পহেলগাঁও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী ও তাদের নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। ৬৪টি স্থানে তল্লাশী চালানো হয়েছে, অনেক সন্ত্রাসবাদী ও ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কারের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
জম্মু-কাশ্মীর: পহেলগাঁও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও তীব্র করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ‘অল আউট’ অভিযান শুরু করেছে।
শনিবার নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের বাড়ি ভেঙে ফেলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে, এ পর্যন্ত ৯ জন সন্ত্রাসবাদীর বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়াও, কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় ২৫০০ জনের বেশি মানুষের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
শ্রীনগরে ৬৪টি স্থানে তল্লাশী
শ্রীনগরে ৬৪টি সন্ত্রাসবাদী ও ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কারের আস্তানায় তল্লাশী চালানো হয়েছে। এই আস্তানাগুলিতে সন্ত্রাসবাদীদের সহযোগীদের বাড়ি এবং তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাশাপাশি, নিরাপত্তা বাহিনী এই সন্দেহভাজনদের বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
অনন্তনাগ ও কাশ্মীরের অন্যান্য স্থানে জিজ্ঞাসাবাদ
নিরাপত্তা বাহিনী অনন্তনাগ জেলায় ১৮৮ জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। এই সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে যাতে সন্ত্রাসবাদীদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও, কাশ্মীরের অন্যান্য স্থানেও ২৫০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় ডাকা হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদীদের বাড়ি ভাঙা অব্যাহত
শনিবার শোপিয়ানে লস্করের সন্ত্রাসবাদী শাহিদ আহমদ কুটের এবং কুলগামে সন্ত্রাসবাদী জাকিরের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর কুপওয়ারায়ও দুই লস্কর সন্ত্রাসবাদীর বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। সন্ধ্যায় শোপিয়ানের জেনাপোরায় টিআরএফ (দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট)-এর সন্ত্রাসবাদী আদনান শফি ডারের বাড়িও ভেঙে ফেলা হয়। গত চব্বিশ ঘন্টায় ওয়াদিতে মোট ৯ জন সন্ত্রাসবাদীর বাড়ি বিস্ফোরকের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনী ভেঙে ফেলেছে।
ডিজিপি দক্ষিণ কাশ্মীরে অবস্থান করেন
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিদর্শক নলিন প্রভাত জানিয়েছেন যে, তিনি দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সেখানে চলমান সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সার্বিক পর্যালোচনা করছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিটি জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা হবে যাতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটানো যায়। ভিক্টর ফোর্স তাদের কার্যাধিকার ক্ষেত্রে সকল সামরিক কমান্ডারকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান তীব্র করার এবং পেট্রোলিং বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।
যুদ্ধবিমানের মোতায়েন ও ড্রোন নজরদারি
কাশ্মীরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নিরাপত্তা বাহিনী যুদ্ধবিমানও মোতায়েন করেছে। রাজৌরি ও পুঞ্ছের উপরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান উড়ান ভরেছে, পাশাপাশি নজরদারির জন্য ড্রোনও উড়ানো হচ্ছে। এতে কাশ্মীরে নিরাপত্তার পরিবেশ আরও শক্তিশালী হয়েছে।
কাশ্মীরে ‘খুঁজে বের করে মারা’ অভিযান অব্যাহত
সন্ত্রাসবাদীদের সমূলে ধ্বংস করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী ‘খুঁজে বের করে মারা’ অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে ত্রাল, বিজবিহাড়া, আড়ু, বাইসরণ, কোকারনাগ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। এই সময় অনেক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে বিপজ্জনক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এনআইএ তদন্ত শুরু করেছে
এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) পহেলগাঁও সন্ত্রাসবাদী হামলার তদন্ত শুরু করেছে। এনআইএ কর্মকর্তারা শ্রীনগরে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সাথে বাইসরণ উপত্যকার সফর করে এবং হামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। এছাড়াও, হামলায় নিহত নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বাংলা ও ওড়িশায় পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ
এনআইএ কর্মকর্তারা বাংলায়ও হামলায় নিহত সমীর গুহার পরিবারের কাছ থেকে বিবৃতি নিয়েছে। এছাড়াও, ওড়িশার বালেশ্বর निवासी প্রয়াত প্রশান্ত সতপথীর স্ত্রী প্রিয়দর্শিনীর সাথে দিল্লি থেকে আসা তিন সদস্যের এনআইএ দল জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।