শ্রীলঙ্কায় রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমার দিসানায়কে-এর নেতৃত্বে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) দল সংসদীয় নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। এই জয়কে দীর্ঘদিন ধরে জনগণের মধ্যে বিরাজমান দুর্নীতি এবং অকার্যকর শাসনের বিরুদ্ধে জনরোষের ফল বলে মনে করা হচ্ছে।
কোলম্বো: শ্রীলঙ্কায় রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমার দিসানায়কে-এর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) দল সংসদীয় নির্বাচনে চমৎকার জয় অর্জন করেছে। প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, এনপিপি ৭০% ভোট পেয়েছে, যা দলের জনসমর্থনের বিস্তার বুঝিয়ে দেয়। প্রধান বিরোধী দল সমগি জন বালবেগয়া (এসজেবি) মাত্র ১১% এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রানিল বিক্রমাসিংহের সমর্থিত ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) মাত্র ৫% ভোট পেয়েছে। এনপিপি বিশেষ করে দক্ষিণ প্রদেশের রাজধানী গ্যালেতে ৭০% এর বেশি ভোট পেয়ে সিদ্ধান্তমূলক জয় অর্জন করেছে।
এই নির্বাচনী ফলাফল দেশে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। শ্রীলঙ্কা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গুরুতর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে এবং এনপিপির এই জয় জনগণের সেই সমস্যার সমাধানের আশাকে প্রতিফলিত করে। অনুরা কুমার দিসানায়কে-এর দল দুর্নীতিমুক্ত শাসন এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার ফলে জনগণ তাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে।
ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার ৭০ শতাংশ ভোট পেয়েছে
শ্রীলঙ্কায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। দেশের ২.১ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১.৭ কোটির বেশি নিবন্ধিত ভোটার পাঁচ বছরের জন্য তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করেছে। বৃহস্পতিবার ৬৫% ভোটগ্রহণ রেকর্ড করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কার সংসদে মোট ২২৫টি আসন রয়েছে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য যেকোনো দলকে কমপক্ষে ১১৩টি আসন প্রয়োজন। এইবারের নির্বাচনে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে চমৎকার জয় অর্জন করেছে।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় এর আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে জনগণ এনপিপি এবং তাদের প্রতিশ্রুতির উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে, যা অর্থনৈতিক সংস্কার এবং দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচী কেন্দ্রিক।
অর্থনৈতিক সংকটের পর প্রথম সংসদীয় নির্বাচন
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের পর এটি প্রথম সংসদীয় নির্বাচন ছিল। অর্থনৈতিক সংকটের সময় দেশকে জ্বালানি, খাদ্য এবং ওষুধের তীব্র ঘাটতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, যার ফলে জনগণের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজপাক্ষেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
এইবারের নির্বাচনে ৮,০০০ এর বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এই নির্বাচন বর্তমান রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমার দিসানায়কে এবং তাঁর দল ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি)-এর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সরকার দলের জন্য এই নির্বাচন তাদের নীতির উপর জনগণের বিশ্বাসের পরীক্ষা ছিল। এনপিপি অর্থনৈতিক সংস্কার এবং স্বচ্ছ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, যা জনসমর্থনের ইঙ্গিত বহন করে।
