সুপ্রিম কোর্ট বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ধর্ষণের মামলা দায়েরের বর্ধমান প্রবণতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আদালত বলেছে যে, পরিবর্তিত নৈতিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক মানদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রেমের সম্পর্কের বিচ্ছেদ যৌন নির্যাতনের অভিযোগের ভিত্তি হওয়া উচিত নয়।
নয়া দিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ধর্ষণের মামলা দায়েরের বর্ধমান প্রবণতায় গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের বেঞ্চ বুধবার এই বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে। বেঞ্চ বলেছে যে, প্রেমের সম্পর্কের অবনতি এবং দম্পতিদের বিচ্ছেদ, আদর্শভাবে নারীদের জন্য ধর্ষণের মামলা দায়েরের কারণ হওয়া উচিত নয়। আদালত বিশেষ করে পরিবর্তিত সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের মামলায় সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে।
পরিবর্তিত সামাজিক দৃষ্টিকোণে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য
বিচারপতি এম.এম. সুন্দরেশ এবং বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের বেঞ্চ বুধবার একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়ে বলেছে যে, প্রেমের সম্পর্কের অবনতি এবং বিয়ের ব্যর্থতা স্বাভাবিকভাবেই ধর্ষণের মামলা দায়েরের কারণ হতে পারে না। আদালত বলেছে যে, পরিবর্তিত সমাজ ও নৈতিক মূল্যবোধ অনুযায়ী আমাদের এই ধরনের মামলাগুলি দেখতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে, এক ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন দায়ের করে ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাখ্যানের দাবি জানিয়েছিলেন। আবেদনকারীর দাবি ছিল যে, তার প্রাক্তন প্রেমিকা সগায়ে ভেঙে যাওয়ার পর ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। নারীর দাবি ছিল যে, বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল।
নারীর বুদ্ধিমত্তার উপরও প্রশ্ন
আদালত নারীর যুক্তি শুনে বলেছে যে, আবেদনকারীর সাথে সম্পর্কে নারী প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন এবং তাকে তার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা উচিত ছিল। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়টিও উল্লেখ করেছে যে, নারী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাধবী দীওয়ানকে তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য নিয়োগ করেছেন, যা ইঙ্গিত করে যে তাকে ভোলানাথী এবং অভিজ্ঞহীন বলা যাবে না।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে বলেছে যে, এই ধরনের মামলায় প্রায়শই পুরুষকেই দোষী বলে বিবেচনা করা হয়। আদালত বলেছে, "আমরা এটিকে কেবলমাত্র একপক্ষীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারি না। আমাদের কোনও এক লিঙ্গের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা উচিত নয়।" আদালত জোর দিয়ে বলেছে যে, যদি আমাদের পরিবারেও এমন পরিস্থিতি আসে, তাহলে আমাদের এটিকে ব্যাপক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। বিচারপতিরা বলেছেন যে, সমাজকে তার পুরোনো চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং উভয় পক্ষের কথায় নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের কঠোর বার্তা
আদালত এই মামলায় বলেছে যে, পরিবর্তিত সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কে উত্থান-পতন হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, প্রতিবার বিচ্ছেদের পর ধর্ষণের অভিযোগ আনা হবে। এই প্রবণতা কেবলমাত্র ন্যায়বিচার ব্যবস্থার উপর বোঝা চাপায় না, বরং প্রকৃত ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের পথও কঠিন করে তোলে।