মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন কেন্দ্রের উপর ঝাড়খণ্ডের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, কৃষকদের সাহায্য, শিক্ষা-স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়ের উপর জোর দিলেন। বিজেপির নীতির তীব্র সমালোচনা করলেন।
ঝাড়খণ্ড সংবাদ: ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বৃহস্পতিবার বলেন যে, তাঁর সরকার আগামী পাঁচ বছরে দৃঢ়ভাবে কাজ করবে। রাজ্যের ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি শিশুও ২৫ বছরে পরিপক্ক হয় না, ঝাড়খণ্ডকেও সময় এবং সঠিক নির্দেশনার প্রয়োজন।
ঝাড়খণ্ডের সাথে সৎভাবে ব্যবহার না করার অভিযোগ
মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ঝাড়খণ্ডের সাথে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ঝাড়খণ্ডের ১.৩৬ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া আছে, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তা দিতে দ্বিধা করছে। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, যদি এই টাকা পুরোপুরি পাওয়া যায়, তাহলে ঝাড়খণ্ড অন্যান্য রাজ্যকে ঋণ দিতে পারবে।
আদিবাসী ও দলিতদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব
হেমন্ত সোরেন বলেন, কিছু লোক এটা পছন্দ করে না যে আদিবাসী এবং দলিত মুখ্যমন্ত্রী হন অথবা তারা বিমানে ভ্রমণ করেন। তিনি একটি সংবাদ উল্লেখ করে বলেন, একজন দলিত যুবককে শুধুমাত্র বুলেট বাইক চালানোর কারণে হয়রানি করা হয়েছে।
মনরেগা এবং বিশুদ্ধ জল পরিকল্পনায় বকেয়া টাকা
মুখ্যমন্ত্রী জানান, মনরেগার অধীনে ১২০০ কোটি টাকা বকেয়া আছে, যার ফলে গ্রামীণরা সময়মতো অর্থ পাননি। অন্যদিকে, বিশুদ্ধ জল সরবরাহের জন্য ৬০০০ কোটি টাকার প্রয়োজন।
সোরেন বিজেপির উপর আক্রমণ করে বলেন, বিরোধী দল ধর্মীয় আস্থাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, কুম্ভমেলার বিষয়ে বিজেপি তাকে অর্থনৈতিক মডেল করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এর ফলে অর্থনীতিতে কোনও ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। তিনি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে 'আইসিইউতে শয্যাশায়ী' বলে বর্ণনা করেন।
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার উপর প্রশ্ন
মুখ্যমন্ত্রী দেশে বর্ধমান সাম্প্রদায়িক ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আগে মোহররম এবং রামনবমীর সময় উত্তেজনা দেখা যেত, কিন্তু এখন হোলি এবং ক্রিকেট ম্যাচেও এমনটা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এমন সকল উপাদান আসলে কোথা থেকে আসে?
উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং নারী সবলীকরণ
মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে চালু হওয়া পরিকল্পনাগুলির কথা উল্লেখ করেন, যার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মৈয়াঁ যোজনার কথা উল্লেখযোগ্য। এর অধীনে প্রায় ৫৮ লক্ষ মহিলাকে সম্মানী দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী সময়ে এই পরিকল্পনার প্রভাব সারা দেশে দেখা যাবে।
পেনশন এবং সামাজিক নিরাপত্তা
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার পেনশন পরিকল্পনায় উন্নতি করেছে। এখন গ্রামে পেনশন ছাড়া কেউ থাকবে না। মহিলাদের জন্য পেনশনের বয়সসীমা ৫০ বছর করা হয়েছে।
ব্যাঙ্কের নীতির উপর প্রশ্ন
তিনি আরবিআই-এর নীতির উপর প্রশ্ন তুলে বলেন, ব্যাঙ্কগুলি অর্থ সংগ্রহের নতুন পন্থা খুঁজে পেয়েছে। এটিএম থেকে টাকা তোলা, অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স দেখা এবং ন্যূনতম ব্যালেন্স রাখার জন্যও চার্জ নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে গরিব ও যুবকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষক এবং শিল্পের জন্য নতুন উদ্যোগ
তিনি বলেন, এমএসএমই সেক্টরকে উন্নত করার জন্য সরকার একটি পৃথক পরিচালনালয় গঠন করবে। পাশাপাশি, চার লক্ষ কৃষকের দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মওকুফ করা হয়েছে। রাজ্যে ১.৫ লক্ষ একরে ফলবান গাছ লাগানো হচ্ছে। মেগা লিফ্ট সেচ প্রকল্পের অধীনে ২২৫৭ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে।
শিক্ষায় উন্নয়ন এবং আদিবাসী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজ্যে সিএম স্কুল অফ এক্সিলেন্স খোলা হয়েছে, যাতে ভর্তির জন্য শিশুদের মধ্যে অসাধারণ উৎসাহ দেখা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শীঘ্রই আদিবাসী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে এবং নেতারহাটের আদলে দুমকা, চাইবাসা, বোকারোতে নতুন স্কুল খোলা হবে।
স্বাস্থ্য সুবিধায় উন্নয়ন
রাজ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালু করা হয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছে। সরকার এখন প্রতিটি হাসপাতালে হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং প্যাড তৈরির পরিকল্পনা করছে, যাতে রোগীরা দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা পেতে পারে। এই পদক্ষেপ ঝাড়খণ্ডকে দেশের প্রথম এমন রাজ্য করে তুলবে, যেখানে হাসপাতালে হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং প্যাড থাকবে।
রাজ্যকে আত্মনির্ভরশীল করার প্রতিজ্ঞা
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ঝাড়খণ্ড এখন আত্মনির্ভরশীল হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করে এ বছর ৬০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধি এবং পিএম কিসান যোজনার উপর কটাক্ষ
মূল্যবৃদ্ধির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত খাদ্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি পিএম কিসান সম্মান নিধি যোজনার উপর কটাক্ষ করে বলেন, কৃষকদের মাত্র ৬০০০ টাকা বার্ষিক দেওয়া হয়, যা প্রতিদিন ১৫-১৬ টাকা হয়। তিনি বলেন, "এত টাকায় তো বিষও পাওয়া যাবে না।"
নোট বাতিল এবং কর নীতির সমালোচনা
তিনি বলেন, নোট বাতিলের পর দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে এবং করের বোঝা এত বেড়েছে যে সাধারণ জনতা বিপর্যস্ত। তিনি বলেন, দেশকে যুক্তি দিয়ে নয়, 'জাদু' দিয়ে চালানো হচ্ছে।