অ্যামাজন ২৭টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ: স্টারলিঙ্ককে চ্যালেঞ্জ

অ্যামাজন ২৭টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ: স্টারলিঙ্ককে চ্যালেঞ্জ
সর্বশেষ আপডেট: 29-04-2025

অ্যামাজন প্রজেক্ট কুইপারের অধীনে ২৭টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে উপগ্রহ ব্রডব্যান্ড পরিষেবার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

টেক নিউজ: অ্যামাজন এখন মহাকাশেও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তাদের উপগ্রহ ইন্টারনেট পরিষেবা ‘প্রজেক্ট কুইপার’ এর অধীনে, কোম্পানিটি একটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করে ২৭টি নতুন ব্রডব্যান্ড উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে। এই উৎক্ষেপণটি আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে করা হয়েছে এবং এর সাথে সাথে অ্যামাজন ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ককে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।

যেখানে স্টারলিঙ্ক ইতোমধ্যেই ১০৫টির বেশি দেশে তাদের উপগ্রহ ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদান করছে, সেখানে এখন অ্যামাজনও পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আগামী সময়ে উভয় কোম্পানিই ভারতে উপগ্রহ ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা করছে, যার ফলে ইন্টারনেট সংযোগের পুরো দৃশ্যপট পরিবর্তন হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

কি অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার?

প্রজেক্ট কুইপার অ্যামাজনের উপগ্রহ ব্রডব্যান্ড মিশন, যার মাধ্যমে কোম্পানিটি বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছাতে চায়, বিশেষ করে সেসব এলাকায় যেখানে এখনও ইন্টারনেট পৌঁছায়নি। এই প্রজেক্টের অধীনে মোট ৩,২০০টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হবে, যা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (LEO) ঘুরে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট প্রদান করবে।

সম্প্রতি উৎক্ষেপিত ২৭টি উপগ্রহ অ্যাটলাস ভি রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। এই মিশনটি ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স (ULA) সম্পন্ন করেছে, যারা এই উপগ্রহগুলিকে ৬৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় স্থাপন করেছে।

পূর্বেও অ্যামাজন ২০২৩ সালে দুটি পরীক্ষামূলক উপগ্রহ সফলভাবে পাঠিয়েছিল। বিশেষ ব্যাপার হলো, এই উপগ্রহগুলিতে মিরর ফিল্ম লাগানো আছে, যা সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করবে, যাতে সেগুলি পৃথিবী থেকে দেখা না যায় এবং মহাকাশ দৃশ্যমান দূষণ কম হয়।

২৭টি উপগ্রহের প্রথম বড় উৎক্ষেপণ

অ্যামাজন সম্প্রতি ফ্লোরিডা (আমেরিকা) থেকে ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স (ULA) এর সহায়তায় অ্যাটলাস ভি রকেটের মাধ্যমে প্রজেক্ট কুইপারের ২৭টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে। এই উপগ্রহগুলি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ৬৩০ কিলোমিটার উপরে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে, ২০২৩ সালে অ্যামাজন দুটি পরীক্ষামূলক উপগ্রহ পাঠিয়েছিল যা সফল হয়েছিল। এখন কোম্পানিটি ব্যাপকভাবে উপগ্রহ পাঠিয়ে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা স্টারলিঙ্কের আধিপত্য ভাঙার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।

কোম্পানির লক্ষ্য হল আগামী সময়ে মোট ৩,২৩৬টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা, যাতে বিশ্বব্যাপী ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদান করা যায়। এই উপগ্রহগুলিতে বিশেষ ধরণের মিরর ফিল্ম লাগানো আছে, যা সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে, যার ফলে সেগুলি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারে এবং ডেটা ট্রান্সমিশনে সাহায্য করে।

স্টারলিঙ্কের জন্য কেন বেড়েছে উদ্বেগ?

ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের মাধ্যমে পরিচালিত স্টারলিঙ্ক এখন পর্যন্ত ৮,০০০ টির বেশি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭,০০০টি উপগ্রহ পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় ঘুরছে এবং ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদান করছে। স্টারলিঙ্ক বর্তমানে ১০৫টির বেশি দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করছে এবং এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নাম হয়ে উঠেছে।

কিন্তু এখন অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার তার সরাসরি প্রতিযোগিতায় এসেছে। অ্যামাজনের আর্থিক শক্তি এবং প্রযুক্তিগত অবকাঠামো বিবেচনা করে মনে করা হচ্ছে যে আগামী সময়ে স্টারলিঙ্ক বাজারে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।

ভারতে কবে শুরু হবে পরিষেবা?

ভারতের মতো বিশাল দেশে এখনও অনেক গ্রামীণ এবং দুর্গম এলাকা আছে যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ খুব দুর্বল বা সম্পূর্ণ নেই। এটাই কারণ অ্যামাজন এবং স্টারলিঙ্ক উভয়েরই দৃষ্টি ভারতীয় বাজারে। ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক ইতোমধ্যেই ভারতে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার প্রস্তুতি শুরু করেছে এবং প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষা করছে।

অন্যদিকে, অ্যামাজনও ভারতে কুইপার প্রজেক্টের অধীনে তাদের উপগ্রহ ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা করছে। উভয় কোম্পানির মধ্যে ভারতে ইতোমধ্যেই প্রতিযোগিতার মাঠ প্রস্তুত হয়েছে এবং নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথেই এই প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে।

এয়ারটেল এবং ওয়ানওয়েবও রয়েছে প্রতিযোগিতায়

অ্যামাজন এবং স্টারলিঙ্ক ছাড়াও আরেকটি কোম্পানি এই প্রতিযোগিতায় রয়েছে – ওয়ানওয়েব। এই কোম্পানিটি ভারতী এয়ারটেল কর্তৃক সমর্থিত এবং এটিও শত শত উপগ্রহ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে। ওয়ানওয়েবের বিশেষত্ব হলো এটি ডাইরেক্ট-টু-মোবাইল সংযোগের পরীক্ষাও করেছে, অর্থাৎ গ্রাহকদের ডিশ বা বড় ডিভাইস ছাড়াই সরাসরি উপগ্রহ ইন্টারনেট পাওয়ার সুবিধা হতে পারে।

ভারতে এয়ারটেলের ব্রডব্যান্ড উপগ্রহ পরিষেবা ওয়ানওয়েবের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে, যার ফলে আগামী সময়ে এখানে আরও একটি শক্তিশালী বিকল্প তৈরি হবে। অ্যামাজন আগামী কয়েক বছরে হাজার হাজার কুইপার উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে। কোম্পানির লক্ষ্য হল ২০২৬ সালের মধ্যে এটির পরিষেবা বিশ্বব্যাপী চালু করা। ভারতেও এই পরিষেবা আসার সম্ভাবনা বেড়েছে।

Leave a comment