গুলির সম্প্রচারও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ভারতে পাকিস্তানী অভিনেতা ও তাদের নাটকের বেশ বড় একটা ভক্ত অনুসারী ছিল এবং এই শো-গুলি ভারতীয় দর্শকদের দ্বারা অত্যন্ত পছন্দ করা হত। এই তারকাদের মধ্যে পাকিস্তানী অভিনেত্রী হানিয়া আমিরের নামও রয়েছে, যাকে ভারতে অনেকেই পছন্দ করতেন।
ভারতে হানিয়া আমিরের ইন্সটাগ্রাম বন্ধ, কিন্তু ভক্তদের উৎসাহ অটুট
পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হানিয়া আমিরের ভারতে ভক্তদের সংখ্যা কোনও বলিউড তারকার থেকে কম নয়। তাঁর ‘মেরে হামসফর’, ‘কবি মেই কবি তুম’, ‘ইশকিয়া’ এবং ‘দিলরুবা’ ধারাবাহিকগুলি ভারতে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভারতে তাঁর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভক্তরা হতাশ হয়েছিলেন।
যদিও প্রযুক্তির ব্যবহার করে ভক্তরা পথ খুঁজে পেয়েছেন। ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করে তারা আবারও হানিয়া আমিরের ইন্সটাগ্রাম পোস্টগুলিতে প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। একজন ভক্ত এমনকি লিখেছেন, ‘টেনশন করবেন না, আমরা ভিপিএন লাগিয়ে এসেছি’। এই মন্তব্যে হানিয়া আমির নিজেকেও রোখতে পারেননি এবং উত্তরে লিখেছেন – ‘রোঁদে দিব’। তাঁর এই মধুর ও আবেগঘন প্রতিক্রিয়া আবারও ভক্তদের মন জয় করেছে।
দিলজিৎ এর ছবিও বন্ধ, বলিউড অভিষেকে বিরতি
হানিয়া আমির কেবল পাকিস্তানী ধারাবাহিকের জন্যই নয়, ভারতেও অভিনয় অভিষেকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি পাঞ্জাবি সুপারস্টার দিলজিৎ দোসান্ঝের সাথে একটি ছবি সাইন করেছিলেন, যার জন্য ভক্তরা অত্যন্ত উৎসাহিত ছিলেন। কিন্তু ভারত সরকারের সাম্প্রতিক নীতির পর এখন সেই ছবিটিও ঠান্ডা বাস্তবে চলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। হানিয়ার ভারতে অভিনয় জীবন শুরু হওয়ার আগেই থেমে গেল।
বাদশাহর সাথে বন্ধুত্ব, গুঞ্জন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে
হানিয়া আমিরের ভারতীয় র্যাপার বাদশাহর সাথে বন্ধুত্বও বেশ আলোচনায় ছিল। উভয়কেই একসাথে মজা করতে ও ভিডিও শেয়ার করতে দেখা গিয়েছে। ইন্সটাগ্রাম রিলস, মিউজিক ইভেন্ট ও কনসার্টে তাদের রসায়ন ভক্তদের খুব পছন্দ হয়েছিল। এই বন্ধুত্ব নিয়ে প্রেমের গুজবও ছড়িয়ে পড়েছিল, যদিও পরে উভয়েই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে তারা শুধুমাত্র ভালো বন্ধু।
দিলজিৎ দোসান্ঝের একটি লাইভ কনসার্টের সময় হানিয়া আমিরকে মঞ্চে ডাকা হয়েছিল এবং দিলজিৎ নিজেই তাঁকে দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই মুহূর্তটিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল।
ইন্সটাগ্রাম নিষিদ্ধের তালিকায় অনেক বড় নাম
হানিয়া আমির একমাত্র নন যাঁর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ভারতে বন্ধ করা হয়েছে। মাওরা হোকেন, মাহিরা খান, সাজ্জাল আলী, ফওয়াদ খান, আলী যাফর এবং আতিফ আসলাম সহ অনেক জনপ্রিয় পাকিস্তানী শিল্পী এখন ভারতে ডিজিটালভাবে ‘অদৃশ্য’ হয়ে গেছেন। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতে পাকিস্তানী কন্টেন্টের ব্যবহারের উপর গভীর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পাকিস্তানী নাটক দেখার সংখ্যা ছিল বেশি।
ভক্তদের ভালোবাসা এখনও অটুট
যদিও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিজের জায়গায়, কিন্তু ভক্তদের ভালোবাসাকে কোনো নিষেধাজ্ঞা থামাতে পারেনি। ভিপিএন-এর মতো মাধ্যমের মাধ্যমে ভক্তরা তাদের প্রিয় শিল্পীদের সাথে যুক্ত থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। এবং হানিয়া আমিরের মতো তারকাদের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট যে তাদেরও এই দূরত্বের দুঃখ হচ্ছে। এই পুরো ঘটনাটি আবারও দেখিয়ে দিয়েছে যে সীমান্তগুলি হৃদয়কে থামাতে পারে না এবং যেখানে ইচ্ছা আছে, সেখানে পথও বের হয়ে আসে।