কন্নড় অভিনেত্রী রানিয়া রাও ১৪ কিলো সোনা পাচার মামলায় গ্রেফতার। তদন্তে তার ৪৫টি সন্দেহজনক দুবাই ভ্রমণ, হওয়ালা লেনদেন এবং ভুয়ো কোম্পানির সাথে জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে।
Ranya Rao case: কন্নড় অভিনেত্রী রানিয়া রাওকে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে ১৪ কিলোর বেশি সোনার সাথে গ্রেফতারের ১৫ দিন হয়ে গেছে। এই মামলার তদন্ত করছে প্রয়োগ নির্দেশালয় (ED) এবং রাজস্ব গোয়েন্দা নির্দেশালয় (DRI), যেখানে প্রতিদিনই নতুন তথ্য উঠে আসছে। তদন্তকারীরা রানিয়ার আন্তর্জাতিক ভ্রমণ, সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন এবং হওয়ালা নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত থাকার বেশ কিছু স্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়েছেন। ক্রমশ উঠে আসা তথ্য থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, এটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ পাচার মামলা নয়, বরং একটি সংগঠিত নেটওয়ার্কের অংশ, যেখানে রানিয়ার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পিতার সাথেও জিজ্ঞাসাবাদ
তদন্ত সংস্থাগুলি রানিয়ার দুবাই ভ্রমণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সন্দেহ প্রকাশ করছে। রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে তিনি ৫২ বার দুবাই ভ্রমণ করেছেন, যার মধ্যে ৪৫ বার একদিনের মধ্যেই ফিরে এসেছেন। ২০২৫ সালের প্রথম দুই মাসেই তিনি ২৭ বার দুবাই ভ্রমণ করেছেন, যার বেশিরভাগই বেঙ্গালুরু, গোয়া এবং মুম্বাই পথে হয়েছে। এই ধরণের ঘটনা অত্যন্ত সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ একজন সাধারণ পর্যটকের জন্য এতবার দুবাই যাওয়া অস্বাভাবিক।
এছাড়াও, রানিয়ার সৎপিতা রামচন্দ্র রাও, যিনি DGP পদমর্যাদার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, তাঁর সাথেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, তাঁর প্রভাবশালী পদ ব্যবহার করে কি পাচার নেটওয়ার্ককে রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছিল কিনা।
রাজস্ব গোয়েন্দা নির্দেশালয় আদালতে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ
মামলার শুনানির সময় রাজস্ব গোয়েন্দা নির্দেশালয় (DRI) আদালতে জানিয়েছে যে রানিয়া রাওয়ের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তরুণ রাজুও এই পাচার নেটওয়ার্কে জড়িত। তদন্তে উঠে এসেছে যে তরুণ রাজুও ২৬ বার দুবাই ভ্রমণ করেছেন এবং তাঁর ভ্রমণের ধরণও রানিয়ার মতোই ছিল—সকালে দুবাই যাওয়া এবং সন্ধ্যার মধ্যে ভারতে ফিরে আসা। এই ভ্রমণ কেবলমাত্র এক বা দুইবার নয়, বারবার করা হয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট যে এটি কোনও সাধারণ ভ্রমণ ছিল না, এর পিছনে কোনও বড় ষড়যন্ত্র ছিল।
সন্দেহজনক ব্যবসায়িক লেনদেন, হওয়ালা ব্যবসার সন্দেহ
তদন্তে আরও একটি বড় তথ্য উঠে এসেছে যে ২০২৩ সালে রানিয়া দুবাইতে "ভীরা ডায়মন্ডস ট্রেডিং" নামে একটি কোম্পানি নিবন্ধন করেছিলেন। কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন যে এই কোম্পানিটি মনি লন্ডারিংয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে সোনা পাচারের অর্থকে বৈধ করে দেখানো হচ্ছিল। একইভাবে, তাঁর সঙ্গী তরুণ রাজু ২০২২ সালে বেঙ্গালুরুতে "বায়ো এনহো ইন্ডিয়া" নামে একটি কোম্পানি শুরু করেছিলেন, যা পরে "জিরোদা ইন্ডিয়া" করে পরিবর্তন করা হয়। এত কম সময়ের মধ্যে এতগুলি কোম্পানি গঠন এবং আর্থিক লেনদেন তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে অবাক করে দিয়েছে।
কর্মকর্তারা দেখেছেন যে এই কোম্পানিগুলির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা অর্থ সন্দেহজনক উৎস থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। এটিকে সোনা পাচারের অবৈধ অর্থের সাথে সরাসরি যুক্ত করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন যে রানিয়া রাও এবং তাঁর সহযোগীরা এই অর্থকে বৈধ করার জন্য এই কোম্পানিগুলি ব্যবহার করছিলেন।