সৌদি আরবে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের নেতৃত্বে ৫টি বড় পরিবর্তন: নারীদের গাড়ি চালানোর স্বাধীনতা, কূটনীতিকদের মদ্যপানের অনুমতি, ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা হ্রাস, বিনোদন ক্রান্তি এবং ভিশন ২০৩০-এর অধীনে অর্থনৈতিক সংস্কার।
সৌদি আরব: একসময় সৌদি আরবকে এমন একটি দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হতো যেখানে ঐতিহ্যই সবকিছু এবং পরিবর্তনের সুযোগ খুবই কম ছিল। কিন্তু এখন, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)-এর নেতৃত্বে সৌদি আরব ধীরে ধীরে একটি আধুনিক সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভিশন ২০৩০ দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে বড় ধরণের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে প্রিন্স সালমানের পাঁচটি বড় সিদ্ধান্ত সৌদি আরবকে একটি নতুন পরিচয় দিয়েছে।
১. নারীদের গাড়ি চালানোর স্বাধীনতা
সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া সম্ভবত প্রিন্স সালমানের সবচেয়ে বিপ্লবী সিদ্ধান্ত ছিল। ২০০৮ সালে নারীদের উপর থেকে দশকের পুরনো গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এই পদক্ষেপটি শুধুমাত্র গাড়ি চালানোর স্বাধীনতা নয়, বরং নারীদের সবলীকরণের দিকে একটি শক্তিশালী বার্তা ছিল।
আজ সৌদি আরবের রাস্তায় নারীরাও পুরুষদের মতো গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই সিদ্ধান্তের পর নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণও বেড়েছে। আইএমএফ-এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালের মধ্যে সৌদি আরবে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ৩৬% এ পৌঁছেছে, যখন এমবিএস-এর লক্ষ্য ছিল ৩০%, যা সময়ের আগেই অর্জন করা হয়েছে।
নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়ার পর তারা আরও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে, অফিসে যাওয়া, সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া বা কেনাকাটা করা এখন তাদের জন্য সহজ হয়েছে। এই পরিবর্তন সৌদি আরবের পরিবর্তিত চিন্তাধারা এবং ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ করে।
২. কূটনীতিকদের মদ্যপানের স্বাধীনতা
সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে তার কঠোর ইসলামী ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত ছিল, যেখানে মদ্যপান নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের শুরুতে একটি বড় পরিবর্তন দেখা গেছে, যখন রিয়াদে প্রথমবারের জন্য একটি সরকারী লাইসেন্সপ্রাপ্ত বার খোলা হয়েছে।
যদিও, এই বারটি এখনও শুধুমাত্র অ-মুসলিম কূটনীতিকদের জন্য, তবে এই পদক্ষেপটি দেখায় যে সৌদি আরব এখন ধীরে ধীরে তার নিয়মাবলী আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী রূপান্তরিত করছে। সরকারের উদ্দেশ্য হল দেশে অবৈধ মদ্যপানের ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করা।
ভবিষ্যতে আশা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে সৌদি আরব তার পর্যটন স্পটগুলিতে অ-মুসলিম পর্যটকদের মদ্যপানের অনুমতি দিতে পারে। এটি শুধুমাত্র বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করবে না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনা যোগ করবে।
৩. ধর্মীয় পুলিশের উপর নিয়ন্ত্রণ
সৌদি আরবে একসময় ধর্মীয় পুলিশ, যাদের মুতাওয়া বলা হতো, মানুষের জীবনে অনেক নিয়ন্ত্রণ রাখত। এই পুলিশই সিদ্ধান্ত নিত যে মানুষ কী পরবে, কার সাথে দেখা করতে পারবে এবং জনসাধারণের স্থানে কেমন আচরণ করবে। কিন্তু এমবিএস-এর আগমনের পর এই ব্যবস্থায়ও বড় পরিবর্তন এসেছে।
এখন মুতাওয়ার কারও গ্রেফতার করার অধিকার নেই। দোকানগুলি নামাজের সময় বন্ধ করার বাধ্যবাধকতাও তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে সৌদি নাগরিক এবং পর্যটকরা একটি আরও উন্মুক্ত এবং উদার পরিবেশ পেয়েছে, যেখানে তারা ইচ্ছামতো জীবনযাপন করতে পারে।
৪. বিনোদন ও সংস্কৃতিতে বিপ্লব
কিছু বছর আগেও সৌদি আরবে না মিউজিক ফেস্টিভাল হতো, না বড় বড় আন্তর্জাতিক শিল্পীরা পারফর্ম করতে আসত। কিন্তু প্রিন্স সালমানের ভিশন ২০৩০ এই পরিবেশকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে।
এখন রিয়াদ-এর মতো শহরগুলিতে জেনিফার লোপেজ এবং হ্যাল বেরি-এর মতো বিশ্বব্যাপী তারকার অনুষ্ঠান হচ্ছে। ফ্যাশন শো, নাইট ইভেন্ট এবং লাইভ মিউজিক পারফরম্যান্স এখন সৌদির পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। এটি সৌদি যুবকদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা এবং দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষদের জন্য একটি বড় আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
৫. ভিশন ২০৩০ এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য
ক্রাউন প্রিন্স সালমানের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হল সৌদির অর্থনীতিকে তেলের উপর কম নির্ভরশীল করা। এর জন্য তিনি "ভিশন ২০৩০" চালু করেছেন, যার উদ্দেশ্য হল পর্যটন, প্রযুক্তি এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রকে উন্নত করা।
সৌদি আরবে নিওম-এর মতো মেগা প্রজেক্টগুলির উপর কাজ চলছে, যা একটি ভবিষ্যতবানী শহর হবে। এখানে স্মার্ট সিটি, বিলাসবহুল আবাসিক সম্পত্তি এবং প্রযুক্তি কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হল সৌদিকে একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা এবং পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলা।
```