ভারতের প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার এক চমৎকার উদাহরণ ‘চেনাব সেতু’ জনসাধারণের জন্য উন্মোচিত হতে চলেছে। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু, এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৬ই জুন, ২০২৫ তারিখে এর উদ্বোধন করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
চেনাব সেতু: জম্মু ও কাশ্মীরের বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু চেনাব রেল সেতুর ভব্য উদ্বোধন তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। উধমপুর-শ্রীনগর-বারমুলা রেল লিঙ্ক (USBRL) প্রকল্পের এই সেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ ও গর্বের অংশ, যা অঞ্চলটিকে উন্নত সংযোগ ও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চেনাব সেতু কেবলমাত্র একটি উল্লেখযোগ্য প্রকৌশল সাফল্য নয়, এটি অঞ্চলটির ভৌগোলিক ও কৌশলগত গুরুত্বকেও স্পষ্ট করে তোলে।
সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৬ই জুন এই প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারেন, যা জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের জন্য উন্নয়নের নতুন দিগন্ত এবং উন্নত পরিবহন সুবিধা নিয়ে আসবে।
চেনাব সেতু - একটি অনন্য প্রকৌশল সাফল্য
জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় অবস্থিত এই সেতু ৩৫৯ মিটার উচ্চতায় চেনাব নদীকে জুড়েছে। এটি ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা থেকে প্রায় ৩৫ মিটার বেশি। সেতুর নির্মাণে আর্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা এটিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি অতুলনীয় সৌন্দর্যও প্রদান করেছে। এই ১৩১৫ মিটার দীর্ঘ সেতু ভারতীয় রেল নেটওয়ার্ককে সরাসরি কাশ্মীর উপত্যকার সাথে সংযুক্ত করবে, যা আঞ্চলিক পরিবহনে বিপ্লব আনবে।
তৎকালীন অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের আমলে ২০০৩ সালে চেনাব সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মোট ব্যয় প্রায় ১৪৮৬ কোটি টাকা। প্রায় ২২ বছরের কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার পর, এই প্রকল্প সম্পন্ন হতে চলেছে। এই দীর্ঘ ২২ বছরের যাত্রায় অনেক প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এই সেতু সম্পূর্ণ হয়েছে, ভারতীয় রেল পরিষেবাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত।
প্রযুক্তিগত অসাধারণতা নদীর সৌন্দর্য রক্ষা করে
চেনাব সেতুর একটি মুখ্য বৈশিষ্ট্য হল নদীর প্রবাহে বাধা না দিয়ে নির্মাণ করা। নদীর পথে কোন স্তম্ভ স্থাপন করা হয়নি এবং প্রাকৃতিক নদী বাস্তুতন্ত্র অক্ষত রয়েছে। সেতুর নকশায় উভয় নদী তীরে আধুনিক আর্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
সেতুর নির্মাণে প্রায় ২৯,০০০ মেট্রিক টন ইস্পাত এবং প্রচুর পরিমাণে কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছে। মোট ১৭ টি স্প্যান তৈরি করা হয়েছে এবং গঠনগত অখণ্ডতা নিশ্চিত করার জন্য ছয় লক্ষেরও বেশি বোল্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
সেতুর শক্তি এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব
চেনাব সেতু উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে টিকে থাকার জন্য নকশা করা হয়েছে। এটি বেগুনি বাতাস, ভূমিকম্প এবং এমনকি ৩০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক বিস্ফোরণের প্রভাব সহ্য করার জন্য তৈরি। বিশেষজ্ঞরা সেতুর আয়ু প্রায় ১২৫ বছর বলে অনুমান করছেন, যা ভারতীয় প্রকৌশলের মানকে প্রতিফলিত করে।
চেনাব সেতু উধমপুর-শ্রীনগর-বারমুলা রেল লিঙ্ক (USBRL) প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রকল্পের লক্ষ্য রেলপথের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত করা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অঞ্জি খাদ সেতুর উদ্বোধনও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও, একই দিনে কাটরা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত দুটি ভান্ডে ভারত বিশেষ ট্রেন চালু করা হবে, যা যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক ও সময় সাশ্রয়ী ভ্রমণের ব্যবস্থা করবে।
আঞ্চলিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান
চেনাব সেতুর উদ্বোধন জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রেল সংযোগ কেবলমাত্র বাণিজ্য ও পর্যটনকেই উৎসাহিত করবে না, বরং সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর পারস্পরিক চলাচল ও স্থাপনার উন্নতি সাধন করবে। সেতুর শক্তি ও আধুনিকতা ভৌগোলিক বাধা অতিক্রম করবে, কাশ্মীর উপত্যকার সাথে ভারতের অন্যান্য অংশের সংযোগ বৃদ্ধি করবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিং এই সেতুকে ‘নতুন ভারতের’ শক্তি ও দূরদৃষ্টির প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই প্রকল্প ভারতীয় প্রযুক্তি ও আত্মনির্ভরশীলতাকে তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে, এই ধরণের প্রকল্প না কেবল ভারতকে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে, বরং জাতির মধ্যে নতুন শক্তি ও আত্মবিশ্বাস ও পরিচয় করিয়ে দেয়।
৬ই জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশজুড়ে অনেক মান্যবর্গ ও কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। এই দিনটি ভারতীয় রেলের ইতিহাসে একটি সুবর্ণ অধ্যায় চিহ্নিত করবে। সেতুর উদ্বোধন জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং অঞ্চলের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করবে।