ভারতের ডোজিয়ারে প্রমাণসহ পাকিস্তানকে আবার গ্রে লিস্টে ফেরানোর দাবি

ভারতের ডোজিয়ারে প্রমাণসহ পাকিস্তানকে আবার গ্রে লিস্টে ফেরানোর দাবি
সর্বশেষ আপডেট: 24-05-2025

ভারত FATF-কে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদী অর্থায়নের প্রমাণসহ একটি ডোজিয়ার পাঠিয়েছে। জুন মাসে FATF-এর বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে, যার ফলে পাকিস্তান আবার গ্রে লিস্টে ফিরে যেতে পারে।

নয়াদিল্লি: ভারত পুনরায় পাকিস্তানের দ্বৈত নীতি এবং সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মোদী সরকার এখন আর্থিক অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) এর কাছে পাকিস্তানকে আবার গ্রে লিস্টে ফেরানোর দাবি জানাতে যাচ্ছে। এর জন্য ভারতের পক্ষ থেকে FATF-কে একটি বিস্তারিত ডোজিয়ার জমা দেওয়া হবে, যাতে সন্ত্রাসবাদী অর্থায়ন এবং মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত প্রমাণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

ডোজিয়ারে সেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের তথ্য থাকবে যারা পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডকে প্রকাশ্যেই উৎসাহিত করছে এবং তাদের অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করছে।

জুনে FATF-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, ভারত উত্থাপন করবে বিষয়টি

FATF-এর পরবর্তী বড় বৈঠক জুন ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ভারতের কর্মকর্তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাবেন। ভারত আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুসারে এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে উত্থাপন করবে এবং কঠোর তদন্তের সাথে পাকিস্তানকে গ্রে লিস্টে ফেরানোর জন্য FATF-এর কাছে আবেদন জানাবে।

সূত্রের খবর, ভারত এবার কোনো ত্রুটি করবে না এবং মজবুত নথিভুক্ত প্রমাণের সাহায্যে পাকিস্তানের কারসাজি উন্মোচন করবে।

কেন পাকিস্তানকে আবার গ্রে লিস্টে ফেরানো জরুরী?

পাকিস্তান গত কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ভান করে বিশ্বকে দেখিয়ে আসছে, কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম। অনেক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আজও পাকিস্তানে প্রকাশ্যে কাজ করছে। ভারত তার ডোজিয়ারে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছে যা প্রমাণ করে যে পাকিস্তান এই সংগঠনগুলিকে অর্থনৈতিক সাহায্য করে।

যদি FATF পাকিস্তানকে আবার গ্রে লিস্টে ফেরায়, তাহলে পাকিস্তানের বৈদেশিক বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার উপর প্রভাব পড়বে, যার ফলে তাদের ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে।

FATF এবং পাকিস্তান: এখন পর্যন্ত ইতিহাস

  • পাকিস্তানকে প্রথমবারের জন্য ২০০৮ সালে গ্রে লিস্টে রাখা হয়েছিল।
  • ২০০৯ সালে এটিকে অস্থায়ীভাবে লিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
  • ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এটি আবার পর্যবেক্ষণে ছিল।
  • ২০১৮ সালে, পাকিস্তানকে আবার FATF-এর গ্রে লিস্টে রাখা হয়।
  • ২০২২ সালে, FATF প্লেनারির বৈঠকে পাকিস্তানকে শর্তসাপেক্ষে গ্রে লিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়, তবে সতর্কতা দেওয়া হয় যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপের সাথে মিলে কাউন্টার টেরর ফাইন্যান্সিং সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে হবে।

কী FATF এবং এর কাজ?

FATF অর্থাৎ Financial Action Task Force একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদী অর্থায়ন বন্ধ করার জন্য গঠিত। এর ৩৯ টি দেশ সদস্য রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো যে কোনও দেশে সন্ত্রাসবাদ বা অবৈধ কার্যকলাপকে অর্থনৈতিকভাবে সমর্থনকারী এমন অর্থনৈতিক নেটওয়ার্কের সন্ধান করা এবং তা বন্ধ করা।

FATF-এর গ্রে লিস্টে আসার ফলে কোনও দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ কমে যায় এবং বৈদেশিক ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

ভারতের লক্ষ্য স্পষ্ট – সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকদের উন্মোচন করা

ভারতের উদ্দেশ্য স্পষ্ট – পাকিস্তানকে সেই অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যেখানে তাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আসল ব্যবস্থা নিতে হবে, কেবলমাত্র ভান নয়। মোদী সরকার এবার কোনো ভুল করতে চায় না এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও দেখাতে চায় যে পাকিস্তান কীভাবে বিশ্বকে প্রতারিত করছে।

ভারত পূর্বেও পাকিস্তান কর্তৃক প্রদত্ত মিথ্যা দাবি এবং ভুয়া কর্মকাণ্ড উন্মোচন করেছে। এবার প্রমাণসহ FATF-এ কথা বলে ভারত আবারও কূটনৈতিকভাবে লিড নিতে চায়।

Leave a comment