মধ্যপ্রদেশ মন্ত্রী বিজয় শাহের বিতর্কিত বক্তব্য: সেনা কর্মকর্তাকে ‘আতঙ্কবাদীদের বোন’ আখ্যায়িত

মধ্যপ্রদেশ মন্ত্রী বিজয় শাহের বিতর্কিত বক্তব্য: সেনা কর্মকর্তাকে ‘আতঙ্কবাদীদের বোন’ আখ্যায়িত
সর্বশেষ আপডেট: 17-05-2025

মধ্যপ্রদেশের জনজাতীয় কার্য মন্ত্রী বিজয় শাহ আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। এইবার সেনার বীর বর্ষীয়ানা মহিলা অফিসার কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে দেওয়া আপত্তিকর বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক হইচই তৈরি করেছে তাই নয়, তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে।

ভোপাল: মধ্যপ্রদেশের জনজাতীয় কার্য মন্ত্রী বিজয় শাহ আবারও তাঁর বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে আলোচনায়। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম মহিলা কর্নেল, সোফিয়া কুরেশির উপর আপত্তিকর মন্তব্য করে তিনি তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। এটি প্রথমবার নয় যখন বিজয় শাহ এ ধরণের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। এর আগেও তিনি বহুবার তাঁর বক্তব্যের কারণে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। পূর্ব মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের স্ত্রীর উপর তাঁর মন্তব্যও বেশ বিতর্কিত ছিল এবং দলকে স্পষ্টীকরণ দিতে হয়েছিল।

কর্নেল সোফিয়ার উপর বক্তব্য নতুন ঝড়

১২ মে ইন্দোরে একটি জনসাধারণের অনুষ্ঠানে বিজয় শাহ কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে অত্যন্ত আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে তাঁকে ‘আতঙ্কবাদীদের বোন’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এই মন্তব্য শুধুমাত্র মহিলা অফিসারের অপমান ছিল না, বরং ভারতীয় সেনাবাহিনী যে রকম সম্মানিত প্রতিষ্ঠান, তার উপরও সরাসরি আঘাত ছিল।

বিষয়টি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নোটিস নিতে হয়েছে। বিচারপতি অতুল শ্রীধরণ এবং অনুরাধা শুক্লের খণ্ডপীঠ এটিকে ‘গোয়ালার ভাষা’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছে যে এটি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অপমান। কোর্ট পুলিশকে অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে।

বিদ্যা বালানকে ডিনারের আমন্ত্রণ এবং শুটিং বাতিল?

২০২০ সালে বিজয় শাহ তখন সুর্খিতে ছিলেন, যখন তিনি বনমন্ত্রী ছিলেন এবং অভিনেত্রী বিদ্যা বালান মধ্যপ্রদেশের বালঘাট জেলায় তাঁর ছবি “শেরনী”র শুটিং করছিলেন। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, বিজয় শাহ বিদ্যা বালানকে ডিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যা অভিনেত্রী প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ঠিক তার পরেই, শুটিং দলকে বন এলাকায় প্রবেশের অনুমতি হঠাৎ করেই প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কংগ্রেসের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত এটিকে ক্ষমতার অপব্যবহার বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

যদিও বিজয় শাহ এই অভিযোগকে সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দিয়েছেন এবং বলেছেন যে শুটিংয়ের অনুমতি প্রদানকারীদের লঞ্চ-ডিনার প্রস্তাব আমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কিন্তু বিরোধী দলের অভিযোগ, তাঁর ‘ব্যক্তিগত অপমানের’ প্রতিশোধ সরকারি আদেশের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে।

পূর্ব মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর উপর অশোভন মন্তব্য

২০১৩ সালে ঝাবুয়া জেলায় একটি জনসভায় বিজয় শাহ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের স্ত্রীর বিষয়ে একটি অশোভন মন্তব্য করেছিলেন। এই বক্তব্যের পরে বিজেপিতে অভ্যন্তরীণ আন্দোলন শুরু হয় এবং প্রচণ্ড চাপের মুখে তাঁকে মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়। তখনও প্রশ্ন উঠেছিল যে এ ধরণের নেতাদের কি মন্ত্রী পদে থাকা উচিত?

হরসুদ (এসটি) আসন থেকে আটবার বিধায়ক নির্বাচিত বিজয় শাহের রাজনৈতিক জীবন বেশ লম্বা। তিনি শিক্ষামন্ত্রী থেকে বনমন্ত্রী এবং এখন জনজাতীয় কার্য মন্ত্রী পর্যন্ত বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৯০ সাল থেকে ক্রমাগত নির্বাচন জিতে আসা বিজয় শাহ সর্বদা তাঁর পরিষ্কার ছবির দাবি করেছেন, কিন্তু তাঁর মুখের ফাঁকি বারবার তাঁকে বিপদে ফেলে দিচ্ছে।

কংগ্রেসের আক্রমণ, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগের দাবি

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জিতু পটোয়ারী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অবিলম্বে বিজয় শাহের কাছে পদত্যাগের দাবি জানাতে হবে। কি এটাই বিজেপির জাতীয়তাবাদ, যেখানে সেনাবাহিনীর মহিলা অফিসারের এভাবে অপমান করা হয়? বর্ষীয়ান নেতা দিগ্বিজয় সিংহও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, বিজয় শাহের ভাষা বিজেপির ট্রোল আর্মির মতো। প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট করতে হবে যে তাঁর কাছে এই মন্তব্য সঠিক মনে হয়েছে কী?

মিডিয়ায় সমালোচনা এবং আদালতের কঠোরতা পরে বিজয় শাহ স্পষ্টীকরণ দিয়ে বলেছেন, যদি কারও আমার বক্তব্যে আঘাত লেগে থাকে, তাহলে আমি দশবার ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত। আমি কর্নেল সোফিয়ার শুধুমাত্র সম্মান করি না, বরং আমার বোনের চেয়েও বেশি সম্মান করি।

Leave a comment