ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) ৬ জুন ২০২৫-এ হঠাৎ করেই তার রিপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৫.৫০% করেছে। ২০২৫ সালের এটি তৃতীয় ক্রমিক রেট কমানো, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের "গ্রোথ-ফোকাসড" নীতির প্রতিফলন। এই কমানোর সাথে সাথে RBI ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (CRR) ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে, যার ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন টাকা অতিরিক্ত তরলতা প্রবেশ করবে। এর উদ্দেশ্য হল ব্যাংকগুলিকে সাশ্রয়ী মূল্যের তহবিল সরবরাহ করা এবং গ্রাহক এবং SMEs-এর কাছে ঋণের প্রাপ্যতা বাড়ানো।
পূর্ববর্তী অনুপাত এবং সরকারী তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চতুর্থ ত্রৈমাসিকে GDP বৃদ্ধি ছিল ৭.৪%, যখন FY ২০২৪-২৫-এর গড় ছিল ৬.৫%। পাশাপাশি, মুদ্রাস্ফীতি ৬ বছরের নিম্নতম ৩.২% এ নেমে এসেছে, যার ফলে RBI-এর কাছে মনিটারি ইজিং-এর নমনীয়তা বজায় রয়েছে।
বাজার এবং ঋণগ্রহীতাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
শেয়ার বাজারে এই পদক্ষেপকে বেশ স্বাগত জানানো হয়েছে—সেনসেক্স এবং নিফ্টি উভয়ই ১% এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক এবং আর্থিক খাতের শেয়ার দ্রুত উন্নতি করেছে। ঋণগ্রহীতারা তাৎক্ষণিক সুবিধা পেতে শুরু করেছে। ব্যাংক অফ বারোদা রিপো রেট-লিঙ্কড ঋণের হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে, অন্যদিকে HDFC MCLR ১০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। এর ফলে হোম লোন এবং ব্যক্তিগত ঋণের EMI-তে প্রভাব পড়েছে—১ লক্ষ টাকার EMI-তে প্রায় ৮০০-১২০০ টাকা সাশ্রয় সম্ভব।
কিন্তু আমানতকারীরা, যাদের টাকা FD এবং সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে, তাদের কম সুদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ICICI ব্যাংকের মতো ব্যাংকগুলি FD-এর সুদ প্রায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। এর ফলে আমানতকারীদের আয় প্রভাবিত হবে, বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য এটি উদ্বেগের বিষয় হতে পারে।
সংক্রমণ এবং তরলতার চ্যালেঞ্জ
RBI NBFC-গুলির সাথে নীতি সংক্রমণকে শক্তিশালী করার জন্য আলোচনা শুরু করেছে যাতে রিপো রেট কমানোর সুবিধা প্রতিটি ঋণগ্রহীতা পায়। তবে বর্তমানে ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধি ধীর—মে মাসে এটি মাত্র ৯.৮% ছিল। তাই সংক্রমণের গতি গুরুত্বপূর্ণ। CRR কে তরলতা সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহার করলে ওভারনাইট কল রেটকে নীতি রেটের সাথে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সাহায্য করবে। RBI এখন মনিটারি স্ট্যান্স "নিউট্রাল" রাখার কথা ভাবছে—"অ্যাকোমোডেটিভ" থেকে এই পরিবর্তন ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে কাট ডেটা-নির্ভর হবে।
দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাব্য ঝুঁকি
সানডে FT-এর বিশ্লেষণ অনুসারে, এই আক্রমণাত্মক কাট বৃদ্ধির একটি ইঙ্গিত দেয়, তবে গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রার উপর ঐতিহ্যগত RBI-এর মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বকে বৃদ্ধি-উন্মুখ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে অগ্রাহ্য করার অভিযোগ আনা যেতে পারে। অন্যান্য বিশ্লেষকদের উদ্বেগ বেশিরভাগই অল্প সময়ের জন্য নীতিগত নমনীয়তা এবং আর্থিক বাজারের অস্থিরতা নিয়ে—যদি ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী প্রতিকূলতা আসে তাহলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়া কঠিন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ সারসংক্ষেপ
RBI-এর এই রিপো রেট এবং CRR কমানো স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে সরকার অর্থনীতিকে গতিশীল বৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে আনতে চায়। তবে নীতি সংক্রমণে চ্যালেঞ্জ, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা এবং ঋণ গ্রহণ বনাম সঞ্চয়ের ভারসাম্য এই পদক্ষেপের কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
সংক্ষিপ্তসার & পরবর্তী পদক্ষেপ
কম রিপো রেট অল্প সময়ের জন্য ঋণগ্রহীতাদের জন্য একটি স্বাগত সংবাদ হতে পারে। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল এই বিষয়ের উপর নির্ভর করবে যে এই মনিটারি উদ্দীপনা কত দ্রুত বাস্তব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, গ্রাহক ব্যয়ের মধ্যে পরিবর্তিত হয়।
এখন RBI-এর দৃষ্টি পরবর্তী মুদ্রাস্ফীতির সংখ্যা এবং বিশ্বব্যাপী ম্যাক্রো প্রবণতার উপর থাকবে। আপনার মতামত কি? এই কাট টেকসই অর্থনৈতিক বৃদ্ধি আনবে নাকি বাজার এবং সঞ্চয়কারীদের উপর এর বোঝা পড়বে?