হরিয়ালী তীজ ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে একটি বিশেষ স্থান ধারণ করে। এই ব্রত শ্রাবণ মাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথিতে পালিত হয় এবং ২০২৫ সালে এই পর্ব ২৭ জুলাই, রবিবার পালিত হবে। বিবাহিতা বা বিবাহের প্রস্তুতির মধ্যে থাকা নারীদের জন্য এই ব্রত অত্যন্ত শুভ ও ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়। যদি আপনি এ বছর প্রথমবার হরিয়ালী তীজের ব্রত পালন করতে যাচ্ছেন, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানে পূজার সামগ্রী থেকে শুরু করে ব্রতবিধি ও নিয়মাবলী পর্যন্ত সম্পূর্ণ তথ্য সহজ ও ভক্তিপূর্ণ ভাবে দেওয়া হয়েছে।
হরিয়ালী তীজের গুরুত্ব
হরিয়ালী তীজ ব্রত দেবী পার্বতীর তপস্যা, সংকল্প ও শিবের সাথে বিবাহের কাহিনীর সাথে জড়িত। এই দিনে নারীরা দেবী পার্বতীর মতো কঠোর ব্রত পালন করে এবং ভগবান শিবের সাথে দাম্পত্য সুখ ও সৌভাগ্য লাভের জন্য প্রার্থনা করে। এই পর্ব হরিয়ালি, প্রেম ও ভক্তির প্রতীক।
হরিয়ালী তীজ ২০২৫-এর তিথি ও শুভ মুহূর্ত
- ব্রত তিথি: ২৭ জুলাই ২০২৫ (রবিবার)
- তৃতীয়া তিথি আরম্ভ: ২৬ জুলাই রাত ১০:৪১ টা
- তৃতীয়া তিথি সমাপ্তি: ২৭ জুলাই রাত ১০:৪১ টা
পূজার সামগ্রী
প্রথমবার ব্রত পালনকারী নারীদের জন্য সামগ্রীর সম্পূর্ণ ও সঠিক হওয়া জরুরী। নীচে হরিয়ালী তীজের পূজার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা দেওয়া হল:
- সবুজ রঙের বস্ত্র
- ১৬ প্রকার শৃঙ্গার সামগ্রী
- মেহেদী (হাতে লাগানো অপরিহার্য)
- বেলপাতা, ধতুরা, আকের ফুল
- কেলার পাতা
- কাঁচা সুতা (মাউলি), জানেউ
- পূজার চৌকি, কলস, নারকেল (জটাসহ)
- চন্দন, অক্ষতা, ঘি, কাপুর, ধূপবাতি
- দুধ, দই, মধু, মিশ্রী (পঞ্চামৃতের জন্য)
- গঙ্গাজল
- ভগবান শিব-পার্বতীর মূর্তি বা ছবি
- মিষ্টান্ন, ফল, সুপারী
- দক্ষিণা, ব্রত কথার বই
- মাচিস, দীপক ইত্যাদি
প্রথমবার ব্রত পালনকারী নারীরা এই নিয়মগুলো অবশ্যই জানবেন
১. নিরজলা ব্রত পালন করুন
হরিয়ালী তীজের ব্রত নিরজলা (পানি ছাড়া) পালন করা হয়। তবে যদি স্বাস্থ্যগত কারণে সম্ভব না হয়, তাহলে ফলাহার বিকল্প আছে।
২. সকালে স্নান করে শৃঙ্গার করুন
ব্রতী নারীদের এই দিন বিশেষ শৃঙ্গার করা উচিত। ১৬ প্রকার শৃঙ্গার সম্পূর্ণ হওয়া উচিত এবং সবুজ বস্ত্র পরা অতি শুভ বলে মনে করা হয়।
৩. মেহেদী অপরিহার্য
ব্রত পালনের একদিন আগে বা সেদিনই মেহেদী লাগানো শুভ বলে মনে করা হয়। এটি সুহাগের প্রতীক বলে মনে করা হয়।
৪. শিব-পার্বতীর পূজা করুন
পূজায় দেবী পার্বতীকে প্রধান করে স্মরণ করে শিবজীর সাথে আরাধনা করুন। মা পার্বতীকে শাড়ি, চুড়ি এবং সুহাগের সামগ্রী অর্পণ করুন।
৫. ব্রত কথা পড়া ভুলবেন না
হরিয়ালী তীজের ব্রত কথা অবশ্যই পড়তে হবে। এটি ব্রতের গুরুত্ব এবং পার্বতী মাতার তপস্যাকে বোঝার মাধ্যম।
৬. চন্দ্রদর্শন ও অর্ঘ্য
রাত্রে চন্দ্রোদয়ের পর তাকে অর্ঘ্য দিয়ে ব্রতের পারণ করুন। সে সময় মা পার্বতীর কাছে দীর্ঘায়ু, প্রেম ও সুখী দাম্পত্য জীবনের কামনা করুন।
প্রথম তীজে কি কি করবেন না
- স্নান ও শুদ্ধতা ছাড়া পূজা করবেন না।
- ব্রতের দিন নখ কাটা, চুল কাটা বা চুল ধোয়া নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়।
- ব্রতের সময় কারো সাথে ঝগড়া বা অপশব্দ ব্যবহার করবেন না।
- প্রথমবার তীজ ব্রতে হালকা মনে বা মজার জন্য ব্রত পালন করা উচিত নয়। এই ব্রত সম্পূর্ণ নিষ্ঠা, সংযম ও ভক্তি দিয়ে করা হয়।
হরিয়ালী তীজ ও পরিবেশ
হরিয়ালী তীজের সরাসরি সম্পর্ক প্রকৃতির সাথেও আছে। শ্রাবণ মাস হরিয়ালির প্রতীক এবং এই দিন গাছপালার পূজা করা, ঝুলো দেওয়া ও লোকগীতি গাওয়া ঐতিহ্যের অংশ। এই পর্ব আমাদের প্রকৃতির সাথে জড়িত হওয়ার এবং জীবনের সৌন্দর্য বুঝতে পারার সুযোগ দেয়।
যদি আপনি প্রথমবার হরিয়ালী তীজের ব্রত পালন করছেন তাহলে উপরে বর্ণিত নিয়ম, বিধি ও সামগ্রী আপনাকে একটি সম্পূর্ণ ও সফল ব্রতের জন্য প্রস্তুত করবে। এই ব্রত কেবল ধর্মীয় আস্থার প্রতীক নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক সাধনাও, যেখানে নারী তার ভক্তি, সংযম ও শ্রদ্ধা দিয়ে দাম্পত্য জীবনের সুখের জন্য দেবী পার্বতীর আশীর্বাদ লাভ করে।