এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার পর আমেরিকান বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সিইও কেলি অর্টবার্গের সমস্যা আরও বেড়ে গেছে।
নয়াদিল্লি: আমেরিকান বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কেলি অর্টবার্গ আবারও বিশ্বব্যাপী মিডিয়া ও তদন্ত সংস্থাগুলির নজরে এসেছেন। ৮ আগস্ট ২০২৪-এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে অর্টবার্গ ক্রমাগত বেশ কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171-এর দুর্ঘটনা তাঁকে আবারও চাপে ফেলে দিয়েছে। এই বিপর্যয়ে ২৪১ জনের মৃত্যুর পর বোয়িংয়ের বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বোয়িংয়ের জন্য কঠিন সময়ের সূচনা
অর্টবার্গ যখন বোয়িংয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সংকটে জর্জরিত ছিল। প্রতিষ্ঠানের নগদ অবস্থা দুর্বল ছিল, সরবরাহ শৃঙ্খলে অব্যবস্থা ছিল এবং অনেক কর্মীর মধ্যে অসন্তোষ ছিল। এর সাথে সাথে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ বোয়িংয়ের আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিতে প্রভাব ফেলেছে। এই সবের মাঝে, অর্টবার্গ তাঁর প্রথম নয় মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু চ্যালেঞ্জগুলি এখনও শেষ হয়নি।
এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনার পর আবারও প্রশ্ন উঠলো
৬ জুন ২০২৫-এ, অহমেদাবাদ থেকে লন্ডন গ্যাটউইকের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171 উড়ালের কিছুক্ষণ পরেই দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিমানটি ছিল বোয়িং 787-8 ড্রিমলাইনার, যা প্রযুক্তি ও আরামের ক্ষেত্রে বোয়িংয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎপাদন। কিন্তু এই দুর্ঘটনায় ২৪১ জন যাত্রীর মৃত্যু হয় এবং আবারও বোয়িংয়ের সুনামের উপর গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
বিমানের প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক
বোয়িং 787 ড্রিমলাইনার উচ্চ প্রযুক্তিগত মান অনুযায়ী নির্মিত। কিন্তু সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা বোঝায় যে কোথাও না কোথাও নিরাপত্তার ব্যর্থতা ঘটেছে, অথবা রক্ষণাবেক্ষণ ও উড়ান ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের অবহেলা হয়েছে। নাগরিক বিমান চলাচল মহানির্দেশালয় ইঙ্গিত দিয়েছে যে সকল বোয়িং 787 বিমানের ব্যাপক পরীক্ষা করা হবে। অন্যদিকে, এখনও উড়ানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি, তবে তদন্তকারী সংস্থাগুলির সক্রিয়তা থেকে পরিষ্কার যে প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ।
বাজারে নেমে গেলো প্রতিষ্ঠানের সুনাম
এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনার খবরের পর বোয়িংয়ের শেয়ারের তীব্র পতন দেখা গেছে। একদিনে শেয়ার ৫ শতাংশ পর্যন্ত নেমে গেছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এর সাথে সাথে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন ও বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য পরিষ্কার করে দিয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটিকে জনগণ ও সরকারের আস্থা ফিরে পেতে হবে।
তদন্তের সম্ভাব্য দিক
ঘটনার তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, কিন্তু কিছু দিকে বিশেষ ফোকাস করা হচ্ছে, যেমন:
- পাইলটের কোন মানবিক ভুল ছিল কি
- বিমানের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ রিপোর্টে কোনো ঘাটতি ছিল কি
- উড়ানের সময় কোনো পাখির সাথে সংঘর্ষ হয়েছিল কি না
- বিমানের জ্বালানির মান কেমন ছিল
- রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের সময় আবহাওয়ার অবস্থা কেমন ছিল
এই সকল দিক বিভিন্ন প্রযুক্তিগত দলের দ্বারা তদন্ত করা হচ্ছে এবং আগামী কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে এর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে পারে।
কেলি অর্টবার্গের এখন পর্যন্ত কর্মজীবন
৬৫ বছর বয়সী অর্টবার্গের অ্যারোস্পেস শিল্পে চার দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ১৯৮৩ সালে টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্টসে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবনের সূচনা করেন। এরপর তিনি রকওয়েল কলিন্সে যোগ দেন এবং সেখানে উচ্চপদে কর্মরত থেকে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পৌঁছান। যখন রকওয়েল কলিন্সের ইউনাইটেড টেকনোলজিজ কর্পোরেশনের সাথে একীভূত হয়, তখন অর্টবার্গকে কলিন্স অ্যারোস্পেসের সিইও নিযুক্ত করা হয়।
মার্চ ২০২১-এ তিনি আরটিএক্স কর্পোরেশনে যোগ দেন এবং সেখানে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। ২০২৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি বোয়িংয়ের বোর্ড সদস্যও ছিলেন, যার ফলে তাঁর প্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরীণ কার্যপ্রণালী সম্পর্কে গভীর বোধ ছিল। এই অভিজ্ঞতার কারণে তাঁকে আগস্ট ২০২৪-এ বোয়িংয়ের সিইও নিযুক্ত করা হয়।
কেন অর্টবার্গের উপর সবার নজর
যেকোনো সংকটের সময়ে নেতৃত্বের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আজ বোয়িং শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং আমেরিকান অ্যারোস্পেস শিল্পের মুখ। অর্টবার্গের ভূমিকা এখন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ তাঁকে শুধুমাত্র দুর্ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে তাই নয়, গ্রাহক ও সাধারণ যাত্রীদের আস্থা পুনরায় অর্জন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়ে অর্টবার্গের মাঠে নেমে আসা, প্রভাবিত এলাকা পরিদর্শন করে পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ নেওয়া এবং স্বচ্ছ যোগাযোগ বজায় রাখা তাঁর নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে। ঠিক এ কারণেই ব্লুমবার্গের অ্যারোস্পেস পরামর্শদাতা রিচার্ড আবৌলাফিয়া বলেছেন যে সংকটকালে নেতার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয়।
আগামী দিনে কি ড্রিমলাইনারের উড়ান বন্ধ হবে?
এখনও পর্যন্ত, নাগরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় ড্রিমলাইনারের উড়ানে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়নি। কিন্তু যদি তদন্তে কোনো বড় প্রযুক্তিগত ত্রুটি ধরা পড়ে, তাহলে ড্রিমলাইনারের কিছু সেবা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ভারত, ইউরোপ ও আমেরিকা যেমন বড় বাজারগুলিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।