ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর এবার শুরু করল ‘মিসন পাক বেনকাশ’। ৭টি প্রতিনিধি দল ৩২টি দেশ ভ্রমণ করবে এবং পাকিস্তান প্রশ্রয়িত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন করবে।
নিউ দিল্লি: ২০২৫ সালের ২২শে এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলা সমগ্র দেশকে কাঁপিয়ে তুলেছিল। এই হামলার পর ভারত সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংস করার পর এবার ভারত আরও একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে।
ভারত সরকার এখন পাকিস্তান প্রশ্রয়িত সন্ত্রাসবাদ (Pakistan Sponsored Terrorism) -এর বিরুদ্ধে বিশ্বকে সচেতন করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে, যার নাম ‘মিসন পাক বেনকাশ’। এর অধীনে ভারত ৭টি প্রতিনিধি দল (Delegations) ৩২টি দেশে পাঠাচ্ছে। এই প্রতিনিধি দলগুলির উদ্দেশ্য হল—বিশ্বজুড়ে পাকিস্তানের দ্বৈত চরিত্রকে উন্মোচন করা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইকে আরও শক্তিশালী করা।
২১শে মে থেকে শুরু হচ্ছে মিশন
২১শে মে এই মিশনের সূচনা হবে। প্রথম প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন জনতা দল (যুক্ত)-এর कार्यकारी अध्यक्ष সংজয় झा। এই প্রতিনিধি দল জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করবে।
এই প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতারা হলেন:
- বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারাঙ্গি
- তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
- বিজেপি সাংসদ বৃজলাল
- সিপিআই সাংসদ ডাঃ জন ব্রিটাস
- কংগ্রেস নেতা সালমান খুরশিদ
- বিজেপি সাংসদ হেমাঙ্গ যোশী
- বিজেপি সাংসদ প্রদান বরুয়া
- রাজদূত মোহন কুমার
এই প্রতিনিধি দল ঐ দেশগুলির সরকার, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং মিডিয়ার সাথে দেখা করে ভারতের পক্ষ থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করবে যে পাকিস্তান কীভাবে সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দিচ্ছে এবং তাকে অর্থায়ন করছে।
মোট ৭টি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে — বিরোধী ও সরকার দল উভয়ের সমন্বয়ে
এবার বিশেষ ব্যাপার হল, ভারত সরকার কেবলমাত্র বিজেপিকে নয়, বরং সকল প্রধান বিরোধী দলকেও এই মিশনে অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রতিনিধি দলে মোট ৫১ জন নেতা এবং ৮৫ জন রাষ্ট্রদূত (Ambassadors) থাকবেন। এটি একটি বড় ইঙ্গিত যে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ভারত ঐক্যবদ্ধ।
দ্বিতীয় প্রতিনিধি দল: শ্রীকান্ত শিন্ডে নেতৃত্ব দেবেন
দ্বিতীয় প্রতিনিধি দল ২২শে মে যাত্রা শুরু করবে। এর নেতৃত্ব দেবেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের পুত্র এবং শিবসেনা সাংসদ শ্রীকান্ত শিন্ডে। এই প্রতিনিধি দলও দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি ভ্রমণ করবে।
এই প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত আছেন:
- বিজেপি সাংসদ বনশ্রী স্বরায
- আইইউএমএল সাংসদ ইটি মোহাম্মদ বশির
- বিজেপি সাংসদ অতুল গর্গ
- বিজেপি সাংসদ সস্মিতা পাট্রা
- বিজেপি সাংসদ মানন কুমার মিশ্র
- বিজেপি সাংসদ এসএস আহলুওয়ালিয়া
- রাজদূত সুজন চিনয়
তৃতীয় প্রতিনিধি দল: কনিমোঝি নেতৃত্ব দেবেন, ইউরোপ ভ্রমণ
তৃতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ডিএমকে সাংসদ কনিমোঝি। এই দল প্রথমে রাশিয়া যাবে এবং তারপর স্লোভেনিয়া, গ্রিস, লাতভিয়া এবং স্পেন ভ্রমণ করবে। এই ভ্রমণ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই দেশগুলি জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে।
চতুর্থ প্রতিনিধি দল: শশী থরুরের নেতৃত্বে আমেরিকা ভ্রমণ
চতুর্থ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন কংগ্রেস নেতা এবং সাংসদ শশী থরুর। এই দল আমেরিকা, ব্রাজিল, পানামা, কলম্বিয়া এবং গায়ানা ভ্রমণ করবে। আমেরিকাのような দেশে এই প্রতিনিধি দল ভারতের সাথে গোয়েন্দা সহযোগিতা (Intelligence Partnership) এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কৌশল নিয়ে আলোচনা করবে।
বাকি প্রতিনিধি দলগুলিও শীঘ্রই যাত্রা করবে
ভারত সরকারের মতে, বাকি তিনটি প্রতিনিধি দলও মে মাসের শেষ এবং জুন মাসের শুরুতে যাত্রা করবে। এই প্রতিনিধি দলগুলির উদ্দেশ্য কেবলমাত্র পাকিস্তানের আসল চেহারা দেখানো নয়, বরং বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যাতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি বিশ্বব্যাপী অভিযান গড়ে তোলা যায়।
কেন এই ৩২টি দেশ নির্বাচিত হয়েছে?
এই দেশগুলি বিশেষ কৌশলগত কারণে নির্বাচিত হয়েছে:
- আফ্রিকায় সন্ত্রাসবাদের বর্ধমান ঝুঁকি এবং পাকিস্তানের সাথে জড়িত নেটওয়ার্ক উন্মোচন করার জন্য
- খালিজ দেশগুলিতে সন্ত্রাসবাদী অর্থায়ন এবং পাকিস্তানের কৌশলগত দুর্বলতা প্রকাশ করার জন্য
- ইউরোপে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রভাবশালী ভূমিকা পালনকারী দেশগুলির সাথে যোগাযোগ করার জন্য
- আমেরিকার সাথে গোয়েন্দা সহযোগিতা এবং সহযোগিতা শক্তিশালী করার জন্য
- পূর্ব এশিয়ায় সমুদ্রের নিরাপত্তা এবং ইন্ডো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য
ভারতের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হবে বাস্তব প্রমাণ
এই প্রতিনিধি দলগুলির কাছে বাস্তব দলিল, ভিডিও, প্রতিবেদন এবং গোয়েন্দা তথ্য থাকবে, যার মাধ্যমে পাকিস্তানের ভূমিকা সমগ্র বিশ্বের সামনে উন্মোচিত হবে। ভারত দেখাতে চায় যে পাকিস্তান কেবলমাত্র সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না, বরং তাকে একটি কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
ভারতের এই পদক্ষেপ কেবলমাত্র কূটনৈতিক (Diplomatic) প্রচেষ্টা নয়, বরং এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তা অভিযান (National Security Campaign)। এর মাধ্যমে ভারত এই বার্তা দিতে চায় যে এখন সন্ত্রাসবাদ এবং তার সমর্থকদের সহ্য করা হবে না — দেশের ভেতরে নয়, বিশ্বেও নয়।
‘অপারেশন সিন্দুর’ কি?
‘অপারেশন সিন্দুর’ সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলির বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি বৃহৎ অভিযান ছিল। এর মাধ্যমে অনেক সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে এবং তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। ভারত এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই সীমানার বাইরেও চালানো হবে — কূটনৈতিক, আন্তর্জাতিক এবং কৌশলগত পর্যায়েও।