হরিদ্বার জমি কেলেঙ্কারি মামলায় উত্তরাখণ্ডের ধামী সরকার বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এই কেলেঙ্কারিতে সরকার দুইজন আইএএস, একজন পিএসিএস অফিসার সহ মোট ১২ জন কর্মকর্তাকে স্থগিত করেছে।
জমি কেলেঙ্কারি মামলা: উত্তরাখণ্ডের রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে তীব্র আন্দোলন তখনই দেখা দেয় যখন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী হরিদ্বার জমি কেলেঙ্কারিতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দুইজন আইএএস কর্মকর্তা, একজন পিএসিএস অফিসার এবং আরও নয়জন সরকারি কর্মচারীকে স্থগিত করেন। এই পদক্ষেপ রাজ্যের প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতার দিকে একটি কঠোর বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কেলেঙ্কারির বিষয়টি কী?
বিষয়টি হরিদ্বার পৌর নিগম কর্তৃক ক্রয়কৃত একটি জমির সাথে জড়িত। প্রতিবেদন অনুসারে, পৌর নিগম বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক গুণ বেশি দামে একটি অনুপযুক্ত এবং বাণিজ্যিক দিক থেকে অকেজো জমি কিনেছে। যার আসল মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা বলে অনুমান করা হয়েছিল, তা ৫৪ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে। এতটুকুই নয়, এটাও পাওয়া গেছে যে, জমির তৎক্ষণাৎ কোন প্রয়োজন ছিল না এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় গুরুতর অনিয়ম করা হয়েছিল।
কোন তদন্ত নয়, কোন প্রয়োজন নয়—তাহলে কেন জমি কেনা হলো?
প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে যে, জমির প্রয়োজনীয়তার উপর কোনও আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন করা হয়নি, ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতাও বজায় রাখা হয়নি। সরকারি নিয়ম ও আর্থিক শৃঙ্খলাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এই লেনদেন সম্পন্ন করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, এই পুরো ঘটনাটি কেবল ব্যক্তিগত লাভের জন্য পরিকল্পিত একটি কেলেঙ্কারি ছিল।
পদক্ষেপের ফলে: কারা স্থগিত হয়েছেন?
মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামীর নির্দেশের পর প্রশাসন অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যাদের স্থগিত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলি হল:
- কর্মেন্দ্র সিং – হরিদ্বারের তৎকালীন জেলাশাসক (আইএএস)
- বরুণ চৌধুরী – সাবেক পৌর আয়ুক্ত (আইএএস)
- অজয়বীর সিং – তৎকালীন এসডিএম (পিএসিএস)
- নিকিতা বিষ্ট – জ্যেষ্ঠ অর্থ কর্মকর্তা
- রাজেশ কুমার – কানুনগো
- কমলদাস – তহশিল প্রশাসনিক কর্মকর্তা
- ভিকি – জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিগত সহকারী
প্রথম ধাপেই এই কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পৌর নিগমের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পৌর আয়ুক্ত রবীন্দ্র কুমার দয়াল, নির্বাহী প্রকৌশলী আনন্দ সিং মিশ্রবাণ, কর ও রাজস্ব অধীক্ষক লক্ষ্মীকান্ত ভট্ট এবং অবকাঠামো প্রকৌশলী দীনেশ চন্দ্র কান্ডপালকেও স্থগিতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সম্পত্তি লিপিক বেদওয়ালের সেবা বৃদ্ধি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে পৃথকভাবে অনুশাসনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভিজিলেঞ্চ তদন্তের সুপারিশ
ধামী সরকার মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে ভিজিলেঞ্চ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ভিজিলেঞ্চ এখন এই পুরো কেলেঙ্কারির গভীরে যাবে – কে ফাইল অনুমোদন করেছে, কার স্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং কারা ব্যক্তিগত লাভ করেছে। উত্তরাখণ্ডে হয়তো এটিই প্রথমবার যখন সরকার দৃঢ়ভাবে নিজের তন্ত্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নিয়েছে।
ধামী সরকারের এই উদ্যোগ কেবল দুর্নীতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগের প্রচেষ্টা নয়, বরং এটি জনগণের কাছে সরকারের উদ্দেশ্য এবং সততা প্রতিষ্ঠার একটি বড় পদক্ষেপ।