পাঁচ বছর পর রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ১০,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেন সেবা পুনরায় চালু হয়েছে। মস্কো থেকে পিয়ংইয়াং পর্যন্ত এই যাত্রা ৮ দিনে সম্পন্ন হবে, যা দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।
ট্রেন: রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ১০,২১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেন সেবা পুনরায় চালু হচ্ছে। এটি কেবলমাত্র যাত্রী পরিষেবা নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও কৌশলগত জোটের অংশ। এই সেবার মাধ্যমে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের চলাচল সহজ হবে। এই রেলপথ রাশিয়ার যুদ্ধ কৌশল এবং উত্তর কোরিয়ার ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করে।
ট্রেন সেবা পুনরায় চালু, কিন্তু উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পর্যটন নয়
মস্কো ও পিয়ংইয়াংয়ের মধ্যে ১০,২১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ট্রেন সেবা ১৭ জুন থেকে পুনরায় চালু হচ্ছে। কোভিড-১৯-এর সময় এই সেবা বন্ধ ছিল। তবে, এবার এই রুট কেবলমাত্র পর্যটন বা যাত্রী পরিষেবার জন্য নয়, বরং কৌশলগত ও সামরিক উদ্দেশ্যের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
দৃশ্যাবলী উপভোগের চেয়ে বেশি একটি সামরিক লজিস্টিক্স নেটওয়ার্ক
এই রেলপথ সাইবেরিয়ার সুন্দর প্রকৃতি, ইউরাল পর্বতমালা এবং বাইকাল হ্রদ যেমন প্রাকৃতিক আশ্চর্যের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। ৮টি টাইম জোন এবং ৮৬টি শহর অতিক্রম করে এই যাত্রা নিজেই রোমাঞ্চকর। কিন্তু প্রকৃত উদ্দেশ্য হল সামরিক ও কৌশলগত সহযোগিতা। উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সৈন্য সরবরাহ করে চলেছে। উপগ্রহ চিত্র থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে উত্তর কোরিয়া ইতোমধ্যেই রাশিয়াকে সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। এই ট্রেন সেবার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং সুগম হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বর্ধিত সামরিক সহযোগিতা
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে রাশিয়াকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। উত্তর কোরিয়া এই ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উত্তর কোরিয়া ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছে যে তারা রাশিয়াকে ১০,০০০ সৈন্য ও অস্ত্র পাঠিয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের প্রতি সর্বজনীনভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
কৌশলগত অংশীদারিত্বের আওতায় পরিবহন নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ
গত বছর পুতিন ও কিম জং উনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরের পর, দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এর পরবর্তী ধাপ। এই রেল সেবা পিয়ংইয়াং থেকে মস্কো পর্যন্ত প্রতি মাসে দুইবার চলবে। একটি ট্রিপ ৮ দিনের হবে। ট্রেন প্রতি মাসে ৩ ও ১৭ তারিখে ছেড়ে যাবে এবং পরের দিন ফেরার যাত্রা শুরু হবে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধতা
রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া উভয়ই পশ্চিমা দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। এই অবস্থায় এই রেলপথ দুই দেশকে এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সহযোগিতা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ প্রদান করে। এছাড়াও রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে কাঁচা তেল ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে, অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে অস্ত্র ও সৈন্য সরবরাহ করছে। এই রেলপথ এই সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়।
চীনের সাথে বিকল্প আঞ্চলিক জোট গঠনের দিকে পদক্ষেপ
উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার এই জোট পূর্ব এশিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলির প্রভাবকে ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশলের অংশ হতে পারে। উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, এই অংশীদারিত্ব আমেরিকা, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যেমন দেশগুলির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের জবাব।
