এসবিআই-এর রেকর্ড লভ্যাংশ: ৮,০৭৬.৮৪ কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে

🎧 Listen in Audio
0:00

দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ৮,০৭৬.৮৪ কোটি টাকার লভ্যাংশ প্রদান করে তার আর্থিক স্থিতিশীলতার আরও এক উদাহরণ উপস্থাপন করেছে।

শেয়ার বাজার: ভারতের প্রধান সরকারি খাতের ব্যাংক SBI আবারও সরকারকে সাহায্য করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য ব্যাংকটি ৮,০৭৬.৮৪ কোটি টাকার লভ্যাংশ সরকারকে প্রদান করেছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৬% বেশি। এটি শুধুমাত্র সরকারি কোষাগারকে শক্তিশালী করে না, বরং ভারতীয় ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নেরও ইঙ্গিত দেয়।

এই প্রতিবেদনে আমরা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করবো এই লভ্যাংশের গুরুত্ব কী, इससे সরকার কী লাভ পাবে, ব্যাংকের অবস্থা কী বলে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য এর অর্থ কী।

রেকর্ড মুনাফা, রেকর্ড লভ্যাংশ

স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ২০২৪-২৫ সালে ৭০,৯০১ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা অর্জন করেছে। এটি গত অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সালের ৬১,০৭৭ কোটি টাকার মুনাফার চেয়ে ১৬% বেশি। এই চমৎকার কর্মক্ষমতার ফলে ব্যাংকটি তার শেয়ারহোল্ডারদের বড় রিটার্ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশীদার সরকার।

গত বছরের তুলনায় কী পরিবর্তন?

অর্থবর্ষ    মোট মুনাফা (কোটি টাকা)    সরকারকে লভ্যাংশ (কোটি টাকা)
২০২৩-২৪         ৬১,০৭৭                   ৬,৯৫৯.২৯
২০২৪-২৫         ৭০,৯০১                   ৮,০৭৬.৮৪

লভ্যাংশের অর্থ কী?

লভ্যাংশ হল সেই লাভের অংশ যা কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন করে। যেহেতু সরকার SBI-এর সবচেয়ে বড় অংশীদার, তাই লভ্যাংশ হিসাবে তাকে সবচেয়ে বড় অংশ পাওয়া উচিত। এবার SBI প্রতি শেয়ারে ১৫.৯০ টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা গত বছরের প্রতি শেয়ারে ১৩.৭০ টাকার চেয়ে বেশি। এর সরাসরি লাভ সরকার পেয়েছে, পাশাপাশি ব্যাংকের অন্যান্য শেয়ারহোল্ডাররাও ভাল আয় পেয়েছে।

বিত্তমন্ত্রীকে চেক প্রদান

SBI-এর চেয়ারম্যান সি. এস. সেট্টি নিজেই এই লভ্যাংশের চেক কেন্দ্রীয় বিত্তমন্ত্রী निर्मला सीतारमणকে প্রদান করেছেন। এই অনুষ্ঠানে বিত্তীয় সেবা সচিব এম. নাগরাজু এবং বিত্ত সচিব অজয় সেঠও উপস্থিত ছিলেন। এটি শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক লেনদেন ছিল না, বরং এটি সরকার এবং সরকারি খাতের ব্যাংকগুলির মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতা এবং পারস্পরিক আস্থারও প্রতীক।

সরকারের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X (পূর্বে টুইটার) এ এই খবরটি শেয়ার করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে কীভাবে সরকারের অ্যাকাউন্টে SBI আবারও একটি বড় অঙ্ক টাকা স্থানান্তর করেছে।

SBI-তে কার কত শতাংশ শেয়ার?

SBI একটি সরকারি খাতের ব্যাংক, যার মধ্যে সরকারের অংশীদারিত্ব সবচেয়ে বেশি।

  • ভারত সরকার: ৫৭.৪২%
  • LIC (ভারতীয় জীবন বীমা নিগম): ৯.০২%
  • অন্যান্য পাবলিক শেয়ারহোল্ডার: বাকি অংশীদারিত্ব

LIC, যা সরকারের নিজস্ব কোম্পানি, ব্যাংকে সবচেয়ে বড় নন-প্রমোটার শেয়ারহোল্ডার। এর অর্থ হল সরকারি সংস্থাই এই ব্যাংকের সবচেয়ে বড় উপকৃত।

SBI-এর শেয়ারের কর্মক্ষমতা

শেয়ার বাজারেও SBI-এর শেয়ার ভালো কর্মক্ষমতা দেখিয়েছে।

  • বিএসই-তে শেষ বন্ধ মূল্য (১০ জুন ২০২৫): ৮২০.০৫ টাকা
  • ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ: ৮৯৮.৮০ টাকা
  • ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন: ৬৭৯.৬৫ টাকা

এই কর্মক্ষমতা থেকে স্পষ্ট যে বিনিয়োগকারীদের SBI-তে আস্থা রয়েছে। লভ্যাংশ বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ আরও বাড়াবে, যার ফলে শেয়ারের চাহিদা এবং মূল্য উভয়ই বৃদ্ধি পেতে পারে।

দেশের অর্থনীতির জন্য এর অর্থ কী?

SBI-এর বর্ধিত মুনাফা এবং সরকারের কাছে প্রাপ্ত লভ্যাংশ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বার্তা পাওয়া যায়:

  • সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি: সরকারের কাছে ৮,০৭৬ কোটি টাকার লভ্যাংশ তার রাজস্ব ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে।
  • ব্যাংকিং খাতের শক্তিশালীকরণ: যদি দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি ব্যাংক শক্তিশালী কর্মক্ষমতা দেখায়, তাহলে এর সরাসরি প্রভাব পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুনাম এবং স্থিতিশীলতার উপর ইতিবাচকভাবে পড়ে। এটি অন্যান্য ব্যাংকগুলিতেও আস্থা বাড়ায় এবং আর্থিক ব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে শক্তিশালী করে।
  • সরকারের কোম্পানি থেকে আয়: এটি প্রমাণ করে যে সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলি যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে তারা লাভ অর্জন করে সরকারের আয় বাড়াতে পারে।

বিনিয়োগকারীরা কী শিখতে পারে?

  • লভ্যাংশ শেয়ারে বিনিয়োগ: বিনিয়োগকারীদের এমন কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ করা উচিত যা নিয়মিত লভ্যাংশ দেয়। SBI এর একটি চমৎকার উদাহরণ।
  • সরকারি কোম্পানিগুলিতে আস্থা: অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা সরকারি কোম্পানি থেকে দূরে থাকে, কিন্তু SBI-র মতো শেয়ার দেখায় যে এই কোম্পানিগুলিও চমৎকার রিটার্ন দিতে পারে।
  • দীর্ঘমেয়াদী ধারণার গুরুত্ব: SBI-এর শেয়ার গত ৫ বছরে স্থির এবং নির্ভরযোগ্য হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী ধারণা থেকে বড় লাভ সম্ভব। 

Leave a comment