শাংরি-লা ডায়ালগে সিডিএস অনিল চৌহানের পাকিস্তানকে তীব্র জবাব

শাংরি-লা ডায়ালগে সিডিএস অনিল চৌহানের পাকিস্তানকে তীব্র জবাব
সর্বশেষ আপডেট: 31-05-2025

সিডিএস অনিল চৌহান শাংরি-লা ডায়ালগে পাকিস্তানকে তীব্র জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে ভারত এখন কৌশলগতভাবে কাজ করছে এবং পাকিস্তান থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই উত্তম।

সিঙ্গাপুর: ভারত এখন বদলে গেছে, এবং এর সাথে সাথে কৌশলও সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে। সিঙ্গাপুরের শাংরি-লা ডায়ালগে ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান পাকিস্তানকে তীব্র জবাব দিয়ে বলেছেন যে, যদি পাকিস্তান কেবলমাত্র শত্রুতা করে, তাহলে ভারতের জন্য দূরত্ব বজায় রাখাই সর্বোত্তম কৌশল। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ভারত এখন অযৌক্তিকভাবে নয়, প্রতিটি পদক্ষেপই পরিকল্পিতভাবে নেওয়া হচ্ছে।

শাংরি-লা ডায়ালগে ভারতের শক্তিশালী বার্তা

শাংরি-লা ডায়ালগ এশিয়ার একটি বৃহৎ প্রতিরক্ষা মঞ্চ, যেখানে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং কৌশলগত বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। এবারের আয়োজন ৩১ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে জেনারেল অনিল চৌহান 'ভবিষ্যৎ যুদ্ধ ও যুদ্ধকলা' বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন এবং 'ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন সমাধান' সেশনেও অংশগ্রহণ করেন।

সিডিএস চৌহান তার বক্তৃতায় পাকিস্তানের প্রসঙ্গে বলেছেন যে, ভারত ২০১৪ সালের পর থেকে তার কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। তিনি জানিয়েছেন যে, ভারত যখন স্বাধীন হয়েছিল, তখন পাকিস্তান সামাজিক উন্নয়ন, জিডিপি এবং জনসংখ্যা প্রতি আয়ের মতো বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের চেয়ে এগিয়ে ছিল। কিন্তু আজ ভারত প্রতিটি ক্ষেত্রেই পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং এটি কেবলমাত্র সৌভাগ্য নয়, বরং শক্তিশালী কৌশলের ফল।

পাকিস্তানকে জবাব: দূরত্বই উত্তম কৌশল

সিডিএস অনিল চৌহান পাকিস্তানকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, যদি তাদের পক্ষ থেকে কেবলমাত্র শত্রুতা আসে, তাহলে ভারতের জন্য দূরত্ব বজায় রাখাই বিবেচ্য। তিনি বলেছেন যে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, কিন্তু তালি বাজানোর জন্য দুই হাতের প্রয়োজন। যখন একদিক থেকে কেবলমাত্র শত্রুতা আসে, তখন অন্যদিক থেকে মৈত্রীর আশা করা বৃথা।

ভারতের বর্ধিত বিশ্বব্যাপী ভূমিকা

সিডিএস চৌহান তার সিঙ্গাপুর সফরকালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এবং সামরিক নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেছেন। এদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশের প্রতিনিধি রয়েছেন। এই বৈঠকগুলিতে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং অংশীদারিত্ব শক্তিশালীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়। আমেরিকার ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড (ইন্ডোপ্যাকম)-এর কমান্ডার অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল জে. পাাপারোর সাথে তার বিশেষ আলোচনা হয়, যেখানে সামরিক-সামরিক সহযোগিতা শক্তিশালীকরণ এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নতুন সুযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

চীনের কৌশলে পরিবর্তন

শাংরি-লা ডায়ালগে এবার চীন তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে পাঠায়নি, যা একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চীনের পক্ষ থেকে পিপলস লিবারেশন আর্মির ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির একটি প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। গত কয়েক বছরে চীনের আচরণে পরিবর্তন দেখা গেছে, বিশেষ করে তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে আমেরিকার সাথে উত্তেজনার মধ্যে। এই মঞ্চে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিবের বক্তৃতাও বেশ আলোচিত হয়েছে, কারণ এতে ট্রাম্প প্রশাসনের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রতিরক্ষা নীতির ছাপ দেখা গেছে।

ভারতের পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি

জেনারেল চৌহান এও উল্লেখ করেছেন যে, ভারত এখন তার প্রতিরক্ষা বিষয়গুলিতে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিতে ভারতের জোর স্পষ্ট। সামরিক সরঞ্জামের স্বদেশীকরণ, 'মেক ইন ইন্ডিয়া'-এর অধীনে প্রতিরক্ষা উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নতুন প্রযুক্তিগত সমাধান গ্রহণ ভারতের অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে।

ভারত কেবলমাত্র আঞ্চলিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে না, বরং বিশ্বব্যাপীও তার অবস্থান শক্তিশালী করছে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের সক্রিয়তা এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে বিশ্বজুড়ে ভারতের কৌশলের প্রশংসা হচ্ছে।

কী শাংরি-লা ডায়ালগ?

শাংরি-লা ডায়ালগ এমন একটি মঞ্চ যেখানে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর সূচনা হয় ২০০২ সালে এবং তখন থেকেই এটি প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সম্মেলনে ৪৭টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ৪০টির বেশি মন্ত্রী-স্তরীয় প্রতিনিধি ছিলেন।

ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রঁকে এবার উদ্বোধনী বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যা এই মঞ্চের বর্ধিত বিশ্বব্যাপী গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।

Leave a comment