গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে নিজেদের শক্তির প্রদর্শন করে ভারতীয় বিমানবাহিনী একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত করেছে। দিনের বেলা এক্সপ্রেসওয়েতে বিমানবাহিনী তাদের শক্তি প্রদর্শন করে এবং রাতে যুদ্ধবিমান অবতরণ করে একটি নতুন কীর্তি স্থাপন করেছে।
গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে যুদ্ধবিমান: ভারতীয় বিমানবাহিনী গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যখন তারা প্রথমবারের জন্য কোনও এক্সপ্রেসওয়েতে যুদ্ধবিমানের রাতের অবতরণের প্রদর্শন করেছে। এই ঘটনাটি কেবলমাত্র ভারতীয় বিমানবাহিনীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়নি, বরং এটি ভারতকে সেই দেশগুলির ক্লাবেও যুক্ত করেছে যেখানে এক্সপ্রেসওয়েতে যুদ্ধবিমানের রাতের অবতরণ সম্ভব। পাকিস্তানের সাথে বর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এই মিশনটি সম্পন্ন হয়েছে এবং বিমানবাহিনী তাদের শক্তি ও কৌশলগত ক্ষমতার প্রদর্শন করেছে।
গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে এয়ার শো এবং রাতের অবতরণের আয়োজন
জালালাবাদের পীরু গ্রামের কাছে অবস্থিত 3.5 কিলোমিটার দীর্ঘ বিমানবন্দরের রানওয়েতে এই ঐতিহাসিক ঘটনার আয়োজন করা হয়েছিল। শুক্রবার এই বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিমানবাহিনী বিভিন্ন যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে তাদের শক্তির প্রদর্শন করে। সকালে অনুষ্ঠিত এয়ার শোতে রাফেল, সুখোই-30, মিগ-29, জাগুয়ার এবং সুপার হারকিউলিসের মতো বিমানগুলি চমৎকার পারফর্মেন্স করে। এর পর রাতে রাতের অবতরণ শুরু হয়, যাতে এই সকল যুদ্ধবিমান এক্সপ্রেসওয়েতে সফলভাবে অবতরণ করে এবং উড্ডয়ন করে।
এটি দেশে প্রথমবারের মতো ঘটেছে যে কোনও এক্সপ্রেসওয়েতে রাতের বেলা যুদ্ধবিমান অবতরণ করেছে। এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল এটা দেখানো যে যদি যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং শত্রু দেশ আমাদের বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়, তাহলে আমরা এই এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহার বিকল্প বিমানবন্দর হিসাবে করতে পারি।
এয়ার শোর উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা
শুক্রবার শুরু হওয়া এয়ার শো বেশ উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। সকাল ১১:৩০ টায় শুরু হওয়া এয়ার শো প্রায় এক ঘন্টা দেরিতে শুরু হয়, কারণ আবহাওয়া খারাপ ছিল। কিন্তু এয়ার শো শুরু হওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত ব্যক্তিরা তালির গর্জনের মধ্যে যুদ্ধবিমানের গর্জন শুনে এবং সম্পূর্ণ পরিবেশে উত্তেজনা বয়ে আনে।
বেরেলির ত্রিশূল বিমান ঘাঁটি থেকে উড়ান শুরু করার পর বিমানবাহিনীর বিমান ও হেলিকপ্টার গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দরের রানওয়েতে টাচ অ্যান্ড গো করতে থাকে। এতে এমআই-১৭ ভি-৫ হেলিকপ্টারও ছিল, যার মাধ্যমে জওয়ানরা দড়ির সাহায্যে নামার অনুশীলন করে।
সন্ধ্যার বেলা, যখন রাতের অবতরণের সময় আসে, তখন বিমানবাহিনী রাফেল, সুখোই-30, মিগ-29 এবং অন্যান্য যুদ্ধবিমান নিয়ে রাতের অবতরণ করে তাদের সম্পূর্ণ শক্তির প্রদর্শন করে। এই সময় সর্বোচ্চ স্তরের সামরিক প্রস্তুতি এবং কৌশল প্রদর্শন করা হয়েছিল। রাত ৯ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত বিমানগুলি এক্সপ্রেসওয়েতে অবতরণ এবং উড্ডয়ন করে। এই বিমানগুলির শক্তি এবং গতি স্থানীয় বাসিন্দাদের মুগ্ধ করে।
