মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫ই মার্চ সংসদের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং তাঁর প্রশাসনিক নীতির রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন। ‘দ্য রিনিউয়াল অফ দ্য আমেরিকান ড্রিম’ নামক এই বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেছিলেন যে আমেরিকা তার হারিয়ে যাওয়া পরিচয় ফিরে পেয়েছে।
ওয়াশিংটন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫ই মার্চ সংসদের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং তাঁর প্রশাসনিক নীতির রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন। ‘দ্য রিনিউয়াল অফ দ্য আমেরিকান ড্রিম’ নামক এই বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেছিলেন যে আমেরিকা তার হারিয়ে যাওয়া পরিচয় ফিরে পেয়েছে। এই সময় তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্যিক শুল্ক, তৃতীয় লিঙ্গ সংক্রান্ত বিষয় এবং অর্থনৈতিক সংস্কার সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতা শুরু করেছিলেন "আমেরিকা ইজ ব্যাক" বলে এবং জোর দিয়ে বলেছিলেন যে আমেরিকা আবার মহান হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি তাঁর সরকারের সাফল্যগুলো তুলে ধরে বলেছিলেন যে মাত্র ৪৩ দিনের মধ্যে তাঁর প্রশাসন এমন কাজ করে দেখিয়েছে যা অন্যান্য সরকার চার বছরেও করতে পারেনি।
ট্রাম্পের বক্তৃতার ১০টি প্রধান দিক
১. আমেরিকান আত্মবিশ্বাসের প্রত্যাবর্তন: ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে তাঁর প্রশাসন আমেরিকার আত্মা, গৌরব এবং আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেছিলেন যে এখন আমেরিকান নাগরিকরা তাদের সকল স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
২. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে কঠোর অবস্থান: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে আমেরিকা তার অগ্রাধিকার নিয়ে দৃঢ় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকার সাথে সাথে কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার পক্ষে থাকবে।
৩. সীমান্ত নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার: ট্রাম্প বলেছিলেন যে আমেরিকার সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছিলেন যে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করার জন্য সেনা এবং সীমান্ত পাহারা দল মোতায়েন করা হয়েছে, যার ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশের হার অনেক কমেছে।
৪. ভারতের উপর শুল্ক নীতির উল্লেখ: ভারত সম্পর্কে ট্রাম্প বলেছিলেন যে আমেরিকার উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপকারী দেশগুলিতে আমেরিকাও ততটুকুই শুল্ক আরোপ করবে। তিনি এটিকে বাণিজ্য ভারসাম্য স্থাপনের নীতি বলে অভিহিত করেছেন।
৫. জাতি ও লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য দূরীকরণ: ট্রাম্প বলেছিলেন যে আমেরিকায় চাকরির ভিত্তি হবে দক্ষতা এবং যোগ্যতা, নয় জাতি বা লিঙ্গ। তিনি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উল্লেখ করে এটিকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছেন।
৬. তৃতীয় লিঙ্গের উপর বিতর্কিত বক্তব্য: ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন যে তিনি একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার ফলে এটি আমেরিকার সরকারের আনুষ্ঠানিক নীতি হয়ে উঠেছে যে মাত্র দুটি লিঙ্গ আছে—পুরুষ এবং মহিলা।
৭. ক্রিটিক্যাল রেস থিওরির উপর নিষেধাজ্ঞা: ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি পাবলিক স্কুল থেকে ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি (CRT) সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ এটি আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থাকে ক্ষতি করছে।
৮. জলবায়ু পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বিচ্ছেদ: ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত "ঘোটালার" অবসান ঘটিয়েছেন। এর অধীনে তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকাকে বের করে দিয়েছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ (UNHRC) থেকেও বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
৯. ডিমের দাম এবং অর্থনৈতিক সংস্কার: ট্রাম্প বলেছিলেন যে বর্তমান সময়ে ডিমের দাম অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠেছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তাঁর সরকার আমেরিকাকে আবার "সস্তা" এবং "সুলভ" করার দিকে কাজ করবে।
১০. ডেমোক্র্যাটিক উইমেনস ককাসের প্রতিবাদ: ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটিক উইমেনস ককাসের অনেক মহিলা সংসদ সদস্য গোলাপী রঙের প্যান্টসুট পরে সংসদে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই বক্তৃতাকে তাঁর সমর্থকরা আমেরিকার পুনর্জাগরণ হিসেবে দেখেছেন, অন্যদিকে তাঁর সমালোচকরা এটিকে বিভাজনকারী নীতির বিস্তার হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।