ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ৫.১৭ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি

🎧 Listen in Audio
0:00

উত্তর ভারত, বিশেষ করে দিল্লি-এনসিআরে যেখানে মৌসুমি বৃষ্টির অপেক্ষা চলছে, সেখানেই দেশের অর্থনীতিতে ডলারের বৃষ্টি হয়েছে।

নয়াদিল্লি: একদিকে যখন দিল্লি-এনসিআরে মৌসুমি বৃষ্টির অপেক্ষা এখনও চলছে, অন্যদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ডলারের বর্ষণে অর্থনৈতিক স্তরে স্বস্তি এনেছে। জুনের প্রথম সপ্তাহে ভারতের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভে ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এই বৃদ্ধি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয় না, বরং ভারতের বিশ্বব্যাপী আর্থিক অবস্থানকেও শক্তিশালী করে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ৬ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মোট ৫.১৭ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে এই সংখ্যা বেড়ে ৬৯৬.৬৫৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

এই বৃদ্ধি বেশ কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে রিজার্ভে হ্রাস দেখা গিয়েছিল, এবং এমন সময়ে এই বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের ভারতে বিশ্বাসের ইঙ্গিত দেয়। এই পরিস্থিতি দেশের পুঁজি বাজার, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য এবং টাকার স্থিতিশীলতা জন্যও ইতিবাচক।

এফসিএ-তে সর্বাধিক বৃদ্ধি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় অংশ হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদ বা ফরেন কারেন্সি অ্যাসেটস (এফসিএ) -এ। এফসিএ ভারতের মোট রিজার্ভের সবচেয়ে বড় অংশ। ৬ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে এফসিএ-তে ৩.৪৭২ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহ আগেই প্রায় ১.৯৫ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছিল, তাই এই বৃদ্ধি ভারতের জন্য বেশ স্বস্তির।

এফসিএ-তে ডলারের সাথে সাথে ইউরো, পাউন্ড এবং ইয়েনের মতো অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রারও অংশীদারিত্ব রয়েছে। যখন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদকে ডলারে প্রকাশ করে, তখন অন্যান্য মুদ্রার মূল্যের উত্থান-পতনের প্রভাবও এর উপর পড়ে। বর্তমান বৃদ্ধি দেখায় যে ভারতের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা নীতি শক্তিশালী রয়েছে।

গোল্ড রিজার্ভও দেখিয়েছে উজ্জ্বলতা

শুধু এফসিএই নয়, ভারতের গোল্ড রিজার্ভ বা সোনার ভান্ডারেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। ৬ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতের সোনার ভান্ডারে ১.৫৮৩ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগের সপ্তাহেও গোল্ড রিজার্ভে ৭২৩ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখন ভারতের মোট সোনার ভান্ডার বেড়ে ৮৫.৮৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

বিশ্ববাজারে সোনার দাম বৃদ্ধি এবং ভারতের সোনা কেনার ধারাবাহিকতা এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত ঐতিহ্যগতভাবে সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখে আসছে এবং বর্তমান বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার সময়ে এর গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে।

এসডিআর এবং আইএমএফ-এ জমা মুদ্রাও বেড়েছে

স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস বা এসডিআরেও গত সপ্তাহে বৃদ্ধি দেখা গেছে। ৬ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে এতে ১০২ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখন এর সংখ্যা বেড়ে ১৮.৬৭২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এসডিআর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্তৃক সদস্য দেশগুলিকে সরবরাহ করা একটি বিশেষ সম্পদ, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এইসাথে, আইএমএফ বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে জমা ভারতের ভান্ডারেও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে এতে ১৪ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি দেখা গেছে, যার ফলে মোট পরিমাণ ৪.৪০৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধি দেখায় যে ভারতের বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিশ্রুতি শক্তিশালী হচ্ছে।

গত বছরের তথ্যের সাথে তুলনা

যদি আমরা এক বছর আগের তথ্যের সাথে তুলনা করি, তাহলে স্পষ্ট হয় যে ভারত তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিচালনা এবং বৃদ্ধিতে ভালো অগ্রগতি করেছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ ৭০৪.৮৮৫ বিলিয়ন ডলারের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। যদিও তারপর কিছু হ্রাস পেয়েছিল, কিন্তু এখন এটি আবার ৭০০ বিলিয়ন ডলারের সংখ্যার কাছাকাছি পৌঁছেছে।

এই থেকে স্পষ্ট হয় যে ভারত তার অর্থনৈতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সাথে করছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা, আমেরিকায় সুদের হারে উত্থান-পতন এবং তেলের দামের অস্থিরতা মতো চ্যালেঞ্জের পরও ভারতের রিজার্ভ ভারসাম্য বজায় রেখেছে।

কী হবে এর প্রভাব

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এই বৃদ্ধি ভারতের জন্য অনেক দিক থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত। প্রথমত, এটি ভারতীয় টাকার স্থিতিশীলতা শক্তিশালী করবে। যখন ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ যথেষ্ট পরিমাণে থাকে, তখন ভারতের আমদানি পরিশোধ, ঋণ পরিশোধ এবং জরুরি অবস্থায় বৈদেশিক পরিশোধ করার ক্ষমতা শক্তিশালী থাকে।

দ্বিতীয় বড় সুবিধা হলো, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা ভারতের অর্থনীতিতে আরও বেশি আস্থা প্রদর্শন করবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং পরিশোধ ক্ষমতার প্রতিফলন। এই বৃদ্ধি ভারতকে আন্তর্জাতিক স্তরে বিনিয়োগের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।

এর উপরন্তু, এই বৃদ্ধি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরও নীতিগত স্বাধীনতা দেয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের শক্তিশালীতার ফলে টাকার শক্তিশালীতাকে বল মেলে, যার ফলে আমদানি সস্তা হয় এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ভবিষ্যতের পথ

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত রপ্তানি বৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ঘরোয়া উৎপাদন শক্তিশালী করার উপর জোর দিয়েছে। এই সকল পদক্ষেপের প্রভাব বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপরও দেখা যাচ্ছে। আগামী মাসগুলিতে যদি বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি অনুকূল থাকে এবং ভারতের রপ্তানি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়, তাহলে আশা করা যায় যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার রেকর্ড স্তরে পৌঁছাবে।

সরকার এবং আরবিআই-কে উচিত এই প্রবণতা বজায় রাখার জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনিময় হার নীতি, সতর্ক আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং এফডিআই আকর্ষণের ব্যবস্থা দৃঢ়ভাবে প্রয়োগ করা।

Leave a comment