দিল্লির রাজনীতিতে আবারও তোলপাড়। বিধানসভার চলমান অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা অবৈধ মদ বিতর্কের সাথে সম্পর্কিত কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (CAG) -এর প্রতিবেদন পেশ করেছেন।
নয়াদিল্লি: দিল্লির রাজনীতিতে আবারও তোলপাড়। বিধানসভার চলমান অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা অবৈধ মদ বিতর্কের সাথে সম্পর্কিত কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (CAG) -এর প্রতিবেদন পেশ করেছেন। এই প্রতিবেদনে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, যার ফলে আম আদমি পার্টি (AAP) সরকারের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
CAG প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, দিল্লি সরকারের ২০২১-২২ সালের মদ নীতিতে ব্যাপক অনিয়ম ছিল। প্রতিবেদনের মতে, এই নীতির ফলে দিল্লি প্রায় ২০০২.৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
CAG প্রতিবেদনের মূল বিষয়াবলী
* লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম: সরকার প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পরীক্ষা না করেই মদ লাইসেন্স প্রদান করেছে। দেওয়ালিয়া, আর্থিক নথিপত্র, বিক্রয় তথ্য এবং অপরাধমূলক পটভূমি পরীক্ষা করা হয়নি।
* পাইকারি বিক্রেতাদের অযথা লাভ: পাইকারি বিক্রেতাদের মার্জিন ৫% থেকে বাড়িয়ে ১২% করা হয়েছে, যার ফলে সংস্থাগুলি ব্যাপক লাভবান হয়েছে।
* প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা উপেক্ষা করা হয়েছে: আর্থিকভাবে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলিকে মদ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যার ফলে বাজারে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে।
* একচেটিয়া ব্যবসার প্রসার: নীতি অনুযায়ী মদ উৎপাদনকারীরা শুধুমাত্র একজন পাইকারি বিক্রেতার সাথে জুড়ে থাকার অনুমতি পেয়েছে। ফলে মাত্র তিনটি কোম্পানি—ইন্ডোস্পিরিট, মহাদেব লিকার এবং ব্রিডকো—৭১% বাজার দখল করেছে।
* অবৈধ মদ ব্যবসার বৃদ্ধি: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সরকার সরবরাহ নিষেধাজ্ঞা, সীমিত ব্র্যান্ডের বিকল্প এবং বোতলের আকারের বাধাগুলির কারণে অবৈধ দেশি মদ ব্যবসা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
* অযথা ছাড়: সরকার ক্যাবিনেটের অনুমোদন এবং উপ-রাজ্যপাল (LG) -এর পরামর্শ ছাড়াই লাইসেন্সধারীদের ছাড় দিয়েছে।
* অবৈধ মদ দোকান: MCD এবং DDA -এর অনুমতি ছাড়াই অনেক এলাকায় মদ দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে চারটি অবৈধ দোকান সিল করা হয়েছে, যার ফলে নীতির ত্রুটি প্রকাশিত হয়েছে।
* মান নিয়ন্ত্রণে অবহেলা: বিদেশি মদের ৫১% ক্ষেত্রে মান পরীক্ষার প্রতিবেদন হয় পুরানো ছিল, হয় হারিয়ে গেছে, নয়তো তাতে কোনো তারিখ ছিল না।
* আবগারী গোয়েন্দা ব্যুরো নিষ্ক্রিয়: চোরাচালানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বারবার চোরাচালানের পরও সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিরোধীদের আক্রমণ এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা
CAG প্রতিবেদন পেশ হওয়ার পর বিধানসভায় বিরোধীরা তীব্র হইচই করে। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করেছে যে, কেজরীবাল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই প্রতিবেদনটি গোপন করার চেষ্টা করেছে। এর ফলে বিধানসভার স্পিকার বিজেন্দ্র গুপ্ত ২২ জন বিধায়ককে সদন থেকে স্থগিত করেছেন, আর ২১ জন বিধায়ককে তিন দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
AAP সরকারের স্পষ্টীকরণ
AAP সরকার এই অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেছে যে, এই প্রতিবেদন রাজনীতি প্রেরিত। সরকার দাবি করেছে যে, নতুন মদ নীতির ফলে দিল্লিতে দুর্নীতি কমেছে এবং রাজস্ব বেড়েছে। তবে, CAG প্রতিবেদনের তথ্য সরকারের দাবিগুলিকে ভেঙে দিয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ? CAG প্রতিবেদনের পর এখন এই বিষয়ে তদন্ত আরও তীব্র হতে পারে। সম্ভাবনা রয়েছে কেন্দ্র সরকার এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে AAP সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।