লস অ্যাঞ্জেলেসে অ্যাপল স্টোর লুণ্ঠন, কারফিউ জারি

লস অ্যাঞ্জেলেসে অ্যাপল স্টোর লুণ্ঠন, কারফিউ জারি
সর্বশেষ আপডেট: 11-06-2025

লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রদর্শনের সময় অ্যাপল স্টোর লুণ্ঠিত, বহু এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে কারফিউ জারি।

California Violence: আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে গত কয়েকদিন ধরে চলা বিক্ষোভ প্রদর্শন হঠাৎ করেই সহিংস আকার ধারণ করেছে। সোমবার রাতে শহরের বিখ্যাত অ্যাপল স্টোরে লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অনেক মুখোশধারী বিক্ষোভকারী স্টোরে ঢুকে আইফোন, ম্যাকবুক ও অন্যান্য ব্যয়বহুল গ্যাজেট লুণ্ঠন করছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল লুণ্ঠনের ভিডিও

একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে লুণ্ঠনকারীরা স্টোর থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও লুণ্ঠন সংঘটিত হওয়ায় শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রাস্তায় সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ

লুণ্ঠনের ঘটনা শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। শহরের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে। বিক্ষোভকারীরা বহু যানবাহন আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে এবং অনেক দোকানপাট ভাংচুর করেছে। প্রদর্শনের সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে।

মেয়র ক্যারেন বাস কারফিউ জারি করেছেন

পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন বাস রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারির ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কারফিউ কয়েকদিন চলতে পারে। তবে এটি সেসব ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হবে না যারা এলাকায় বসবাস করেন অথবা সেখানে কাজ করেন। মেয়র স্পষ্ট করে বলেছেন, সহিংসতা ছড়ানো যে কাউকে ক্ষমা করা হবে না এবং তাদেরকে দায়ী করা হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ

লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়া এই অরাজকতার জেরে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প শহরে অতিরিক্ত ২০০০ ন্যাশনাল গার্ড ও ৭০০ মেরিন সৈন্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে ২০০০ গার্ড ইতোমধ্যেই মোতায়েন ছিল। এই সিদ্ধান্তের পর শহরে সৈন্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

গভর্নর গ্যাভিন নিউসোমের বিরোধিতা

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম। তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের অধিকার লঙ্ঘন করে এবং এটি উস্কানিমূলক পদক্ষেপ। তাঁর মতে, এটি জনসাধারণের নিরাপত্তার বিষয় নয়, বরং এটি রাষ্ট্রপতির অহংকারকে তুষ্ট করার চেষ্টা।

প্রদর্শনের পেছনে কারণ: অভিবাসন নীতি

এই সহিংস ঘটনার পেছনে প্রধান কারণ হল ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি। সম্প্রতি আমেরিকান ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) সংস্থা লস অ্যাঞ্জেলেসের বহু এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১৮ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে।

এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। ফ্যাশন ডিস্ট্রিক্ট, কম্পটন ও হোম ডিপোর মতো এলাকায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে, যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সরকারি ভবনে হামলা করে।

পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ

প্রদর্শনের সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও ফ্লাশ-ব্যাং গ্রেনেড ব্যবহার করে। এর ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের দাবি, উশৃঙ্খলদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদেরকে শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে।

ICE-এর অভিযান ও লেটিনো সম্প্রদায়ের ক্ষোভ

ICE দাবি করেছে, তারা গ্রেটার এলএ এলাকায় আরও ৭৭ জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। এই কর্মকাণ্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু লেটিনো সম্প্রদায় এই পদক্ষেপকে বৈষম্যমূলক বলে মনে করছে, যার ফলে ক্ষোভ আরও বেড়েছে।

Leave a comment