আইপিএল ফাইনাল: বিরাটের আনন্দে শশাঙ্কের অশ্রুসিক্ত লড়াই

আইপিএল ফাইনাল: বিরাটের আনন্দে শশাঙ্কের অশ্রুসিক্ত লড়াই
সর্বশেষ আপডেট: 04-06-2025

বিরাট কোহলির কান্না ছিল জয়ের, ১৮ বছরের তপস্যার ফল, এবং সেই মুহূর্ত প্রতিটি ক্রিকেট প্রেমীর চোখেও জ্বলজ্বল করে উঠেছিল। কিন্তু একই সাথে, আরেকজন ক্রীড়াবিদ ছিলেন যিনি সেই রাতে পরাজয়ের বেদনায় ভেঙে পড়েছিলেন, কিন্তু যিনি হৃদয় জয় করেছিলেন — শশাঙ্ক সিংহ।

খেলাধুলা সংবাদ: আইপিএল ২০২৫-এর ফাইনাল সর্বদাই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিরাট কোহলির চোখে ঝলমলে অশ্রু, আরসিবির ঐতিহাসিক জয় এবং ১৮ বছরের তপস্যার ফল। কিন্তু, এই রাতে আরও একটি গল্প লেখা হয়েছিল। নিঃশব্দে, কোনো শিরোনাম ছাড়াই। এমন একটি গল্প, যাতে ছিল উন্মাদনা, সংগ্রাম এবং সবচেয়ে বড় কথা সেই দৃঢ়প্রত্যয় যা বলে — যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ বলটি বাকি আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ম্যাচ জীবন্ত। এই গল্পের নায়ক অন্য কেউ নয়, পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটসম্যান শশাঙ্ক সিংহ।

যখন পুরো বিশ্ব বিরাট কোহলির ট্রফি জয়ের গল্পে মগ্ন ছিল, তখন শশাঙ্ক সিংহ তার ব্যাট দিয়ে এমন কিছু রচনা করেছিলেন, যদি পাঞ্জাব জিতে যেত তাহলে আজ প্রতিটি শিরোনাম শুধুমাত্র তাঁরই হতো।

শশাঙ্ক সিংহ: এক যোদ্ধা যিনি একা ভেঙে পড়েননি

আইপিএল ২০২৫ ফাইনালে আরসিবি টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে এবং স্কোরবোর্ডে ১৯০ রানের শক্তিশালী লক্ষ্য তৈরি করে। বিরাট কোহলি (৬৪) এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৪৭)-এর তীব্র ইনিংসের সাহায্যে আরসিবি ফাইনালকে বড় ম্যাচে পরিণত করে। উত্তরে পাঞ্জাব কিংসের শুরুটা দারুণ ছিল, কিন্তু যশ ইংলিশ এবং শ্রেয়স আইয়ারের উইকেট পড়ার সাথে সাথেই দল মাঠে হোঁচট খেতে শুরু করে। উইকেটের ধারা শুরু হয় এবং এক সময় মনে হচ্ছিল ম্যাচ এখন সম্পূর্ণরূপে আরসিবির পক্ষে চলে গেছে।

শুরু ধীর, কিন্তু ইচ্ছা অটল

শশাঙ্ক প্রথম ছয় বলে সিঙ্গল-ডাবল নিয়ে তার চোখ জুড়েছিলেন। সপ্তম বলে তিনি শট খেলেন, যা দর্শকদের একটি বার্তা দিয়েছিল — "আমি এখানে শুধু খেলতে নই, জিততে এসেছি।" তারপর থেকে তিনি আরসিবির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বোলারদের ছন্দ নষ্ট করতে শুরু করেন। তিনি ১৭তম ওভারে হেজেলউডের বিরুদ্ধে দুটি দীর্ঘ ছক্কা মারেন। তারপর ১৯তম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারের বিরুদ্ধে চার ও ছক্কা মেরে রানরেট আরও কমিয়ে আনেন।

২০তম ওভারে ম্যাচ হলো কি ভাঙলো?

শেষ ওভার করতে আসেন যশ হেজেলউড। প্রথম দুটি বল ডট। দর্শকদের হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। তৃতীয় বলে শশাঙ্ক ছক্কা মারেন। তারপর চতুর্থ বলে চার, এবং শেষ দুটি বলে ধারাবাহিকভাবে দুটি ছক্কা মারেন। মাত্র ছয় রানের দূরত্ব বাকি ছিল। শশাঙ্ক এই ওভারে ২২ রান করে পাঞ্জাবকে জয়ের সীমানায় নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়... শুধুমাত্র একটা বল আর থাকলে, আজ আইপিএলের ট্রফির রঙ হয়তো লাল-গোলাপী নয়, লাল-সোনালী হতো।

৩০ বলে ৬১ রান — একার পুরো লড়াই

শশাঙ্ক তার ইনিংসে ৩০ বলে অপরাজিত ৬১ রান করেছেন। এতে ৩টি চার এবং ৬টি ছক্কা ছিল। তার এই ইনিংস কোন সাধারণ স্কোর ছিল না। এটি ছিল সংগ্রামের একটি কাহিনী, যা তখনও চালু ছিল যখন সামনে পরাজয় দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি একা ছিলেন, কিন্তু নতি স্বীকার করেননি। তার চোখে অশ্রু ছিল না, কিন্তু অন্তরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বয়ে যাওয়া বেদনা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শক ছিল, কিন্তু তিনি একা লড়াই করছিলেন যেন কোন সেনাপতি শেষ মোরচা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।

এই ম্যাচের পর মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ক্রিকেটের জগৎ বিরাট কোহলির গল্পে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু শশাঙ্ক সিংহের লড়াইও কোন মহাকাব্য থেকে কম ছিল না। তিনি শুধু পাঞ্জাবের আশা জীবন্ত রাখেননি, বরং ক্রিকেটকে এই কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে ম্যাচ শুধু জয় বা পরাজয় নয় — কখনও কখনও জেদই সবচেয়ে বড় জয় হয়।

Leave a comment