সম্ভলে গত ১৮০ দিন আগে জামা মসজিদের সমীক্ষা নিয়ে যা হিংসা শুরু হয়েছিল, তার পর থেকে পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যেখানে আগে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ ছিল, সেখানে এখন উন্নয়নমূলক কাজ এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের চিত্র দেখা যাচ্ছে।
উত্তর প্রদেশ: সম্ভল জেলায় গত বছর ২৪ নভেম্বর ২০২৪ জামা মসজিদের সমীক্ষার সময় যা হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল, তার ১৮০ দিন পূর্ণ হয়েছে। সেদিন যে উত্তেজনা ও ভয়ের পরিবেশ ছিল, তার চেয়ে অনেক উন্নত পরিস্থিতি এখন সম্ভলে দেখা যাচ্ছে। প্রশাসন ও স্থানীয়দের যৌথ প্রয়াসে জেলার চেহারা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। যেখানে একসময় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা শহরকে জড়িয়ে ধরেছিল, সেখানে আজ উন্নয়ন, শান্তি ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
জামা মসজিদ হিংসার পর সম্ভলের বদলানো চেহারা
২৪ নভেম্বর ২০২৪ জামা মসজিদ চত্বরের সমীক্ষা নিয়ে যে বিতর্কিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা সম্ভলকে আবারও দেশজুড়ে সংবাদপত্রের শিরোনামে নিয়ে এসেছিল। সেদিনের হিংসা পুরো জেলায় অশান্তি ছড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ১৮০ দিন পর পরিস্থিতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। প্রশাসন নিরাপত্তার কঠোর ব্যবস্থা করেছে এবং সকল ধর্মীয় স্থানের পাশাপাশি জনসাধারণের স্থানে শান্তি বজায় রাখার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রাচীন শ্রী কার্তিকেয় মহাদেব মন্দিরের পুনঃউদ্বোধন
হিংসার ২২ দিন পর, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, সম্ভলের বাইরে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শ্রী কার্তিকেয় মহাদেব মন্দিরের দরজা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই মন্দির অনেক বছর ধরে বন্ধ ছিল এবং চার দেওয়ালে ঘেরা ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে এই চার দেওয়াল সরিয়ে মন্দিরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করা হয়, যাতে এএসপি শ্রীশচন্দ্র ও সিও অনুজ চৌধুরীও অংশগ্রহণ করেন।
মন্দিরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পর থেকে শিবরাত্রি, হোলি ও দুর্গাপুজোর মতো প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলিতে পূজা-পাঠ ও ভজন-কীর্তনের আয়োজন নিয়মিতভাবে হচ্ছে। মন্দিরটি গেরুয়া রঙে রঙ করা হয়েছে এবং নিরাপত্তার জন্য পিএসি, পুলিশ বাহিনী এবং সিসিটিভি ক্যামেরাও স্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করা হচ্ছে যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মজবুত করা যায়।
ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক মানচিত্র: নতুন পরিচয়ের দিকে পদক্ষেপ
- সম্ভল শহরের ভেতরে ও আশেপাশে অনেক স্থানে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিমা স্থাপনের কাজ জোরদারভাবে চলছে।
- চন্দৌসী চৌরাহায় সম্রাট পৃথ্বীরায় চৌহানের প্রতিমা স্থাপনের জন্য প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে।
- শঙ্কর কলেজ চৌরাহায় ভগবান পরশুরামের মূর্তি স্থাপন করা হবে।
- মনোকামনা মন্দিরের পাশে সদভাবনা পার্কে মা আহিল্যাবাই হোলকারের মূর্তি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
- নখাসা-হিন্দুপুরা খেড়ায় ভারতরত্ন ডঃ এ.পি.জে. আব্দুল কালামের প্রতিমা এবং ঠের মহল্লার অটল বাল উদ্যান পার্কে ভারতরত্ন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রতিমা স্থাপন করা হবে।
- এই সকল স্থান জামা মসজিদ থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত, যার ফলে সম্ভলের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক মানচিত্র একটি নতুন রূপে আকার নিচ্ছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও চৌকির আধুনিকায়ন
নিরাপত্তা নিয়েও বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্ভল জেলার সত্যব্রত পুলিশ চৌকি দুই তলা করে মজবুত করা হয়েছে যাতে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা আরও কার্যকরভাবে বজায় রাখা যায়। চৌকিতে পুলিশ বাহিনী ২৪ ঘন্টা মোতায়েন থাকে এবং ক্রমাগত নজরদারি রাখে। পুলিশ বিভাগেও কিছু বড় পরিবর্তন হয়েছে। বিবাদিত বক্তব্য ‘৫২ জুম্মে হোলি একবার’ নিয়ে আলোচনায় আসা সিও অনুজ চৌধুরীর কর্মক্ষেত্র চন্দৌসীতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই বক্তব্যের সমর্থন করেছিলেন, কিন্তু বদলির মাধ্যমে বিভাগীয় শৃঙ্খলা ও স্থানীয় অনুভূতির দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, মন্দির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নেতৃত্ব দেওয়া এএসপি শ্রীশচন্দ্রকে ইটাওয়া দেহাতে পাঠানো হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মজবুত করার দিকে পদক্ষেপ
সম্ভল জেলায় গত কয়েক বছর ধরে সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল পরিবেশ ছিল। কিন্তু নভেম্বর ২০২৪-এর হিংসার পর প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সকল সম্প্রদায়কে স্বাধীনভাবে তাদের বিশ্বাস পালনের অধিকার দিয়েছে, পাশাপাশি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের নীতি স্পষ্ট, সকল ধর্মের সম্মান করা হবে এবং ধর্মীয় স্থান নিয়ে সমতা ও সম্প্রীতি বজায় থাকবে। এই দিকে সম্ভল প্রশাসন অনেক নতুন উদ্যোগ শুরু করেছে, যা জেলাটিকে একটি নতুন পরিচয় ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে।
সম্ভলের পরিস্থিতিতে যে পরিবর্তন এসেছে, তা স্পষ্ট করে যে হিংসার পরও উন্নয়ন ও শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। মন্দির খোলার থেকে শুরু করে নতুন সাংস্কৃতিক স্থাপনার স্থাপনা পর্যন্ত, নিরাপত্তা ব্যবস্থার কঠোর ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সংস্কার পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপ সম্ভলকে একটি সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ জেলা গঠনের দিকে নির্দেশ করে।