রাজস্থানে কন্যাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার দিকে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জয়পুর ডেয়ারি ভজনলাল সরকারের সহযোগিতায় ৫ই এপ্রিল ২০২৫ থেকে ‘সরস লাড়ো মায়রা যোজনা’ শুরু করেছে।
জয়পুর: রাজস্থানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক উদ্যোগগুলিকে একসূত্রে বেঁধে জয়পুর ডেয়ারি ‘সরস লাড়ো মায়রা যোজনা’ ঘোষণা করেছে। এই যোজনাটি ৫ই এপ্রিল ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে এবং এর অধীনে নিবন্ধিত দুগ্ধ উৎপাদক কৃষকদের কন্যাদের বিবাহে ২১,০০০ টাকা করে প্রথাগত মায়রা দেওয়া হবে। এটি কেবলমাত্র আর্থিক সাহায্য নয়, বরং কন্যাদের সম্মান ও সামাজিক পরিবর্তনের দিকে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।
কন্যাদের মায়রায় এখন জয়পুর ডেয়ারি ‘মায়ের বাড়ি’র ভূমিকা পালন করবে
রাজস্থানে মায়রা কেবলমাত্র একটি রীতি নয়, মায়ের বাড়ির প্রেম ও সম্মানের প্রতীক। জয়পুর ডেয়ারি এখন সেই অনুভূতিকে বাস্তবায়িত করে প্রতিটি কৃষকের কন্যার মায়ের বাড়ির ভূমিকা পালন করবে এবং তার বিবাহে ২১ হাজার টাকা মায়রা দিয়ে সামাজিক প্রথাটিকে জীবন্ত রাখবে। জয়পুর জেলা দুগ্ধ উৎপাদক সংঘ লিমিটেডের অধীনে প্রায় ১.৫ লক্ষ নিবন্ধিত কৃষক রয়েছে। যোজনার সুবিধা লাভ করবে সেই কৃষকরা যারা ডেয়ারির সদস্য এবং যাদের কন্যার বিবাহ হতে চলেছে। এই উদ্যোগটি বিশেষ করে আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলির জন্য বরদান হিসেবে প্রমাণিত হবে।
জয়পুর ডেয়ারি: ৫০ বছরের সেবার সুবর্ণ জয়ন্তী
জয়পুর ডেয়ারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনীষ ফৌজদারের মতে, এই যোজনাটি কন্যার সম্মানের পাশাপাশি সমাজে লিঙ্গ অনুপাতের উন্নয়ন, শিশু বিবাহ প্রতিরোধ এবং কন্যা সন্তান জন্মকে উৎসাহিত করার মতো একাধিক উদ্দেশ্য পূরণ করবে। এই যোজনাটি সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং আধুনিক চিন্তার সমন্বয়। ১৯৭৫ সালে মাত্র ১৩টি কমিটি নিয়ে যাত্রা শুরু করে জয়পুর ডেয়ারি আজ ৪,০০০-এরও বেশি দুগ্ধ কমিটির নেটওয়ার্ক নিয়ে রাজস্থানের বৃহত্তম ডেয়ারিগুলোর মধ্যে একটি। স্বর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ডেয়ারি কৃষকদের এই অমূল্য উপহারটি উৎসর্গ করেছে।
প্রতিষ্ঠা: ২২ মার্চ ১৯৭৫
জাতীয় উৎসর্গ: ১৯৮১, রাষ্ট্রপতি গিয়ানি জৈল সিংহ কর্তৃক
দুধ সংগ্রহ: প্রতিদিন ৩,৫০০ লিটার
বাজারজাতকরণ: প্রতিদিন ১৫ লক্ষ লিটারেরও বেশি
প্রধান পণ্য: দুধ, দই, শ্রীখণ্ড, পনির, মাখন, ঘি, আইসক্রিম, ছাছ
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রথা থেকে অনুপ্রাণিত
রাজস্থানী সংস্কৃতিতে মায়রা দেওয়ার প্রথা নরসি ভগত এবং শ্রীকৃষ্ণের কথার সাথে যুক্ত, যখন শ্রীকৃষ্ণ একজন ভক্তের কন্যার মায়রা দিয়ে লোক প্রথাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সেই অনুভূতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জয়পুর ডেয়ারি এখন প্রতিটি কৃষকের কন্যার বিবাহে ‘শ্রীকৃষ্ণের মতো মায়রা দেওয়ার’ উদ্যোগ নিয়েছে। ৫ই এপ্রিল ২০২৫, অর্থাৎ রামনবমীর একদিন আগে এই যোজনা শুরু হবে। এই শুভ দিন কেবলমাত্র একটি যোজনার সূচনা নয়, বরং সংস্কৃতি, ভক্তি এবং সামাজিক সহযোগিতার উৎসব।
‘সরস লাড়ো মায়রা যোজনা’ একটি চমৎকার উদাহরণ যে কিভাবে একটি সমবায় সংস্থা সামাজিক পরিবর্তনের বাহক হতে পারে। এই উদ্যোগটি কেবলমাত্র কন্যাদের হাসি বাড়াবে না, বরং রাজস্থানের গ্রামগুলিতে আশা, গর্ব এবং উৎসবের নতুন কারণ সৃষ্টি করবে।