সোনা: মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা

🎧 Listen in Audio
0:00

ধন পরামর্শদাতা আলোক জৈন-এর মতে, সোনা শুধুমাত্র অর্থের সুরক্ষার মাধ্যম নয়, বরং মুদ্রাস্ফীতির সময়ও এটি উন্নত কর্মক্ষমতা দেখায়।

নতুন দিল্লি: যদি আপনি মনে করেন যে শুধুমাত্র জমি-জায়গা বা ফ্ল্যাটের দামই সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়, তাহলে এই খবর আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিতে পারে। ধন পরামর্শদাতা আলোক জৈন সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন জিনিসপত্রের দামের তুলনা টাকায় নয়, বরং সোনার ওজনের সাথে করেছেন। ফলাফল অত্যন্ত আশ্চর্যজনক - অনেক ব্যয়বহুল জিনিসপত্র আজও প্রায় ততটুকু গ্রাম বা কিলোগ্রাম সোনায় কেনা যায়, যতটুকু ৩০ বছর আগে কেনা যেত।

এই হিসাবের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেখানো যে সোনা কেবলমাত্র সম্পত্তির সুরক্ষা করে না, বরং সময়ের সাথে সাথে মুদ্রাস্ফীতিকেও পরাজিত করে। এর সরল অর্থ হল, যদি আপনি আপনার অর্থ সোনায় বিনিয়োগ করতেন, তাহলে আপনার ক্রয় ক্ষমতা আজও একই থাকত এবং অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও ভালো হতো।

একটি ফ্ল্যাট, দুটি যুগ, একই সোনার দাম

আলোক জৈন তার মূল্যায়নে উল্লেখ করেছেন যে ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ দিল্লিতে একটি চমৎকার ৪ বিএইচকে অ্যাপার্টমেন্টের দাম ছিল প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। সেই সময় ১ কিলোগ্রাম সোনার দাম ছিল প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। এই হিসাবে ফ্ল্যাটের দাম ৬ কিলোগ্রাম সোনার সমান ছিল। আজ সেই একই ফ্ল্যাট ৬ কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবং বর্তমানে ১ কিলোগ্রাম সোনার দাম প্রায় ১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আজও সেই একই ফ্ল্যাট প্রায় ৬ কিলোগ্রাম সোনায় কেনা যাবে।

এই তথ্য থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে সোনা রিয়েল এস্টেটের মতো দ্রুত বর্ধমান সম্পত্তি শ্রেণির সাথে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতা দেখিয়েছে।

বিএমডব্লিউ গাড়িও হয়েছে সস্তা, কিন্তু সোনার হিসাবে

১৯৯৬ সালে একটি বিএমডব্লিউ ৩ সিরিজের দাম ছিল প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। সেই সময় এটি প্রায় ৫ কিলোগ্রাম সোনার সমান ছিল। এখন সেই একই গাড়ি ৬০ লক্ষ টাকায় পাওয়া যায়, কিন্তু এই দাম আজকের সময়ে মাত্র ০.৬ কিলোগ্রাম সোনার সমান। অর্থাৎ সোনার দাম এত বেড়েছে যে বিলাসবহুল গাড়ি আজকের তথ্য অনুসারে পুরোনো সময়ের তুলনায় অনেক কম সোনায় কেনা যায়।

রাতের খাবার, ভ্রমণ এবং বিলাসিতায় সোনার শক্তি

আলোক জৈন দৈনন্দিন জিনিসপত্রের তুলনাও সোনার সাথে করেছেন। ১৯৯৬ সালে কোনো ৫-তারকা হোটেলে রাতের খাবার খেতে প্রায় ৫০০ টাকা খরচ হত, যা সেই সময় ১ গ্রাম সোনার সমান ছিল। এখন সেই একই রাতের খাবার প্রায় ৭,০০০ টাকায় পাওয়া যায়, কিন্তু এটি এখন মাত্র ০.৭ গ্রাম সোনার সমান।

এইভাবে, ১৯৯৬ সালে দুইজনের জন্য এক সপ্তাহের ইউরোপ ভ্রমণ প্যাকেজ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ছিল, অর্থাৎ ০.৬ কিলোগ্রাম সোনা। এখন সেই একই ভ্রমণ ৬ লক্ষ টাকায় পাওয়া যায়, যা মাত্র ০.০৬ কিলোগ্রাম সোনা।

এই থেকে প্রমাণিত হয় যে যার দাম টাকায় দ্বিগুণ-ত্রিগুণ বেড়েছে, সেগুলি সোনার হিসাবে সস্তা হয়ে গেছে।

মুদ্রাস্ফীতির বিপরীতে সোনা এগিয়ে

ভারতে মুদ্রাস্ফীতি প্রতি বছর গড়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে সোনা গত ৩০ বছরে এর চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি দেখিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৬ সালে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল প্রায় ৫,০০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। এখন এটি বেড়ে ১,০০,৫১০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি। এত বছরে টাকার মূল্য কমেছে, কিন্তু সোনার ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুধুমাত্র নিরাপদ বিনিয়োগ নয়, বর্ধমান সম্পত্তি

আলোক জৈন তার পোস্টে স্পষ্ট করেছেন যে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করছেন না, বরং দেখাচ্ছেন যে কীভাবে সোনায় বিনিয়োগ সময়ের সাথে সাথে ক্রয় ক্ষমতা বজায় রাখে। তার মতে, মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের সময় যেখানে অর্থের মূল্য কমে, সেখানে সোনা তাকে পরাজিত করে।

এটি শুধুমাত্র একটি বিনিয়োগের বিকল্প নয়, বরং ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সোনার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি বিশ্বব্যাপী মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার সময়ও এর চাহিদা অব্যাহত থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার এই শক্তি শুধুমাত্র ভারতে সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বজুড়ে এটি একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়। যখনই শেয়ার বাজারে পতন ঘটে বা বিশ্বব্যাপী সংকট হয়, তখন বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝুঁকে পড়ে। यही কারণে এর মূল্য স্থায়িত্বের সাথে সাথে বৃদ্ধিও দেখায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে সোনাকে পোর্টফোলিওর অংশ হিসেবে রাখা দীর্ঘমেয়াদী জন্য লাভজনক। এটি কেবলমাত্র মুদ্রাস্ফীতি থেকে রক্ষা করে না, বরং অস্থির বাজারে স্থায়িত্ব প্রদান করে।

Leave a comment