জিম্বাবুয়ের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়: বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে পরাজিত

জিম্বাবুয়ের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়: বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে পরাজিত
সর্বশেষ আপডেট: 23-04-2025

জিম্বাবুয়ে টেস্ট ক্রিকেটে এমন এক জয় অর্জন করেছে যা শুধুমাত্র স্কোরবোর্ডে নয়, ইতিহাসের পাতায়ও স্থান করে নিয়েছে। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্ট ম্যাচে জিম্বাবুয়ে মেজবান বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে পরাজিত করেছে। ছয় বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে এ জয় জিম্বাবুয়ের জন্য অর্জিত হয়েছে।

খেলাধুলার খবর: জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের নিজস্ব মাটিতে অসাধারণ পারফর্মেন্স করে ক্রিকেট জগতকে চমকে দিয়েছে। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ১২তম স্থানে থাকা জিম্বাবুয়ে দল ৯ নম্বরের বাংলাদেশকে প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে হারিয়ে না শুধুমাত্র টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে, বরং চার বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে জয়ের স্বাদও পেয়েছে। এর আগে জিম্বাবুয়ের শেষ টেস্ট জয় হয়েছিল ২০২১ সালের মার্চ মাসে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে এটি জিম্বাবুয়ের ছয় বছর পর প্রথম টেস্ট জয়, যা এই দলের জন্য এক বিরাট সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে জয়ের জন্য ১৭৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা পেয়েছিল, যা তারা চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে অর্জন করেছে। অধিনায়ক ক্রেগ আরভিনের নেতৃত্বে দলটি ধৈর্য্য ও সংগ্রামী মনোভাব দেখিয়েছে, এবং এটি আরভিনের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্ট জয়। এই ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক হয়ে উঠেছে তরুণ ওপেনার ব্রায়ান বেনেট, যিনি প্রথম ইনিংসে ৫৭ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৪ রানের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন।

প্রথম ইনিংসে প্রাথমিক সুবিধা

টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ দল প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯১ রানে অলআউট হয়েছে। জিম্বাবুয়ের বোলাররা শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিং করেছে এবং বাংলাদেশকে কখনোই মুক্তভাবে খেলার সুযোগ দেয়নি। এর জবাবে জিম্বাবুয়ে ব্রায়ান বেনেট (৫৭) এবং শেন উইলিয়ামস (৬৬) এর চমৎকার ইনিংসের সুবাদে ২৭৩ রান তুলে ৮২ রানের গুরুত্বপূর্ণ লিড তৈরি করে।

দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময় বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেট হারিয়ে ৫৭ রান তুলেছিল। তৃতীয় দিন বৃষ্টি কিছুটা বাধা সৃষ্টি করেছে, তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান শান্ত এবং মুমিনুল হক ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলেন। তবে, জিম্বাবুয়ের বোলার ব্লেসিং মুজারবানি ৫১ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে বিপক্ষ দলের ছন্দ নষ্ট করে দিয়েছেন। চতুর্থ দিন বাংলাদেশের পুরো দল ২৫৫ রানে অলআউট হয়েছে এবং জিম্বাবুয়ে ১৭৪ রানের লক্ষ্য পেয়েছে।

বেনেট হয়ে উঠলেন নায়ক, প্রাথমিক জুটি গড়ে দিল ভিত্তি

জবাবে জিম্বাবুয়ের শুরুটা ছিল চমৎকার। ব্রায়ান বেনেট এবং বেন কর্নের মধ্যে প্রথম উইকেটের জন্য ৯৫ রানের জুটি হয়েছিল। কর্ন ৪৪ রান করে আউট হলেও বেনেট আরও একটি অর্ধশতক (৫৪) করে দলের ভিত্তি শক্ত করেছেন। তবে মাঝের ওভারগুলিতে নিয়মিত উইকেট পতনের ফলে এক সময় দলটি চাপে পড়েছিল, কিন্তু মাদেভেরে এবং মাসাকাদজা সংযম দেখিয়েছেন।

১৪৫ রানে ৬ উইকেট পতনের পর মনে হচ্ছিল ম্যাচ বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে, কিন্তু ওয়েসলি মাদেভেরে ২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন এবং রিচার্ড ন্গারাওয়ার সাথে মিলে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জিম্বাবুয়ে অবশেষে ৩ উইকেটে ম্যাচ জিতে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে।

ক্রেগ আরভিনের প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ

অধিনায়ক হিসেবে ক্রেগ আরভিনের এটি প্রথম টেস্ট জয় এবং এটি তার নেতৃত্বের দক্ষতাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। এই জয় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের আত্মবিশ্বাসে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। জিম্বাবুয়ের এই জয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো তাদের সমন্বিত বোলিং এবং বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যাটিং। যেখানে একদিকে বোলাররা বাংলাদেশকে বড় স্কোর থেকে বিরত রেখেছে, সেখানে অন্যদিকে ব্যাটসম্যানরা পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের খেলাকে মেলে ধরেছে।

বাংলাদেশের জন্য এটি অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে যখন তাদের নিজস্ব মাটিতে নিম্ন র‌্যাঙ্কিংয়ের একটি দলের কাছে পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই পরাজয়ের পর বাংলাদেশকে তাদের কৌশলগুলোর উপর পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

Leave a comment