ইসরো স্পেডেক্স মিশনের আওতায় চেজার ও টার্গেট উপগ্রহ দুটিকে সফলভাবে ডকিং করে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে, যা ভবিষ্যৎ মহাকাশ প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়ক হবে।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO) আরও একটি বৃহৎ সাফল্য অর্জন করেছে। ইসরো মহাকাশে নিজেদের দুটি উপগ্রহকে (স্যাটেলাইট) দ্বিতীয়বারের জন্য পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করতে (ডকিং) সফল হয়েছে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, যা ভারতের জন্য ভবিষ্যতে মহাকাশ সংক্রান্ত নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
ইসরোর এই মিশনের নাম SPADEX (Space Docking Experiment)। এই মিশনে দুটি ছোটো স্যাটেলাইট – চেজার (Chaser) এবং টার্গেট (Target) – মহাকাশে প্রেরণ করা হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পরস্পরের সাথে মিলিত হওয়া, অর্থাৎ ‘ডক’ করা।
‘ডকিং’ কি এবং কেন এটি বিশেষ?
‘ডকিং’ একটি এমন প্রযুক্তি, যেখানে দুটি মহাকাশযান বা স্যাটেলাইট পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়। এটি মহাকাশে সম্পন্ন হয় এবং এটি অত্যন্ত কঠিন। মহাকাশে বস্তুগুলি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলে, সেখানে অভিকর্ষ বল নেই, এবং সবকিছু সঠিক সময়ে হওয়া জরুরি।
এই কারণেই, এই প্রযুক্তি বিশ্বের কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশের কাছেই রয়েছে। এখন ভারতও সেই দেশগুলির তালিকায় যোগ দিয়েছে, যারা মহাকাশে স্যাটেলাইটগুলি পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করার প্রযুক্তিতে পারদর্শী।
ইসরোর স্পেডেক্স (SPADEX) মিশন কি?

ইসরোর এই মিশনের নাম SPADEX, অর্থাৎ Space Docking Experiment। এই মিশনের অধীনে দুটি ছোটো উপগ্রহ – চেজার এবং টার্গেট – মহাকাশে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
ইসরোর উদ্দেশ্য এই পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা, ভারতের মহাকাশ প্রযুক্তি দুটি স্যাটেলাইটকে মহাকাশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে (autonomously) সংযুক্ত করতে সক্ষম কিনা।
ইসরোর দ্বিতীয় সফল প্রচেষ্টা
প্রথমবারের জন্য ইসরো কয়েক মাস আগে এই পরীক্ষা করেছিল, যেখানে উভয় স্যাটেলাইট ৩ মিটার দূরত্ব থেকে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় কিছু কাজ হাতে (ম্যানুয়ালি) করা হয়েছিল।
দ্বিতীয়বার, অর্থাৎ এখন, ইসরো আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং কাজ করেছে:
• এবার স্যাটেলাইটগুলি ১৫ মিটার দূরত্ব থেকে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়েছে।
• সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় (Autonomous) ছিল, অর্থাৎ কোন মানুষই মাঝখানে হস্তক্ষেপ করেনি।
• ডকিং সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়েছে, যা প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডকিংয়ের পরে বিদ্যুৎ স্থানান্তরও হয়েছে
কেবলমাত্র ডকিংই নয়, ইসরো এর পরে দুটি স্যাটেলাইটের মধ্যে বিদ্যুৎ আদান-প্রদান (Power Transfer)ও সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। অর্থাৎ একটি স্যাটেলাইট অন্যটিকে তার শক্তি দিয়েছে এবং তার বিপরীতও।
এই পরীক্ষা দেখায় যে, ভবিষ্যতে যদি কোনও স্যাটেলাইটের ব্যাটারি শেষ হয়ে যায়, তাহলে অন্য স্যাটেলাইট তাকে চার্জ করতে পারবে। ইসরো জানিয়েছে যে এই বিদ্যুৎ স্থানান্তর প্রায় ৪ মিনিট ধরে চলেছে এবং এই সময়কালে হিটার উপাদানগুলির পরিচালনাও করা হয়েছে।
এই প্রযুক্তি ভারতের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ইসরোর এই মিশন কেবল একটি প্রযুক্তিগত পরীক্ষা নয়। এটি ভারতের ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে। আসুন বুঝে নিই কেন:
১. মহাকাশ স্টেশন নির্মাণে সহায়তা করবে – যেমন আমেরিকা এবং রাশিয়ার কাছে মহাকাশ স্টেশন আছে, ভারতও ভবিষ্যতে নিজের মহাকাশ স্টেশন তৈরি করতে পারে। তার জন্য এই প্রযুক্তি অত্যন্ত জরুরি।
২. মহাকাশেই স্যাটেলাইট মেরামত এবং চার্জিং করা যাবে – যদি কোন স্যাটেলাইট নষ্ট হয়ে যায় বা তার ব্যাটারি শেষ হয়ে যায়, তাহলে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে মেরামত বা চার্জ করা যাবে।
৩. গগনয়ান মিশন এবং আন্তঃগ্রহীয় মিশনে সহায়তা করবে – যদি ভারত ভবিষ্যতে চাঁদ বা মঙ্গলে মানুষ পাঠাতে চায়, তাহলে ডকিংয়ের মতো প্রযুক্তি অত্যন্ত জরুরি হবে।
কিভাবে তৈরি হয়েছে এই মিশন?
স্পেডেক্স মিশন ইসরো দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পরে তৈরি করেছে। এতে ছোটো স্যাটেলাইটগুলি বিশেষভাবে ডকিংয়ের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
এই স্যাটেলাইটগুলিতে সেন্সর, ক্যামেরা এবং নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে যাতে তারা পরস্পরকে চিনতে পারে এবং সঠিক দূরত্বে যুক্ত হতে পারে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কী?
ইসরোর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন যে এই পরীক্ষার পরে এখন এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করা হবে। এর অর্থ হল ইসরো শীঘ্রই আরও উন্নত ডকিং মিশন পরিকল্পনা করতে পারে। পাশাপাশি এই প্রযুক্তি বৃহৎ এবং ক্রু-ভিত্তিক মিশনে ব্যবহার করা যেতে পারে।