ডোনাল্ড ট্রাম্প সকল ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫% ট্যারিফ আরোপের ঘোষণা দিয়ে ট্যারিফ যুদ্ধ আরও তীব্র করে তুলেছেন, যার ফলে কানাডা ও মেক্সিকোর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্যারিফ যুদ্ধ: আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প তার কঠোর সিদ্ধান্তের জন্য পরিচিত। তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি বাতিলের বিষয় হোক বা মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, তার সিদ্ধান্ত সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এবার আবারও তিনি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য জগতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন। ট্রাম্প ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫% ট্যারিফ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার ফলে অনেক দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে।
ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে অত্যধিক ট্যারিফ আরোপ
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বাণিজ্য নীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫% ট্যারিফ আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ট্যারিফ বর্তমান ধাতু শুল্কের উপর অতিরিক্ত হবে এবং এটি শীঘ্রই কার্যকর হবে। ট্রাম্পের মতে, এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার দেশীয় উৎপাদন শিল্পকে উন্নীত করার জন্য নেওয়া হয়েছে। তবে, এর ফলে আমেরিকার বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কানাডা ও মেক্সিকো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকা সর্বাধিক ইস্পাত আমদানি করে কানাডা, ব্রাজিল ও মেক্সিকো থেকে। এরপর দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম এই তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে, আমেরিকার প্রাথমিক অ্যালুমিনিয়ামের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হল কানাডা।
২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে আমেরিকা যে পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করেছে তার ৭৯% এসেছে কানাডা থেকে। এছাড়াও, মেক্সিকো অ্যালুমিনিয়াম স্ক্র্যাপ ও মিশ্র ধাতুর প্রধান সরবরাহকারী। এখন এই ট্যারিফের ফলে এই দেশগুলির অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব পড়তে পারে।
ভারতের উপর কি প্রভাব পড়বে?
ভারতের উপর এই সিদ্ধান্তের তেমন প্রভাব পড়বে না কারণ আমেরিকা থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি ভারতের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তবে, যদি আমেরিকা বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও কঠোর করে তোলে, তাহলে ভারতের উপর পরোক্ষভাবে কিছু প্রভাব দেখা যেতে পারে।
পরস্পরের ট্যারিফেরও ঘোষণা করবেন ট্রাম্প
রবিবার নিউ অর্লিন্সে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি মঙ্গলবার থেকে পারস্পরিক ট্যারিফ (Reciprocal Tariffs) এরও ঘোষণা করবেন, যা তৎক্ষণাৎ কার্যকর হবে। তবে, তিনি স্পষ্ট করেননি যে এই ট্যারিফ কোন কোন দেশে প্রযোজ্য হবে। তার দাবি, আমেরিকা অন্যান্য দেশ কর্তৃক আরোপিত ট্যারিফ হারের সমান শুল্ক আদায় করবে এবং এটি সকল দেশে প্রযোজ্য হবে।
কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল?
ট্রাম্প বলেছেন যে, ২০১৬-২০২০ সালে তার প্রথম कार्यकाल-এ তিনি ইস্পাতে ২৫% এবং অ্যালুমিনিয়ামে ১০% ট্যারিফ আরোপ করেছিলেন। তবে, পরে কানাডা, মেক্সিকো এবং ব্রাজিল সহ কিছু বাণিজ্যিক অংশীদারকে শুল্ক-মুক্ত কোটা প্রদান করা হয়েছিল।
তিনি অভিযোগ করেছেন যে, জো বাইডেন প্রশাসন এই কোটা ব্রিটেন, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে আমেরিকার ইস্পাত কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কারণেই তিনি এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিশ্ববাজারে কি প্রভাব পড়বে?
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। আমেরিকা ও তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে। এর আগেও ট্যারিফ যুদ্ধের কারণে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। এইবারও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে অনেক দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।