রাতের অবতরণের গুরুত্ব বোঝা
গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে রাতের অবতরণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যে যদি কোনও সময় যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং আমাদের সাধারণ বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ করা হয়, তাহলে এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দরের রানওয়ে একটি বিকল্প স্থান হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। এটি একটি স্মার্ট সামরিক কৌশল, যা ভবিষ্যতে কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে দ্রুত কার্যকরী করার জন্য প্রস্তুত রাখবে। পাশাপাশি, সামরিক উদ্দেশ্যে এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহার ইঙ্গিত করে যে ভারত এখন তার প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী করছে।
ভারতের সুরক্ষা বাহিনীর জন্য এই রাতের অবতরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, কারণ এটি কেবল বিমানবাহিনীর ক্ষমতা এবং কৌশলগত পরিকল্পনাকে শক্তিশালী করে না, বরং এটি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও একটি নতুন দিক দেয়। এই ধরণের রাতের অবতরণ অন্যান্য দেশের জন্যও একটি উদাহরণ উপস্থাপন করে, যারা ভবিষ্যতে তাদের সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য এই ধরণের কৌশল অবলম্বন করার বিষয়ে ভাবতে পারে।
গ্রামবাসীদের উৎসাহ
গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে এই এয়ার শো চলাকালীন আশেপাশের গ্রামগুলির লোকজনও ব্যাপক সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন। পীরু গ্রামের লোকেরা, যারা এই ঘটনার কাছাকাছি থাকে, তা দেখে এবং তাদের উৎসাহ দেখার মতো ছিল। তারা মোটরসাইকেল, গাড়ি এবং ট্রাক্টর নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং দূর থেকেই বিমানগুলি দেখে। রাতের বেলা রাতের অবতরণ দেখার জন্যও লোকজন জড়ো হয়েছিল। প্রশাসন সেই সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করে রেখেছিল এবং জালালাবাদ নগরের আশেপাশের গ্রামগুলিতে পুলিশ দল মোতায়েন করা হয়েছিল।
এই ঘটনাটি কেবল বিমানবাহিনীর জন্য একটি অর্জন ছিল না, বরং এর সাথে সাথে এটি ভারতের নাগরিকদের জন্যও গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। লোকেরা এখন বুঝতে পারছে যে তাদের সুরক্ষার জন্য বিমানবাহিনী এবং অন্যান্য সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুতির সাথে কাজ করছে।
গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বিশেষ বিমানবন্দর
গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে অবস্থিত বিমানবন্দরটি ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ প্রয়োজনীয়তাগুলি মাথায় রেখে নির্মিত হয়েছে। এই রানওয়েটি বিশেষ করে সামরিক বিমানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে এটি যুদ্ধ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহার করা যায়। এক্সপ্রেসওয়ের এই 3.5 কিলোমিটার দীর্ঘ রানওয়েটিকে সামরিক বিমানের উড্ডয়ন এবং অবতরণের জন্য সক্ষম করার জন্য বিশেষ প্রযুক্তিগত উন্নতি করা হয়েছে।
এই বিমানবন্দরের রানওয়েটি এখন একটি বিকল্প সামরিক বিমানবন্দর হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, এটি সামরিক অভিযানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে, বিশেষ করে যুদ্ধ বা জরুরি অবস্থায়। এটি কেবল ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র দেশের জন্য একটি বৃহৎ নিরাপত্তা অর্জন।