সিরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী ও পদচ্যুত রাষ্ট্রপতি আসাদের সমর্থকদের মধ্যে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে, যাতে দুই দিনে ১০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, এটিকে ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় হিংসা বলে মনে করা হচ্ছে।
Syria: সিরিয়ার পরিস্থিতি ক্রমশই অবনতি হচ্ছে। দুই দিন ধরে চলা হিংসায় ১০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলছে নিরাপত্তা বাহিনী ও পদচ্যুত রাষ্ট্রপতি বশর আল-আসাদের সমর্থকদের মধ্যে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৪ বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ হিংসা, যা দেশটিকে আবারও অস্থিরতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।
হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ ধাঁচ
ব্রিটেনে অবস্থিত সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ৭৪৫ জন বেসামরিক নাগরিককে অত্যন্ত কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। এছাড়াও, ১২৫ জন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং ১৪৮ জন আসাদ সমর্থক উগ্রবাদী নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, লাতাকিয়া শহরের আশেপাশে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে স্থানীয় নাগরিকদের প্রচণ্ড সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
কীভাবে হিংসা ছড়িয়ে পড়ল?
সিরিয়ার নতুন সরকার এই হিংসার জন্য আসাদ সমর্থকদের দায়ী করেছে। সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, তারা আসাদ সমর্থক যোদ্ধাদের হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
হিংসার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার উপকূলীয় শহর জাবলেহের কাছে হয়, যখন নিরাপত্তা বাহিনী একটি ওয়ান্টেড ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করে। এ সময় আসাদ সমর্থকরা হঠাৎ করে হামলা চালায়, যার ফলে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
শুক্রবার পরিস্থিতি আরও অবনতি হয় যখন আসাদ সমর্থক সুন্নি মুসলিম বন্দুকধারীরা সংখ্যালঘু আলাওয়ী সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর হামলা শুরু করে। এরপর থেকে দেশজুড়ে সংঘর্ষ চলছে।
হায়াত তাহরির আল-শামের জন্য বড় ধাক্কা
এই হিংসার ফলে হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS)-এর বড় ধাক্কা লেগেছে। HTS হল সেই বিদ্রোহী সংগঠন, যারা আসাদ শাসনকে উৎখাত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এখন যখন আসাদ সমর্থকরা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছে, তখন সিরিয়া আবারও একটি নতুন গৃহযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
সিরিয়ার জেলে ভয়াবহ অত্যাচার
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসাদ শাসনের সময় জেলে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কেবলমাত্র সাইদনায়া জেলেই ৩০,০০০-এরও বেশি বন্দী নিহত হয়েছে।
সাইদনায়া জেলকে বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর জেলগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে নির্যাতন, হত্যা এবং জোরপূর্বক অপহরণের ঘটনা স্বাভাবিক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সালের পর থেকে এই জেল আসাদ শাসনের নিষ্ঠুর নীতি বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
সিরিয়া কি আবার গৃহযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে?
দেশে নিরাপত্তা বাহিনী ও আসাদ সমর্থকদের মধ্যে বর্ধমান হিংসা দেখে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে সিরিয়া আরেকটি গৃহযুদ্ধের দিকে এগোতে পারে। সরকার এখন পর্যন্ত আসাদ সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি, যার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।